সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ

গত শনিবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কোনো সাংবাদিক আইন লঙ্ঘন করেছেন, কারও ব্যক্তিগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন, এমন কোনো নজির নেই। তারপরও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নির্বাচনের দিন ছয়জন এবং সোমবার আরও দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এটি কেবল দুঃখজনক নয়, নিন্দনীয়ও।

নির্বাচনের দিন তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকেরা মারধর ও নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যখনই কোনো সাংবাদিক দলীয় ক্যাডারদের জবরদস্তি ও সাংবাদিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ছবি তুলেছেন, তখনই তার ওপর চড়াও হয়েছে তারা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ হোসেনের সমর্থকেরা শনিবার তাঁকে পিটিয়েছিল। কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়ে রোববার তাঁকে হাসপাতালে দেখতে এসেছিলেন ওই কাউন্সিলর। সে সময় তিনি মামলা না করার ‘পরোক্ষ হুমকি’ দিয়ে গেছেন।

সাংবাদিকদের ওপর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অব্যাহত এসব হামলার ঘটনায় বিবৃতি ও নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো। নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতার তথ্য সংগ্রহ করতে গতকাল সোমবার বাড্ডার বেরাইদ এলাকায় গিয়েছিলেন সাংবাদিক হাসনায়েন তানভীর এবং ক্যামেরাপারসন সাইফুল ইসলাম। এ সময় স্থানীয় সাংসদ এ কে এম রহমতুল্লাহর ভাগনে ও নবনির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আয়ুব আনছারের সমর্থকেরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। তাঁরা মাছরাঙা টিভির গাড়ি ভাঙচুর করে এবং ক্যামেরা থেকে মেমোরি কার্ড ছিনিয়ে নেন।

গত শনিবার রাজধানীর গেন্ডারিয়ার ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাঁর বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে ধাওয়া–পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তথ্য সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিন–এর রিপোর্টার মাহবুব মমতাজী এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর নুরুল আমিন জাহাঙ্গীর। ছাত্রলীগের গেন্ডারিয়া থানার সাবেক সভাপতি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সহসভাপতি শহিদুল আলম তাঁদের নাজেহাল করেন। আবার পরদিন তিনি ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এবং তাঁদের জামায়াতের এজেন্ট বলে অভিহিত করেন। তাঁর দাবি, সাংবাদিকেরা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। নির্বাচনের দিন কোন প্রতীকে বাটন চাপতে হবে, তাঁরা সেই নির্দেশনা দিয়েছেন ভোটারদের, আর এখন সাংবাদিকদের নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁরা কী লিখবেন, কী লিখবেন না। এটি সাংবাদিকতার ওপর নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ। ছাত্রলীগ নেতৃত্ব তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করেছেন। তাঁর অপরাধটি যেহেতু ফৌজদারি, তাই শুধু সাময়িক বহিষ্কারের পদক্ষেপ কোনোভাবেই যথেষ্ট হতে পারে না।

অতীতেও দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দল বা সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। সাংবাদিকদের ওপর যাঁরা হামলা করেছেন, যাঁরা হুমকি–ধমকি দিয়েছেন, তাঁদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক।