‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’ এবং ‘দুর্ঘটনা বলে কয়ে আসে না’—এ দুটি প্রবাদের সত্যতা সব সময় খাটে না। অন্তত আমাদের দেশে তো নয়ই। দেখা যায়, একই কায়দায় চুরি করে বারবার ‘চোর পালিয়ে যাচ্ছে’, কিন্তু জনসাধারণের ‘বুদ্ধি’ বাড়ছে না। আবার অনেক সময় দেখা যায়, দুর্ঘটনা ঘটার সব ধরনের আলামত স্পষ্ট হওয়ার পরও, অর্থাৎ দুর্ঘটনা তার আগমনবার্তা দেওয়ার পরও লোকজন সচেতন হচ্ছে না। ফলে শেষ পর্যন্ত ‘বলেকয়ে’ দুর্ঘটনা ঘটছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে জয়পুরহাট ও সিরাজগঞ্জে সেপটিক ট্যাংকে নেমে আট ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যুর সর্বশেষ ঘটনায় এটিই স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হচ্ছে।
দেশে সেপটিক ট্যাংকে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। কিছুদিন পরপরই এ ধরনের খবর গণমাধ্যমে আসে। ঘটনাগুলোর ধরনও সাধারণত অভিন্ন থাকে। এ ধরনের ঘটনায় সাধারণত দেখা যায়, কেউ একজন ময়লা পরিষ্কার করার জন্য ট্যাংকে নামেন। বিষাক্ত গ্যাস নাকে ঢোকার পর তিনি অন্ধকার ট্যাংকের মধ্যেই অচেতন হয়ে যান। সাড়াশব্দ না পেয়ে ট্যাংকের ওপরে থাকা লোকেরাও ঢোকেন এবং যথারীতি তাঁরাও মারা পড়েন। বছরে এভাবে আট–দশটি দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু তাতেও সাধারণ মানুষের হুঁশ হয় না। একই কায়দায় দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মরতে থাকেন। ‘চোর পালিয়ে যায়’ কিন্তু তাঁদের ‘বুদ্ধি’ বাড়ে না।
সেপটিক ট্যাংক যে ভয়ংকরভাবে বিপজ্জনক, এর মধ্যে ময়লা–আবর্জনা পচে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়ে যে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয় এবং সেই গ্যাস মানুষের নিশ্বাসের সঙ্গে দেহে ঢুকলে যে সে মারা যেতে পারে, তা যেকোনো বোধসম্পন্ন মানুষের জানার কথা। অর্থাৎ ট্যাংক থেকে গ্যাস বের না করে কোনো রকম সুরক্ষা ব্যবস্থা না নিয়ে এর মধ্যে নামলেই যে মহাবিপদ আসতে পারে, তা একরকম বলা কওয়া বিষয়। এরপরও অজ্ঞতা ও উদাসীনতার কারণে বলেকয়ে আসা এ দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যায়।
গত বুধবার জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার জাফরপুর হিন্দুপাড়া গ্রামে এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাংকে নেমে ছয়জন মারা গেছেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন একজন। এর আগের দিন মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে গিয়ে দুই শ্রমিক মারা যান। অসুস্থ হয়ে পড়েন আরও দুই শ্রমিক।
কিছুদিন পরপর মানুষের এই প্রাণহানি ‘দুর্ঘটনা’ নয়। এটি অসচেতনতাজনিত মনুষ্যকৃত বিপর্যয়। এই বিপর্যয় এড়াতে সচেতনতামূলক প্রচার দরকার। বিশেষ কোনো পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সেপটিক ট্যাংকের ঝুঁকি সম্পর্কে জানানো গেলে সেই সচেতনতা বাড়তে পারে। সুরক্ষাব্যবস্থা না নিয়ে কোনোভাবেই সেপটিক ট্যাংকে নামা যাবে না—প্রয়োজনে এই মর্মে সরকারিভাবে ঘোষণাও দেওয়া যেতে পারে।