বেতাগীর গ্রাম আদালত

বরগুনার বেতাগী উপজেলার গ্রাম আদালত যেভাবে তঁাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং এলাকার মানুষের দ্রুত বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

গতকাল প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউএনডিপির আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্প শুরু হয়। এর আওতায় ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বেতাগী উপজেলায় এর কার্যক্রম চলছে। গত বছরের মে মাস থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এ আদালতে ৩৭৮টি দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা নথিভুক্ত হয়। এর মধ্যে ৩৫৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি ২১টি মামলার বিচার চলমান। এ পর্যন্ত আদালতের রায়ে সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা প্রায় সাড়ে ৩৮ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। এ ছাড়া ২৮১ শতক জমি উদ্ধার করা হয়েছে।

বেতাগী উপজেলার এ গ্রাম আদালত দেশের অন্য আদালতগুলোর জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। আমাদের দেশের মূলধারার আদালতগুলোতে মামলার জট সম্ভবত পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। বর্তমানে সারা দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৩৪ লাখ। প্রতিনিয়ত এই সংখ্যা বাড়ছে। বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতাই মামলাজটের অন্যতম কারণ। বিচারিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে জনগণের অর্থ ও সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি অনেকে ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এগুলো কোনোভাবেই কাম্য নয়।

গ্রাম আদালতে মামলা করলে কোনো আইনজীবীর প্রয়োজন হয় না। পাঁচজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে গ্রাম আদালত গঠিত হয়। তাঁরা হলেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বাদীর পক্ষের দুজন প্রতিনিধি ও বিবাদীপক্ষের দুজন প্রতিনিধি (একজন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং একজন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি)।

তবে গ্রাম আদালত গ্রামের মানুষের দ্রুত বিচারপ্রাপ্তিতে ভূমিকা রাখলেও কিছু কিছু বিষয় এ আদালতের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে। যেমন: দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিধিমালার অধিভুক্ত আইনগুলো সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রেই ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের জানাবোঝার ঘাটতি থাকে। গ্রাম আদালত পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও উপকরণের অভাব থাকে। সর্বোপরি, এ আদালত পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য তেমন কোনো সম্মানী বা বেতনভাতারও ব্যবস্থা নেই। এসব দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।

এ ছাড়া দেশের সব উপজেলায় গ্রাম আদালত কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে এবং এ আদালতের কথা বেশি করে প্রচার করতে হবে। গ্রাম আদালতে স্বল্প সময়ে যে সঠিক বিচার পাওয়া যায়, এই ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে।

দেশের সব উপজেলায় গ্রাম আদালত কার্যকর হলে স্থানীয় বিচারব্যবস্থায় যেমন বিভিন্ন ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, তেমনি উচ্চতর আদালতে মামলার ভার হ্রাস করবে।