ইয়েমেন যুদ্ধ এবং আমার বন্ধু আদেল...
ইয়েমেনের যুদ্ধের নিউজগুলো অনুবাদ করতে গেলেই আদেলের মুখ ভেসে ওঠে। প্রতিবারই ভাবি আদেলের খোঁজ নেব, কিন্তু নেওয়া হয় না। ফেসবুকের পোস্ট থেকে বুঝতে পারি, সে নিরাপদ আছে। হয়তো সে কারণে খোঁজ নেওয়ার তাগিদ নিজের অজান্তে চাপা পড়ে যায়। এই প্রথম ফেসবুক মেসেঞ্জারে আদেলের সঙ্গে কথা হওয়ার পর তাঁর পোস্টগুলোয় ভালোভাবে নজর বোলালাম। এক পোস্টে সে লিখেছে, ‘কত কষ্ট হয় যখন তোমার প্রিয় ভালোবাসার মানুষগুলো কষ্টে থাকে আর তুমি কিছু করতে পারো না।’
আদেল আল-হাদ্দাদের সঙ্গে পরিচয় ২০০৫ সালের আগস্টে। ভারতের সরকারের বৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আমরা চার নারী সাংবাদিক তখন দিল্লির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব মাস কমিউনিকেশনে (আইআইএমসি) উন্নয়ন সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা কোর্স করছি। এর মধ্যে আমি, রোজিনা ইসলাম, আঙ্গুর নাহার মন্টি সাংবাদিকতায় আছি। আর আলফা আরজু অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী, ফ্রিল্যান্স হিসেবে দেশের বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে লেখে। ১৪টি দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে ইয়েমেনের আদেলও সেই কোর্সে ছিল। দেশটির বাসিন্দাদের গৌর–কৃষ্ণবর্ণের মিশ্র চেহারা থাকলেও আদেলের মুখের আদল আরবদের মতো। ভিন্ন উচ্চারণের ইংরেজির কারণে মাঝেমধ্যেই আদেলের কথার অর্থ বুঝতে অসুবিধা হতো। অর্থ উদ্ধারের পর আমরা একে অন্যকে বলতাম, ‘এই ইংরেজির পাঠোদ্ধার কে কবে কোথায় করতে পারবে?’ একবার অর্থনীতি বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিল বলে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম আদেল ‘গিডিপি’ বলতে ‘জিডিপি’ এবং ‘বাডগেট’ বলতে ‘বাজেট’ বোঝাচ্ছে। কোর্সের শুরুতে সবাইকে নিজ নিজ দেশের জাতীয় পোশাক পরে আসতে বলা হয়েছিল। আদেলের পোশাক দেখে আমাদের কৌতূহল চরমে। মনে হচ্ছে, শুটিংয়ের অপেক্ষায় রাজা–বাদশাহর আমলের কোনো চরিত্র। মাথায় পাগড়ি, কোমরে বাঁধা হোল্ডারে বড় ছুরি গোঁজা, হাতে লাঠি। আমাদের কৌতূহলী দৃষ্টির সামনে বলল, ‘এটাই আমাদের জাতীয় পোশাক’।
শান্ত স্বভাবের সেই আদেল লিখেছে ভালোবাসার মানুষগুলোর কষ্টে কিছু করতে না পারার অসহায়ত্বের কথা। আদেল জানাল, ২০১২ সাল থেকে সে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে সৌদি আরবের রিয়াদে বসবাস করছে। সেভাবে আর সাংবাদিকতায় নেই। শেষ ইয়েমেনে গেছে ২০১৪ সালে। যুদ্ধের ডামাডোলে এরপর থেকে আর ইয়েমেন যাওয়া হয় না। গত বছর চেষ্টা করেও যেতে পারেনি। এবার আগস্টে যাবেই জানাল।
‘আদেল, যুদ্ধের মধ্যে যাওয়া কি ঠিক হবে?’ জবাবে বলল, ‘আমার বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন—সবাই সেখানে। বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতেই হবে। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। পরিস্থিতি অনেক কঠিন। সিরিয়ার চেয়েও খারাপ। আশা করি, এই যুদ্ধের শেষ হবে। নারী-শিশুরা ভয়াবহ দুর্ভোগে। পুরুষেরা চাকরি হারিয়ে বেকার। কোনো অর্থ নেই, খাবার নেই, ওষুধ নেই।’
‘কীভাবে যাবে? জানতেই বলল, ‘সেখানে যাওয়া খুব বিপজ্জনক। আকাশ আর জলপথে যাওয়াই যায় না। একমাত্র সীমান্ত দিয়ে পাড়ি দেওয়া যায়। সেটাও সহজ পথ নয়।’
আদেল আরও জানাল, তাঁর শহর ইব এখনো নিরাপদ। সেখানে যুদ্ধ হচ্ছে না। ইয়েমেনের মধ্যভাগে ইবের অবস্থান। উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধ হচ্ছে। সেটি সরকারবিদ্রোহী ইরান–সমর্থিত হুতিদের নিয়ন্ত্রণে। দক্ষিণাঞ্চলে এখন যুদ্ধ নেই। সেখানের নিয়ন্ত্রণ সরকার বাহিনীর হাতে। তবে প্রেসিডেন্ট বা মন্ত্রীরা কেউ থাকেন না। তাঁরা সবাই সৌদি আরবে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিরাপদে বসবাস করছেন। প্রেসিডেন্ট আছেন সৌদি আরবে। সৌদি মানেই অর্থ, সৌদি মানেই নিরাপদ।’
প্রশ্ন করলাম, ‘ব্যক্তিগতভাবে তুমি এ যুদ্ধের জন্য কাদের দায়ী করো?’ আদেলের জবাব, ‘দুই পক্ষই। মাঝখানে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সরকারপ্রধান পালিয়ে দেশের বাইরে। আর হুতিরা ইয়েমেনের সব অর্থ সম্পদ দখল করেছে। তারাই এখন দেশ চালাচ্ছে। হুতিরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করে, সেই চিত্র গণমাধ্যমে আসে না। জাতিসংঘ থেকে যেসব সাহায্য আসে, তা ভুক্তভোগীদের চেয়ে হুতিদের হাতেই বেশি চলে যায়।’
‘হুতিদের নিশ্চয় সমর্থন আছে ব্যাপক!’ আদেল বলল, ‘৯০ শতাংশ সুন্নির দেশ ইয়েমেন। আর হুতিরা শিয়া। তারা ছোট একটি গ্রুপ। কিন্তু সামরিক বাহিনী, ব্যাংকসহ অন্যান্য উৎস দখল করে তারা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তাই সাধারণ ইয়েমেনিদের হুতিদের প্রতি সমর্থন রয়েছে, এটা বলা যায় না। লোকজন দেশ ছেড়েও পালাতে পারছে না। যাদের অর্থ আছে, তারা ইউরোপ বা এশিয়ার কোনো দেশে বা কোনো আরব দেশে চলে যাচ্ছে। তবে সেই সংখ্যা কম। সৌদি হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু তারা সীমান্ত দিয়ে কোনো ইয়েমেনি শরণার্থী প্রবেশ করতে দেয় না। ইরানও এ যুদ্ধের জন্য দায়ী। এক পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র, অন্য পক্ষে রাশিয়া।’
আদেলের কথার সঙ্গে মিল খুঁজে পেলাম আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরেও। হুতি, হাদি সরকারের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা অস্ত্র হাতে মিত্রদেশগুলো নিয়ে সৌদির হামলা, ইরানের অস্ত্র সহায়তায় হুতির যুদ্ধ, আর সব ছাপিয়ে দিনের পর দিন খাবার না পেয়ে হাড্ডিসারে পরিণত হওয়া শিশুদের কথা। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশটি এই যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
কেন এই যুদ্ধ?
রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তন ও রূপান্তরের লক্ষ্যে গণবিক্ষোভের সেই ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা লেগেছিল ইয়েমেনেও। পশ্চিমা সাংবাদিকদের ভাষায় যা আরব বসন্ত। সেই আরব বসন্তের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন ইয়েমেনের ৩৩ বছরের স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট আলি আবদুল্লাহ সালেহ। ২০১১ সালে তিনি তাঁর ডেপুটি আবদ্রাববুহ মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। দেশটির সবচেয়ে বড় শহর সানায় হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধে ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর স্বৈরশাসক আলি আবদুল্লাহ সালেহ মারা যান।
তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মানসুর হাদিকে চারপাশ থেকে নানা সংকট চেপে ধরে। জিহাদিদের হামলা, দক্ষিণে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আন্দোলন, সেনাবাহিনীতে সালেহর অনুগত বাহিনী, দুর্নীতি, বেকারত্ব, খাদ্যসংকট। সালেহর শাসনামলে ইয়েমেনের সংখ্যালঘু জাইদি শিয়া সম্প্রদায়ের হুতি বাহিনী কয়েক দশক ধরে একাধিকবার সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, লড়াই করেছিল। নতুন প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে হুতি বাহিনী এবং উত্তরের সাদা প্রদেশসহ আশপাশের এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। সরকারের ব্যর্থতায় বিরক্ত সাধারণ সুন্নিরা ২০১৪ সালের শেষে এবং ২০১৫ সালের শুরুতে হুতিদের প্রতি সমর্থন দেখায়। বিদ্রোহীরা ওই সময় সানাও দখলে নেয়।
সেনাবাহিনীর সালেহ অনুগত সেনারা হুতিদের সঙ্গে একজোট বেঁধে ক্ষমতা দখলে পুরো দেশ দখলে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। চাপের মুখে মানসুর হাদি ২০১৫ সালের মার্চে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
হুতি বাহিনীর এই শক্তিশালী হওয়ার পেছনে ওই অঞ্চলের শিয়া শক্তি ইরান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বলা হয়। ফলে পাল্টা হামলার জন্য জোটবদ্ধ হয় আরব বিশ্বের সুন্নি দেশগুলো। সৌদি আরবের নেতৃত্বে আটটি আরব দেশ (বেশির ভাগই সুন্নি) হাদি সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে শক্তি প্রয়োগ শুরু করে। শুরুতে সৌদি আরব পূর্বাভাস দিয়েছিল, এ যুদ্ধ মাত্র কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হবে। তবে আজ চার বছর হয়ে গেল, এ যুদ্ধ শেষের কোনো লক্ষণ নেই।
সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সালের আগস্টে দক্ষিণাঞ্চলের বন্দর শহর আদেনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। দক্ষিণাঞ্চলের বেশির ভাগ জায়গা থেকে হুতি ও তাদের মিত্রদের কয়েক মাসের মধ্যে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। হাদি সরকার আদেনে সাময়িক আবাস গড়ে তোলে। তবে ন্যূনতম চাহিদা মেটানো ও নিরাপত্তা দিতেও এ সরকার ব্যর্থ হয়। সৌদি জোট সানা থেকে হুতিদের উৎখাত করতে পারেনি। বরং হুতিরা তায়াজ শহরও দখলে নেয় এবং সৌদির সঙ্গে সীমান্ত এলাকাজুড়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের কঠিন বলয় তৈরি করে। ২০১৭ সালের নভেম্বর রিয়াদকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লে সৌদি জোট ইয়েমেনের ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করে।
২০১৮ সালের এপ্রিলে পশ্চিমের হোদেইদা প্রদেশে সৌদি হামলায় নিহত হন হুতিদের শীর্ষ রাজনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান সালেহ আল-সামাদ। বলা হয়, এখন হুতির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৪০ বছর বয়সী আবদুল মালিক আল-হুতি।
সৌদি জোটের ভাষ্য, ইরান হুতি বাহিনীর হাতে পারমাণবিক অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। সেটা তারা বন্ধ করতে চায়। যদিও ইরান এই অভিযোগ অস্বীকার করে। তবে সৌদি জোটের অবরোধ আরোপের কারণে সাধারণ মানুষ ভয়াবহ খাদ্যসংকটে ভোগা শুরু করে। জ্বালানি সংকট তীব্র হয়।
আর এই পরিস্থিতির পুরো ফায়দা নেওয়া শুরু করে আরব উপদ্বীপের আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
২০১৮ সালের জুন মাসে জোট বাহিনী এই অবরোধ তুলে নেওয়ার চেষ্টা হিসেবে লোহিত সাগরের শহর হোদেইদায়ে হামলা চালায়। এই বন্দর শহরটিকে ইয়েমেনের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের জীবনধারা বলা হয়ে থাকে। জাতিসংঘ এই বন্দরের ব্যাপারে সতর্ক করে জানায়, বন্দরটি অবরুদ্ধ হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভয়াবহ মানব বিপর্যয় ঘটবে। গত বছরের ডিসেম্বরে হাদি সরকার ও হুতি প্রতিনিধিরা হোদেইদা শহর ও বন্দরে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় এবং এ বছরের মধ্য জানুয়ারির মধ্যে যার যার বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহারে সম্মত হয়। তবে এখন পর্যন্ত দুই পক্ষের কেউ সেনা প্রত্যাহার শুরু না করায় ওই চুক্তি ভেস্তে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
কী খেসারত দিল ইয়েমেনিরা?
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। ইয়েমেনের সাধারণ মানুষ আজ সেই উলুখাগড়া। মোহাম্মদ, সামিয়ার মতো মানুষেরা সেই উলুখাগড়া। তাঁদের গল্পগুলো পড়েছিলাম বিভিন্ন গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংস্থার টুইটার পোস্টে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তিন বছর ধরে মোহাম্মদের মতো অনেক ইয়েমেনি বাড়ি ছেড়ে এখান থেকে সেখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শরণার্থী শিবিরে জন্ম নিয়েছে তাঁর সন্তানও। মোহাম্মদ বলেছিলেন, একটি প্রকৃত বাড়ি থাকলে কেমন লাগে, তা তিনি ভুলে গেছেন। মোহাম্মদের মতো ৩৩ লাখ ইয়েমেনি এখন গৃহহারা। সামিয়া নামের এক নারী বলেছিলেন, যুদ্ধ তাঁর ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। বেঁচে থাকার তাগিদে সন্তানদের এখন তাঁর সঙ্গে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রি করতে হয়। যুদ্ধ সামিয়ার সন্তানদের মতো স্কুল থেকে ঝরিয়ে দিয়েছে ২০ লাখ ইয়েমেনি শিশুকে।
এককথায় বলা যায়, ইয়েমেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ মনুষ্যসৃষ্ট মানব বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে।
জাতিসংঘ বলেছে, এ যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে বিশ্ব ১০০ বছরে সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করবে। এ যুদ্ধে ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে এ পর্যন্ত ৭ হাজার ২৫ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছে ১১ হাজার ১৪০ জন। এর মধ্যে সৌদি জোটের হামলায় ৬৫ শতাংশের প্রাণ গেছে। তবে আন্তর্জাতিক অনেক সংগঠনের মতে, মৃতের সংখ্যা এর থেকে অনেক বেশি। ইয়েমেন যুদ্ধের প্রতিটি নিউজ থেকে নেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে মার্কিনভিত্তিক আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট জানিয়েছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৬৭ হাজার ৬৫০ জন সামরিক-বেসামরিক মানুষ মারা গেছে।
জাতিসংঘ বলছে, ইয়েমেনের ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মানবিক সহায়তা ও সুরক্ষা প্রয়োজন। ২৪ লাখ মানুষ সর্বোচ্চ খাদ্যসংকটে।
সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবরের মধ্যে ভয়ানক অপুষ্টির শিকার হয়ে ৮৫ হাজার শিশু মারা গেছে।
ইয়েমেনে কর্মরত ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রসের (আইসিআরসি) তথ্য অনুসারে, সেখানের ৩২ লাখ শিশু ও নারী তীব্র অপুষ্টির শিকার। গত তিন বছরে শিশুদের অনুপাতে অপুষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছে ৯০ শতাংশ। যুদ্ধে গত বছরের জুন থেকে এ পর্যন্ত পশ্চিম উপকূল থেকে পালিয়ে এসেছে ৬ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ।
ইয়েমেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনায় একটি প্রশ্ন অবধারিত, সংঘাতের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল দেশটি?
কৌশলগত দিক দিয়ে ইয়েমেনের গুরুত্ব রয়েছে অনেক। এটি এমন একটি প্রণালিতে, যা লোহিত সাগর আর আদেন উপসাগরীয় এলাকাকে সংযুক্ত করেছে। এ পথ দিয়ে বিশ্বের বেশির ভাগ তেলবাহী জাহাজ যাতায়াত করে। ইয়েমেনকে তাই সৌদি–আমেরিকান বলয়ে রাখা নিয়েই পশ্চিমাদের জন্য মাথাব্যথা। দেশটি যত অস্থিতিশীল থাকবে, তত ওই অঞ্চল ঘিরে ফণা তুলবে আল-কায়েদা বা আইএস। এসব ছাপিয়ে আরেকটি কথা না বললেই নয়, তা হলো এই অঞ্চল ঘিরে সুন্নি শাসিত সৌদি আরব এবং শিয়া শাসিত ইরানের পেশির লড়াই।
নাজনীন আখতার: সাংবাদিক।