গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক খাদ্যপণ্য মেলা উদ্বোধনকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আগামী দুই বছরে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে বলে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, তা এই মুহূর্তে কঠিন মনে হলেও অসম্ভব নয়। বিদেশে বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের প্রচুর চাহিদা আছে। প্রাণ গ্রুপের কৃষিজাত পণ্য এখন ভারতসহ বহু দেশে রপ্তানি হচ্ছে। তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অন্যরাও এগিয়ে আসবে আশা করি।
একই অনুষ্ঠানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি মনমোহন প্রকাশ বলেছেন, বাংলাদেশে কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হলেও জিডিপিতে অবদান মাত্র ১৪ শতাংশ। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান বাড়াতে হলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও বাড়াতে হবে। তবে সেটি শুধু উৎপাদন পর্যায়ে হলে হবে না, পরিবহন ও সংরক্ষণেও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। শস্যখেত থেকে আহরিত কৃষিপণ্য যে দামে বিক্রি হয়, সেটি প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে কয়েক গুণ বেশি দাম পাওয়া যায়। এটি অভ্যন্তরীণ বাজারের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তেমনি বাইরের বাজার ধরার জন্যও প্রযোজ্য। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম প্রক্রিয়াজাত পণ্যের বাজার ভারতে আরও কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে পারে বাংলাদেশ। প্রাণ গ্রুপ শুধু পণ্য রপ্তানি করেনি, সেখানে কৃষিজাত পণ্যের শিল্পকারখানাও প্রতিষ্ঠা করেছে। তা করে ভালো বাজার পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে পণ্যের গুণমানের দিকে। নিম্নমানের পণ্য দিয়ে দেশীয় ক্রেতাদের ঠকানো গেলেও বিদেশি ক্রেতাদের ঠকানো যাবে না। কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য পণ্য সংরক্ষণের দিকেও নজর দিতে হবে। মৌসুমি কৃষিপণ্য দ্রুত পরিবহন ও সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়।
বাণিজ্যমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ ১৪ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি করেছে। চলতি বছরের একই সময়ে সেই রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ কোটিতে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯৭ শতাংশ। ইপিবির তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ৪২ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৪৭ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। অর্থাৎ আমরা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছি। এই ধারা বজায় রাখতে যে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন, তা অস্বীকার করা যাবে না।
মেলায় দেশীয় প্রতিষ্ঠান প্রাণ, সজীব, ইফাদ, অলিম্পিক, এপি তাদের উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, চানাচুর, চিপস, মধু, ঘি, মিষ্টি ইত্যাদি প্রদর্শন করেছে। এসব পণ্যের চাহিদা বিদেশেও কম নয়। বাংলাদেশে কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরি কম। দেশীয় কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়লে কৃষক যেমন লাভবান হবেন, তেমনি কৃষি অর্থনীতিও হবে গতিশীল।