টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বন বিভাগের জায়গায় অবাধে ঘরবাড়ি নির্মাণের খবরটি অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। দীর্ঘদিন ধরে এই বেআইনি কাজটি করা হচ্ছে, অথচ তা প্রতিরোধে কারও কোনো উদ্যোগ নেই।
রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আজগানা ইউনিয়নের আজগানা, হাঁটুভাঙা, কুড়িপাড়া, বেলতৈল ও চিতেশ্বরী গ্রামে বন বিভাগের জমিতে অনেক দিন ধরে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে গত কয়েক বছরে বনের জায়গায় ঘর তোলার সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত আট বছরে নতুন করে দুই শতাধিক বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় চার হাজার বাড়ি রয়েছে বনের জায়গায়। এভাবে বাড়ি নির্মাণ করার কারণে এই ইউনিয়নে বন বিভাগের প্রায় ২ হাজার ২৯৭ একর জমির মধ্যে ৬১৭ একর জমি বেদখলে চলে গেছে। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন বনের জমিতে বাড়ি তুলে বসবাস করছে। আর এভাবে ঘর তোলার ক্ষেত্রে তাদের টাকার বিনিময়ে সহযোগিতা করছেন বন বিভাগেরই কর্মচারী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা! এর চেয়ে হতাশাজনক খবর আর কী হতে পারে? খোদ বন বিভাগের লোকজনই যদি এই অবৈধ কাজে সহযোগিতা করেন, তা হলে দখলদারদের কে ঠেকাবে? এ তো শর্ষেতেই ভূত।
অবশ্য এমন ঘটনা যে এই প্রথমবার ঘটেছে, এমনটি নয়। অতীতেও অনেক ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বন বিভাগের জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ ছাড়াও শিল্পপ্রতিষ্ঠান, মৎস্য খামার, হ্যাচারি ও পোলট্রি ফার্ম গড়ে তোলা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক। বনের জমি দখল করতে কোটি কোটি টাকার গাছ আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। আর এসব কাজ করা হয়েছে বন বিভাগের লোকজনের মদদেই।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়েছে। একশ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তির ভোগলিপ্সা ও বন রক্ষায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চরম দুর্নীতি, অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনাই বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার প্রধান কারণ।
কিন্তু এই দখল দৌরাত্ম্য তো চলতে দেওয়া যায় না। বনভূমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দখলকারী এবং তাদের মদদদানকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সর্বোপরি বন সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের উপলব্ধিতে আসতে হবে। বাড়াতে হবে জনসচেতনতাও। জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে বন দখলদারদের প্রতিরোধ করা সহজ হবে।
আমরা চাই, মির্জাপুর উপজেলার আজগানা ইউনিয়নে বন বিভাগের বেদখল হয়ে যাওয়া জমিগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করবে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য স্থানে দখল হয়ে যাওয়া বনভূমিও উদ্ধার করবে। শুধু তা-ই নয়, নতুন করে যাতে কেউ বন বিভাগের জায়গা দখল করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নেবে।