বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, তিনি আগুনের মধ্যে বাস করছেন। এর মাধ্যমে তিনি সম্ভবত পেঁয়াজের দামের ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু বাজারে শুধু পেঁয়াজের দামই বাড়েনি, অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তাই খ্রিষ্টীয় নতুন বছরটি সাধারণ মানুষের কাছে সুসংবাদ নিয়ে আসেনি। অশনিসংকেত নিয়ে এসেছে।
বাংলাদেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা আর কমতে চায় না। গত বছর অক্টোবরে ভারত আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে অস্থিরতা দেখা যায়। স্বাভাবিক অবস্থায় যে পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হতো, সেই পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর সরকার তড়িঘড়ি করে পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলে দাম কমে যায়।
কিন্তু গত সপ্তাহে ফের পেঁয়াজের বাজারে ঊর্ধ্বগতি সাধারণ ভোক্তাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ইতিমধ্যে দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। তারপরও পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে বড় ধরনের কারসাজি আছে বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। শুধু পেঁয়াজ নয়, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক সপ্তাহে আলু, চিনি, ভোজ্যতেল, ডিম, এলাচি ও ময়দার দাম কমবেশি বেড়েছে। ১৮টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় বেশি। কম সাতটির দাম।
২০১৯ সালের শেষ দিকে কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এক লাফে লিটারে ৮ টাকা বাড়ায়। প্যাকেটজাত চিনির দাম বাড়ানো হয় কেজিতে ৭ টাকা। এর আগে নভেম্বরেও তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়। বাজেটের পর খোলা চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে ১২ টাকার মতো। দাম বেশির তালিকায় আরও আছে খোলা আটা, ময়দা, খোলা সয়াবিন তেল ও পাম তেল, মসুর ডাল, আলু, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, জিরা ও গুঁড়া দুধ।
আমদানি পণ্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা ডলারের বিপরীতে টাকার মান অবনমনের কথা বলেছেন। কিন্তু গত দুই মাসে ডলারের দাম যে হারে বেড়েছে, তাঁরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি। ব্যবসায়ীরা অনেক সময় কারণ ছাড়াও পণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকেন। আগে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা আমদানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এখন গুটি কয়েক বড় ব্যবসায়ী গ্রুপই এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এর ফলে আমদানির ক্ষেত্রে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে থাকে।
বাজারের এই দুঃসংবাদের মধ্যে সুসংবাদ হলো গত ছয় বছরে সবজির উৎপাদন বেড়েছে এক-তৃতীয়াংশের বেশি। ঢাকা ট্রিবিউন–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে সবজি উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ টন; যা আগের বছরের চেয়ে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন বেশি। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো বিপণনব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে কৃষক ন্যায্য দাম পান না। বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কৃষক বগুড়ায় যে বেগুন ২০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন, সেই বেগুন ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ব্যবধান ৪০ টাকা। এতে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হন। লাভের গুড় প্রায় পুরোটাই নিয়ে যায় মধ্যস্বত্বভোগীরা।
সবজিসহ সব খাদ্যপণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে উন্নত বিপণনব্যবস্থা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে কৃষকের বাজার বা বিপণনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ রকম আরও বিপণনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, যাতে কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিক্রি করতে পারবেন। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন।