করোনা সংক্রমণের বিস্তার

উদ্বেগপূর্ণ পূর্বাভাস ও সতর্কতার বহুল প্রচারের মধ্যেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঘটে চলেছে। এ পর্যন্ত শনাক্ত 

সংক্রমণের সংখ্যা রাজধানী ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি, তবে ঢাকার বাইরে থেকেও সংক্রমণের খবর আসছে প্রতিদিন। সরকারি সূত্রে সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকা জেলা ছাড়াও ২৩টি জেলায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে।

বিদেশফেরত বিপুলসংখ্যক মানুষ যখন দেশের বিভিন্ন জেলায় নিজ নিজ বাড়িতে চলে যাওয়ার খবর আসছিল, তখনই সংবাদমাধ্যমে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছিল যে তাঁদের কাছ থেকে সংক্রমণ সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ, অধিকাংশ বিদেশফেরত ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকেননি, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়গুলো মেনে চলেননি।

তা ছাড়া, সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়ার পরও জেলা শহরগুলোর লোকজন প্রধানত সচেতনতার অভাবে বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। ফলে, বিশেষজ্ঞরা যেমনটি বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ধাপ পেরিয়ে বাংলাদেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা স্থানীয় সামাজিক পর্যায়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া শুরু হয়েছে। আমাদের সামনে এখন প্রকৃত অর্থেই গুরুতর সংকটময় দিন।

জেলায় জেলায় করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের এই গতি দৃশ্যত অপ্রতিরোধ মনে হলেও আমাদের হতোদ্যম হওয়া কিংবা হাল ছেড়ে দিয়ে সংক্রমণের বিস্তার চেয়ে চেয়ে দেখার কোনো কারণ ঘটেনি। কোনো জেলা কিংবা উপজেলায় একটি বা দুটি বাড়িতে একজন বা দুজন ব্যক্তির সংক্রমণ শনাক্ত হলেই ওই পুরো জনপদে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে না। সংক্রমিত ব্যক্তিকে তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে চিকিৎসা দেওয়া এবং তিনি যে বাড়িতে বাস করছেন, সেই বাড়িটাকে আশপাশের বাড়িগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করা হলে ওই বাড়ি থেকে সংক্রমণ অন্যত্র ছড়ানোর সম্ভাবনা রোধ করা সম্ভব।

এই কাজটা করতে হবে ওই বাড়ির লোকজনকেই, কারণ তারাই বিষয়টি প্রথমে জানবে। এ রকম ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো সামাজিক সহমর্মিতা। করোনায় আক্রান্ত বাড়ির সঙ্গে প্রতিবেশীদের দূরত্ব বজায় রাখতে হবে; কিন্তু তার মানে এই নয় যে ওই বাড়ির মানুষগুলোকে অপাঙ্‌ক্তেয় বা সমাজচ্যুত করতে হবে। সংক্রমণ এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদের দিকে সম্ভবপর সব ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে; অন্ততপক্ষে সহমর্মিতা প্রকাশ করতে হবে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকারি প্রশাসনের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। সংক্রমিত বাড়ি শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে গঠনমূলকভাবে, সহানুভূতির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এবং সেই বিচ্ছিন্নতার ফলে ওই বাড়ির অন্য সদস্যদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেগুলো সমাধানের জন্য যথাসম্ভব সহযোগিতা করতে হবে। একই রকমের সহযোগিতা নিয়ে পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে পারেন স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া রোধ করা এখনো সম্ভব, যদি প্রতিটি জনপদের প্রত্যেক বাসিন্দাকে এ বিষয়ে যথেষ্ট মাত্রায় সচেতন করা যায়। ব্যক্তি, পরিবার, পাড়া–মহল্লা, শহর কিংবা গ্রাম—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। স্থানীয় সরকারি প্রশাসনের আন্তরিক তৎপরতার দ্বারা সেই প্রচেষ্টা সম্ভব। মানুষে মানুষে সংস্পর্শ এড়ানোই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর প্রথম উপায়—ব্যক্তি পর্যায়ে এই সচেতনতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।