আসুন, কিউবাকে স্বাভাবিক রাষ্ট্রে পরিণত করি

ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে বামপন্থী বিপ্লবীদের দল হাভানায় প্রবেশের ৬০ বছর পূর্তি হলো এই মাসে। ১৯৫৯ সালের জানুয়ারি মাসে কিউবায় অবসান ঘটেছিল যুক্তরাষ্ট্র–সমর্থিত স্বৈরশাসক ফুলজেনসিও বাতিস্তার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের। এর ফলে 

যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয় এবং এই বিচ্ছেদ অব্যাহত থাকে দীর্ঘ ৫৫ বছর। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইজেনহাওয়ার কিউবার বিরুদ্ধে প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। সেই থেকে বিভিন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমলে নিষেধাজ্ঞার মাত্রা বাড়তেই থাকে; সেটা কারও জন্য কোনো ভালো হয়নি। এখন আসুন, আমরা সবাই কিউবাকে আবার একটি স্বাভাবিক রাষ্ট্রে পরিণত করি।

রক্ষণশীলেরা যেমন বলেন, কিউবা তেমন কোনো দানবীয় রাষ্ট্র নয়; আবার বামপন্থীদের বর্ণনামতে শ্রমিকদের জন্য কোনো স্বর্গরাজ্যও নয়। কিউবা খুবই ছোট দেশ, সে দেশ অন্য কোনো দেশের জন্য হুমকি নয়। সে দেশে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার অবস্থা খুবই ভালো। তবে সেটি একটি দমনমূলক পুলিশি রাষ্ট্র এবং তার অর্থনীতি অর্থনীতি তেমন কার্যকর নয়।

হাভানা বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে যাওয়ার সময় সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি বিলবোর্ড আমার চোখে পড়ে। সেগুলোতে কিউবার ওপর মার্কিন অর্থনৈতিক অবরোধের নিন্দা করা হয়েছে। অবরোধকে বলা হয়েছে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা গণহত্যা’। এসব কথা যদিও হাস্যকর, তবু বলতেই হয় যে কিউবার ওপর মার্কিন অবরোধ ছিল নিরর্থক। তাতে কিউবার জনগণকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া আর কিছু অর্জন করা যায়নি। এখন আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত কিউবার জনসাধারণের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

ছয় দশক পরেও কি আমরা এটা করতে পারি না? চলুন, আমরা অবরোধ তুলে নিই। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য এবং অন্যান্য দমনমূলক শাসনব্যবস্থাকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ করার জন্য আমাদের হাভানার ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

কিউবা তার নাগরিকদের দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক অধিকার অস্বীকার করছে। কিন্তু আবার ভালো কাজও করছে। যেমন, তারা জনগণকে শিক্ষিত করছে এবং তাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখছে। কিউবায় শিশুমৃত্যুর হার যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কম। আমি কিউবা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই; আমি জানি না দেশটি কীভাবে বিকাশ লাভ করবে। তবে কিউবার নতুন প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ-কানেল দেশটির অর্থনীতি চাঙা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ফিদেল তো আর নেই। তাঁর ভাই রাউলও আর দৃশ্যপটে নেই।

১৯৬০–এর দশকে আমরা কিউবাকে ভয় পেতাম। আমরা আশঙ্কা করতাম যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও কমিউনিস্ট ব্লকে পরিণত হবে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের উদ্যোগ নেবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেবে। কিন্তু এখন সেসব ভয় দূর হয়ে গেছে; এখন আমাদের সেই নীতি অচল। যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যকার কয়েক দশকের দূরত্ব ঘুচিয়ে পর্যায়ক্রমে ২০১৫ সালে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক চালু করে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বিপরীতমুখী নীতি গ্রহণ করেছেন। এটা উদ্বেগের বিষয়। ধীরে হলেও কিউবার পরিবর্তন ঘটছে। দেশটির মোট শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশ এখন বেসরকারি খাতে কাজ করছে। দেশটির অর্থনীতির এই অংশটি ধীরে ধীরে সমৃদ্ধি লাভ করছে।

কিউবার নমনীয়তার আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে দেশটি সম্প্রতি মেজর লিগ ফুটবলের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে। এই চুক্তির আওতায় কিউবান খেলোয়াড়েরা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারবেন এবং মার্কিন দলের সঙ্গে খেলতে পারবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তি ভঙ্গের হুমকি দিচ্ছে। কিউবার জনগণের দারিদ্র্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সব সময় কাস্ত্রো ভাইদের দায়ী করে, কিন্তু তাদের দরিদ্র করার প্রক্রিয়ায় আমরাও অংশ নিয়েছিলাম।

কিউবার সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক রীতিনীতি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কারণে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সরকার সমালোচকদের সহ্য করে না। আটকে রাখাসহ তাদের নানা ধরনের হয়রানি করা হয়। তবে কাউকে তারা মৃত্যুদণ্ড দেয় না বা শাস্তি হিসেবে কারও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলে না। ইয়োনি সানচেজের মতো সাহসী ব্লগারদের সমালোচনাও সহ্য করে।

কিউবা তার সংবিধান পর্যালোচনা করছে। আমার আশা, আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও ওয়াশিংটন ও হাভানার সম্পর্কের উন্নতি অব্যাহত থাকবে। মার্কিন জ্যেষ্ঠ নাগরিকেরা যাঁরা এই শীতে ফ্লোরিডায় অবস্থান করছেন, তাঁরা এখন চাইলে কিউবায় যেতে পারেন। সেখানে রয়েছে সুন্দর সুন্দর সমুদ্রসৈকত। জিনিসপত্রের দামও খুব কম। আপনি হাভানায় একটি বাড়ির এক মাসের ভাড়া যত দেবেন, ফ্লোরিডায় তা এক দিনের ভাড়ার সমান।

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
নিকোলাস ক্রিস্টফ: আমেরিকান সাংবাদিক ও কলাম লেখক