বন্যা ও বর্ষা বাংলাদেশের বাস্তবতা। বন্যার মতো দুর্যোগের আগে মোকাবিলার যথাযথ প্রস্তুতি থাকলে বন্যার সময় জনগণের দুর্ভোগ কমানো যায়। আবার বন্যা–পরবর্তী পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার কাজটি যথাযথভাবে করতে পারলে দুর্গতদের স্বস্তি নিশ্চিত করা যায়। এবার বন্যাকালীন পরিস্থিতি ভালোভাবে সামাল দেওয়া গেছে এমনটি বলা যাবে না। কারণ, বন্যাদুর্গতদের প্রয়োজন অনুযায়ী ত্রাণ ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। বন্যা–পরবর্তী পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে, সেটা এখন দেখার বিষয়।
এবারের বন্যার একটি বড় প্রভাব পড়েছে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায়। এমনিতেই দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর একটি বড় অংশের
অবস্থা খুবই খারাপ। এই বন্যা কার্যত মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিয়ন্ত্রণকক্ষের মতে, সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৯৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ অনেক বেশি। অনেক এলাকা এখনো বন্যাপ্লাবিত থাকায় ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা এখনই সম্ভব নয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মতে, ১৪ জেলায় এ পর্যন্ত ১৭২ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার সড়ক ধ্বংস এবং ৩ হাজার ৩০৩ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলার সংখ্যা ২৭। সব জেলার পুরো চিত্র পেলে ক্ষতির পরিমাণ যে অনেক বেশি হবে, তাতে সন্দেহ নেই। আবার ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের মধ্যে জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়ক যেমন আছে, তেমনি আছে স্থানীয় পর্যায়ের সড়কও।
সামনে ঈদুল আজহা, এর আগে সড়কগুলো মেরামত ও চলাচলের উপযোগী করতে না পারলে ঘরমুখী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে থাকা ৬৫টি বিভাগের মধ্যে ১১টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও নেত্রকোনার সড়কগুলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত সোমবার বলেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কাজ চলছে। সড়কের অবস্থা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো বলেও দাবি করেন তিনি।
মন্ত্রীর এই আশ্বাসবাণী প্রকৃতই ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করবে কি না, তা মূলত নির্ভর করছে ঈদের আগে সড়কগুলো মেরামত করার ওপর। এর সঙ্গে রয়েছে সড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার বিষয়টি। এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা মন্ত্রী বলেছেন। যার মধ্যে রয়েছে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ছাড়া ঈদের সময়ে ভারী যানবাহন তথা পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখা এবং সিএনজি স্টেশনগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা। তবে সিদ্ধান্তগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারলেই ফল পাওয়া যাবে। অনেক সময় সড়ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও ফেরিসংকটের কারণে মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে বিষয়টিকে দেখতে হবে।
ঈদের আগে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতের প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিতে হবে। তবে কাজটি যেনতেনভাবে বা সামান্য ইট–সুরকি বিছিয়ে করলে লাভ হবে না। ঈদের সময়টায় বৃষ্টি হতে পারে—এ আশঙ্কা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জরুরি ভিত্তিতে ছাড় করতে হবে।
দেশে মোট ২১ হাজার ৫৭৮ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এ সড়কের মধ্যে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলার সড়কগুলো তত্ত্বাবধান করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। উপজেলা পর্যায়সহ বাকি সড়কগুলো তত্ত্বাবধান করে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যেহেতু সড়কগুলো পরস্পরযুক্ত, তাই এখানে সব পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি জরুরি।
সবকিছু ঠিক আছে, কোনো সমস্যা নেই—এই মনোভাব পরিহার করে অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করা হোক।