কৃষি আবহাওয়া স্টেশন

একটি এলাকার বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, মৃত্তিকার তাপমাত্রা ও তড়িৎ পরিবাহিতা, মেঘের গতিবিধি—এসব বিষয় যদি দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং প্রতিদিন এ–সংক্রান্ত তথ্য কম্পিউটারের ধারকযন্ত্রে সংরক্ষণ করা হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন কৃষক। দীর্ঘদিন ধরে এসব তথ্য জমা করে বানানো উপাত্ত ভান্ডার বিশ্লেষণ করে কৃষক কোন সময়ে কোন জমিতে কোন ফসল আবাদ করবেন, সে বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত দেওয়া সহজ হয়। এই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে চাষাবাদ করলে আশা করা যায়, কোনো আকস্মিক দুর্যোগ না হলে ফসলের সর্বোচ্চ ফলন হবে।

উন্নত দেশগুলোতে এই ব্যবস্থা বহু আগে থেকেই আছে। আনন্দের খবর হলো, আমাদের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বুধবার এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এটি একটি স্বয়ংক্রিয় কৃষি আবহাওয়া স্টেশন। এই স্টেশন থেকে সিলেট অঞ্চলের কৃষি আবহাওয়া সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানা যাবে। এর তত্ত্বাবধানে থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বনায়ন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ক্লাইমেট স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার ল্যাব। বিভাগের নার্সারিতে স্থাপিত এই স্টেশন নির্মাণে অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক, ইউএসএআইডি ও বাংলাদেশ সরকার।

স্টেশনটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তথ্য ধারকযন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত নিরবচ্ছিন্নভাবে বায়ুর তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, মৃত্তিকার তাপমাত্রা ও মৃত্তিকার তড়িৎ পরিবাহিতা ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণ হতে থাকবে। প্রয়োজন অনুযায়ী কম্পিউটারের সাহায্যে ওই ধারকযন্ত্রে সংরক্ষিত তথ্য কাজে লাগানো যাবে। স্টেশন থেকে দীর্ঘ মেয়াদে কৃষি আবহাওয়ার মৌলিক তথ্যগুলোর একটি সংগ্রহশালা সৃষ্টি হবে। এটা জলবায়ু পরিবর্তনসংশ্লিষ্ট কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রাখবে। শিক্ষার্থীরা এখান থেকে হাতে-কলমে কৃষি আবহাওয়ার মৌলিক নিয়ামকগুলো পরিমাপের সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ও সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামিং প্যাকেজ সম্পর্কে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রায়োগিক জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। এই অবস্থা যত বেশি বিকশিত হবে, প্রকৃতির কাছে জিম্মি হয়ে থাকা অবস্থা থেকে আমরা তত বেশি বের হয়ে আসার সুযোগ পাব।

সম্প্রতি নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষির সম্পর্কবিষয়ক একটি সম্মেলনে ২৫টি দেশের শতাধিক বিজ্ঞানী-গবেষকও এই ধরনের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের একটি দলও সেখানে অংশ নিয়েছিল। সেখানে বিজ্ঞানীরা মেঘের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে কৃষিব্যবস্থাকে সাজানোর কথা বলেছেন।

আমাদের দেশে কৃষকদের কথা মাথায় রেখে চাষাবাদবান্ধব পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে না। সিলেটে স্থাপিত কৃষি আবহাওয়া স্টেশন ওই বিভাগের চাষিদের সামনে সেই পথ খুলে দিয়েছে। এই সুবিধা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করতে হবে। তাহলেই এ দেশে আরেকটি কৃষিবিপ্লব সম্ভব হবে।