নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ চাই
>গত ৩১ মার্চ ২০১৮, প্রথম আলোর আয়োজনে ও আইআইডি (ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট)-এর সহযোগিতায় ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।
যাঁরা অংশ নিলেন
সাদেকা হালিম: ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সৈয়দ মো. শাইখ ইমতিয়াজ: চেয়ারম্যান, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সারা হোসেন: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
আলী আসগর স্বপন: পাবলিক প্রসিকিউটর, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল
ইশরাত শারমীন রহমান: ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সিল, নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়
মালেকা বানু: সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
সাঈদ আহমেদ: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, আইআইডি
মো. নুরুল ইসলাম: টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর, উইমেন ইকোনমি এম্পাওয়ারমেন্ট, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন
সামিয়া হক: নৃতত্ত্ববিদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
হুমায়রা ফারহানাজ: ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার, জেন্ডার, অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ইউথ, ইউএনএফপিএ
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা: হেড অব ইসিডি অ্যান্ড গার্লস এডুকেশন, ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল
ফাল্গুনী রেজা: সহযোগী গবেষক, আইআইডি
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো
আলোচনায় সুপারিশ
* নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন জরুরি
* নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের সুযোগ করে দিতে হবে
* শুধু আইন থাকলেই হবে না, আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি
* আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জবাবদিহির মধ্যে আনা প্রয়োজন
* পরিবার থেকে ছেলেমেয়েদের সমতার বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে
* সাইবার স্পেসে নারীর প্রতি নির্যাতন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
* শিক্ষা পাঠ্যক্রম নারী সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন
* নারীর উন্নয়নে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: সম্প্রতি সমাজে নারীর প্রতি নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেছে। প্রতিদিন খবর আসছে নারী ও মেয়েশিশুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে অনেক আইন রয়েছে, যেখানে প্রতিটি অপরাধের দ্রুত বিচার সম্ভব। তারপরও আমরা দেখি দিনের পর দিন মামলাগুলো ঝুলে থাকে।
অনেক সময় সালিসের নামে নির্যাতিত নারীর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ না হলে একটি সুন্দর সমাজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে না।
আজ নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আরও কৌশলগত ও কার্যকর ভূমিকার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এখন আলোচনার সূচনা করবেন মালেকা বানু।
মালেকা বানু
নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ফলে এটি যে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আন্দোলনের ফলে বেশ কিছু আইন হয়েছে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের আন্দোলন সব সময় প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে গেছে। বর্তমানে যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে নারী আন্দোলনকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক কঠোর আইন রয়েছে। তবে আইনগুলোর বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সেটি দেখতে হবে।
বিচার বিভাগ ও সমগ্র সমাজের নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা কোন পর্যায়ে, তা দেখা জরুরি। মাঠপর্যায়ে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সালিসি কার্যক্রমে যাঁরা আসেন, তাঁদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করা হয়। পেশিধারীরা সালিসি কার্যক্রমে দল নিয়ে আসে।
এমনকি নারীর সহিংসতা রোধে কাজ করা সংগঠনের ওপর নানা চাপ সৃষ্টি করে।
সহিংসতার শিকার হওয়ার পর মামলাকারী একা গেলে তাকে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। মামলা নিতে গড়িমসি করা হয়, বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হয়।
কঠোর আইন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে পরিবহন, বাজার, রাস্তা, বিভিন্ন ঘনবসতিপূর্ণ কিংবা খোলামেলা এলাকায় নারী নির্যাতনের যে ধরনের ঘটনা ঘটছে, তা সত্যিই আশঙ্কাজনক।
সাঈদ আহমেদ
আইআইডির পক্ষ থেকে চলমান সহিংসতার স্বরূপ অনুসন্ধান ও প্রতিকার নিয়ে মত বিনিময় করতে গত এক বছরে আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়েছি। সেসব আঞ্চলিক আলোচনায় এসেছে যে জাতি ও সম্প্রদায়ের ভিন্নতাকে উপজীব্য করে যেসব সহিংসতার সূত্রপাত হয়, তার সবচেয়ে বড় শিকারও হয় নারী।
যেকোনো ধরনের সংখ্যালঘু, যেমন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি মাত্রায় অরক্ষিত এবং বৈষম্যের শিকার। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের অর্থনৈতিক সুযোগ ও ক্ষমতার একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখার জন্যও ধর্মের নাম ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতাকে ন্যায্য বলে প্রমাণ করা হয়।
এর ফলে তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রশাসন পর্যন্ত নারী সুরক্ষায় যথাযথ নীতি প্রণয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
সাম্য ও ন্যায়বিচারের বিষয়টি জননীতির প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সঠিকভাবে সম্পৃক্ত না করলে নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না।
সামিয়া হক
যেকোনো মূল্যে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করতে হবে। এ জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সব শ্রেণির মানুষের মধে্য সচেতনতা তৈরি করা। নারীকে ঘরে ও বাইরে কাজ করতে গিয়ে যেন অতিরিক্ত বোঝা বহন করতে না হয়, সেই দিকটি খেয়াল রাখতে হবে। কিন্তু নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন কোনোভাবেই নিরুৎসাহিত করা যাবে না।
সবাই সচেতন হলে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হবে। নারী–পুরুষ সবাই মিলে একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারব। নারীর প্রতি সহিংসতার একটি বড় কারণ পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ।
এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। সুযোগ থাকলে নারীরা যে সব ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পারেন, সেটি তঁারা বারবার প্রমাণ করেছেন।
মো. নুরুল ইসলাম
নারীর প্রতি সহিংসতার হার বর্তমানে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কারই বেশি কাজ করছে।
২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৮১৮টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, ১০৪টি ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে, ধর্ষণের পর ৪৭ জনকে খুন করা হয়েছে এবং ১১ জন আত্মহত্যা করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই সংখ্যার চেয়ে প্রকৃত সংখ্যাটা নিশ্চয়ই আরও বেশি। এর একটি কারণ হচ্ছে তারুণ্য, ইন্টারনেট ও যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সহজলভ্যতা।
সহিংসতা আগেও ছিল। সাম্প্রতিককালে এর স্বরূপ খুবই ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। এর একটি বড় কারণ হলো, যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার। এর পেছনে তরুণদেরও দায়বদ্ধতা আছে। একটি স্মার্ট ফোনের ইতিবাচক-নেতিবাচক ব্যবহার সম্পর্কে এখনো সবাইকে সচেতন করা যায়নি। বাংলাদেশে অ্যাডাল্ট (বয়স্কদের) সাইটগুলো সার্চ করলেই পাওয়া যায়। ডিজিটাল আইনের মাধ্যমে এর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
নারী বাইরের কাজ করলেও তাঁকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাসার কাজও করতে হয়। নারীরা ক্ষমতায়ন ও অধিকার সম্পর্কে যখন সচেতন হয়ে ওঠেন, তখন অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা পারিবারিক নির্যাতন বা সহিংসতার শিকার হন।
নির্যাতনের শিকার হওয়া একজন নারী আইনের আশ্রয় না নেওয়া পর্যন্ত আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিতে চায় না। আবার দোষী ব্যক্তিদের ক্ষমতার চাপে মামলা করা যায় না। এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা উচিত।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে নারী এবং পুরুষকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো যাবে না; বরং উভয়ে মিলেই সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমানো সম্ভব।
হুমায়রা ফারহানাজ
কঠোর আইন থাকলেও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন না করতে পারলে সামাজিক পরিবর্তন আনা কঠিন। যেমন গত বছর সরকার শিশুবিবাহ প্রতিরোধ করার ঘোষণা দেওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। খবর পাওয়া যাচ্ছে, অভিভাবকেরা চলন্ত মাইক্রোবাসে কিংবা নৌকায় বাল্যবিবাহের আয়োজন করছেন। যেন কেউ আইনি ব্যবস্থা নিতে না পারে। আইন প্রণয়নের সঙ্গে সেগুলোর বাস্তবায়ন জরুরি।
কিশোর বয়স থেকেই ছেলেমেয়েদের সচেতনতা গড়ে তুললে ভবিষ্যতে এর সুফল পাওয়া যাবে। জাতীয় স্কুল পাঠ্যক্রমে অনেক পরিবর্তন এসেছে। চাইলে আরও অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যায়। তরুণ বয়স থেকেই ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে লিঙ্গসমতা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।
সরকারের বাজেট বরাদ্দের বিষয়টির মূল্যায়ন জরুরি। নারীবান্ধব উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় বাজেট কম। নারীর অধিকার আদায় করার জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়, সেগুলো বাস্তবায়নে সরকার কী পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে, তা দেখা উচিত।
সৈয়দ মো. শাইখ ইমতিয়াজ
কঠোর পদক্ষেপ বলতে প্রতিকারকে বোঝায়। কিন্তু প্রতিকারের তুলনায় প্রতিরোধ বেশি জরুরি। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কঠোর কৌশল ও কার্যকর পদক্ষেপ চাই।
প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি, যথোপযুক্ত কৌশল। শিক্ষা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের চেষ্টা করা উচিত। ২০১১ সালে আমরা সাহসীদের ক্যাম্পেইন নামে ১০০টি স্কুলে এ ধরনের একটি কার্যক্রম পরিচালনা করেছি, যার ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।
এক বছর ধরে আমাদের দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটছে। এর কারণগুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে, সমাজে একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যে ধর্ষণের ঘটনার জন্য দায়ী ‘পোশাক’। যদি পোশাকের জন্যই মেয়েরা ধর্ষিত হয়, তাহলে পাঁচ বছরের শিশু বা বোরকা পরা মেয়েরা ধর্ষিত হয় কেন?
যখন নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে, তখন সবার উচিত তার পক্ষে দাঁড়ানো। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমরা সেটা করি না।
মেয়েরা এখন ক্রিকেট-ফুটবল খেলছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় ৫০টি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির মেয়েদের দেখা গেছে িটফিনের সময়ে তারা মাঠে খেলে না। কারণ, সহপাঠী ছেলেরা তাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করে। অনেক ক্ষেত্রে ছবি তুলে ফটোশপে এডিট করে মেয়েদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। স্কুলের শিক্ষকদের আগে সামাজিক নেতার সম্মান ছিল। কিন্তু এখন আর সেটা নেই। গঙ্গাচড়ায় গত এক বছরে একটিও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়নি, তাহলে আগের সাংস্কৃতিক কর্মীরা কোথায় হারিয়ে গেলেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
শিক্ষকেরা তাঁদের প্রাপ্ত সম্মানী না পাওয়ার কারণে সামাজিক কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ছাত্ররা ১১ বছরের আগে থেকেই পর্নোগ্রাফির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
অন্যদিকে যাঁরা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরাও নানা কারণে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে একসঙ্গে কোনো প্রতিবাদ গড়ে উঠছে না। নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে হলে কতগুলো প্রস্তাব বিবেচনা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। একজন মেয়ের ক্ষমতায়ন হলে পুরো সমাজ তার সুফল ভোগ করে। পুরুষ কীভাবে সুফল ভোগ করছে সেটা দেখাতে হবে। নারী-পুরুষের সংকটকে চিহ্নিত করতে হবে। কৌশলী না হয়ে পুরুষকে নারীর শত্রু বানিয়ে দিলে সমস্যার সমাধান হবে না।
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা
নারী নির্যাতনের মূলে রয়েছে পুরুষের ক্ষমতা এবং পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। সহিংসতা কমাতে হলে ছোট বয়স থেকেই শিশুদের নারীর প্রতি সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে, মেয়েশিশুদের অধিকার সম্পর্কে তাদের সচেতন করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেয়েরা নিজেরাই তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন।
সচেতনতা গড়ে তোলার কাজটি প্রথমত নিজের বাড়ি থেকে শুরু করতে হবে। ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই সচেতনতা প্রয়োজন। কারণ, পরিবারেই একজন মেয়ে জানতে পারে, মেয়ে হিসেবে তার অবস্থান কোথায় আর একজন ছেলের অবস্থান কোথায়।
স্কুলে কেউ তার আত্মপরিচয় সম্পর্কে কোনো শিক্ষা লাভ করে না। বাংলাদেশের পাঠ্যক্রমে নারী-পুরুষের যৌন শিক্ষার ওপর তেমন জোর দেওয়া হয় না। ফলে ছেলেমেয়েরা বিপরীত লিঙ্গ সম্পর্কে বিকৃত উপায়ে ধারণা লাভ করে।
তিন থেকে ছয় বছরের মধ্যে একটি ছেলে বা মেয়ে জানতে পারে সে ছেলে না মেয়ে, সমাজে তার অবস্থান কী। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় ছেলেরা বুঝে ফেলে তাদের কিছু বাড়তি সুযোগ-সুবিধা আছে। বিপরীতে মেয়েদের কিছু কাজ করা নিষেধ।
এই দৃষ্টিভঙ্গি যাতে গড়ে না ওঠে, সে জন্য পরিবার থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থাগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ফাল্গুনী রেজা
আইআইডি গত এক বছরে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বিশ্বাসভিত্তিক এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার স্বরূপ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মতামত জানার উদ্দেশ্যে পলিসি ফোরাম আয়োজন করেছে। সেখান থেকে কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরা যায়।
চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ফোরামে অংশগ্রহণকারীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল নারীর প্রতি সহিংসতার কীভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এর উত্তরে তঁারা ১০টি উপায় উল্লেখ করেন। এগুলো হলো মেয়েদের কীভাবে চলাফেরা করা উচিত, কী পোশাক পরা উচিত, রাতে কয়টার পরে বাইরে থাকা যাবে না ইত্যাদি।
শুধু দুইটি ক্ষেত্রে তঁারা উল্লেখ করেছেন যে প্রথমত, ধর্মে নারী নির্যাতন নিষেধ রয়েছে এবং কোনোভাবেই পুরুষের নারী নির্যাতন করা উচিত না। আলোচনার একপর্যায়ে গিয়ে তঁারা এ কথা বলেন যে নারীর প্রতি সহিংসতার মূল কারণ হলো, স্বাভাবিকভাবেই পুরুষ তার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। এটা হলো দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচারের একটা স্বরূপ।
বরিশালে আলোচনায় এসেছে যে পরিবারে মেয়েদের পড়াশোনার বিনিয়োগে সুফল কম। কারণ, তারা বিয়ে করে সংসার করে। আয় করে না। তাই মা-বাবার উচিত পুরুষ সন্তানের জন্য বিনিয়োগ বেশি করা।
এর ঠিক বাস্তবধর্মী বিপরীত উদাহরণ এসেছে যশোরের ফোরামে। যেখানে একজন নারী আফসোস করে বলছিলেন যে স্বামী অসুস্থ থাকায় পুরো পরিবারের ব্যয়ভার তঁাকে বহন করতে হয়। কিন্ত তাঁর মা-বাবা যদি তাঁকে আরও পড়ার সুযোগ দিতেন, তাহলে এখন তিনি বেশি উপার্জন করে পরিবারকে আরও ভালোভাবে সাহায্য করতে পারতেন।
আলী আসগর স্বপন
গণমাধ্যমের ভূমিকার ফলে নারীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা এখন সমাজে নেই বললেই চলে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধেও গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পাশাপাশি নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের ভূমিকাও তাৎপর্যপূর্ণ। রিমা হত্যা মামলার সময় মহিলা পরিষদ জোরালো ভূমিকা পালন করেছে। ফলে ন্যায়বিচার পাওয়া গেছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে অনেক আইন রয়েছে। অনেক মামলাও হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারী তাঁর ন্যায্য বিচার পান না। এর কারণগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন। ধর্ষণের মামলায় কোনো আসামিকে জামিন দেওয়া হয়। এর অন্যতম কারণ যাঁরা মামলা করেন, তাঁরা শেষ পর্যন্ত সমান উৎসাহ নিয়ে মামলা পরিচালনা করেন না। আসামির পক্ষ থেকে তাঁদের ওপর নানা চাপ সৃষ্টি করা হয়।
চৈতি ধর্ষণ মামলায় দেখা যায়, আসামির শাস্তির জন্য তেমন কোনো উপাদান আদালতে হাজির করা যায়নি। আইনের কিছু দুর্বলতা আছে। সেগুলো দূর করাও অতি জরুরি।
নারী নির্যাতন মামলায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহির বিধান রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি সঠিকভাবে তদন্ত না করেন, তাহলে তাঁকে জবাবদিহি করতে হয়। তাঁকে চাকরিচ্যুত করা কিংবা অব্যাহতি দেওয়ার বিধান রয়েছে। আবার পাবলিক প্রসিকিউটর মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে উদাসীনতা প্রদর্শন করলে তাঁকেও বাদ দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বিধিমালাগুলোর বাস্তবায়ন তেমন দেখা যায় না।
নারী নির্যাতনের মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যেই শেষ করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করা হয় না। এর মূল কারণ জবাবদিহির অভাব। জবাবদিহি নিশ্চিত করা গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনা সম্ভব।
কোনো একটি ঘটনার বিচারহীনতা নতুন আরেকটি ঘটনাকে জন্ম দেয়। নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোর যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করা যায়, তাহলে আরও নির্যাতনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা কমে যাবে।
সারা হোসেন
কঠোর আইন ও তার কঠোর বাস্তবায়ন একটি নেতিবাচক ধারণা। কঠোর শাস্তি দিলেই যে অপরাধ প্রবণতা কমে যায়, এমনটা পৃথিবীর কোথাও গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি। নারীর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে প্রতিকারের তুলনায় প্রতিরোধকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে নারীর প্রতি সহিংসতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঘরের ভেতর একভাবে, ঘরের বাইরে অন্যভাবে নারীরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি নিয়ে হাইকোর্টের রায় আছে। কিন্তু সে রায়টিকে এখন পর্যন্ত আইনে বাস্তবায়ন করা যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন আগের যৌন নির্যাতন এবং তার বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনাই এর অন্যতম প্রমাণ।
একটি অপরাধ হলে কী হতে পারে ও তার জন্য কী ধরনের সুরক্ষা পাওয়া যাবে, সে বিষয়গুলো বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা উচিত। কেবল আইনই একমাত্র সমাধান নয়। আইনের বাইরেও অনেক কিছু করার আছে।
বিশেষ করে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে, প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। আইন সম্পর্কে প্রত্যেকের সচেতন হওয়া উচিত। আইনের প্রয়োগ যাঁদের হাতে, তাঁদের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।
নারী নির্যাতনের মামলা নিতে আগ্রহী নয় এমন কোনো পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা আমাদের নজরে আসেনি।
মেয়েদের নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। কোনো একটি ঘটনা ঘটার পর তার প্রতিবাদ করার জায়গা প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশে নানা ধরনের আইন হচ্ছে।
রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করছে ঠিকই কিন্তু সেগুলোর প্রয়োগ ঠিকমতো হচ্ছে না। যখন কোনো কঠোর আইন করা হয় কিন্তু পরে ক্ষমতাশালীদের সুবিধা দেওয়ার জন্য কিংবা রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনে সেই আইন আর প্রয়োগ করা হয় না, তখন সে আইন অর্থহীন হয়ে যায়।
মারমা মেয়েদের ধর্ষণের ঘটনায় জোরালোভাবে আন্দোলন করা যায়নি। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ওপরও চাপ বিরাজমান। সমাজের প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে তাই বিশেষভাবে কাজ করা উচিত।
ইশরাত শারমীন রহমান
দিনের পর দিন নারীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি কিছুটা গুরুত্ব পেলেও নারীদের মানসিক নির্যাতনের বিষয়টিকে খুব বেশি জোর দেওয়া হয় না। নির্যাতনের পর নারীরা মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে যান। তখন তাঁদের বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন। না হলে দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের ওপর নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
নারী হিসেবে একজন মানুষের কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, সে সম্পর্কে অনেক ক্ষেত্রে নারীরা নিজেরাই সচেতন নন।
নারীদের সহায়তার জন্য যে আইনগুলো রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কেও তাঁরা জানেন না। অনেক সময় স্বামী কর্তৃক নির্যাতিত হওয়ার পর নারীরা আইনি পদক্ষেপ নিতে ইতস্তত করেন।
দৃষ্টিভঙ্গিটা এমন যে সংসারে একটু-আধটু মারধর হয়েই থাকে। স্বামীরা একটু মারধর করেই, নারীদের এটি সহ্য করা উচিত। ফলে তাঁরা বারবার নির্যাতনের শিকার হন। এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
একজন নারী বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর পরিবার সেটি সমর্থন করে না। পরিবার মনে করে, তাতে সমাজে তারা ছোট হয়ে যাবে। সন্তানদের কী হবে, ভবিষ্যতে কী হবে—এসব বিষয় চিন্তা করে তারা নারীকে সিদ্ধান্ত নিতে দেয় না। এটিও একধরনের মানসিক নির্যাতন। নারীকে তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
ইন্টারনেটের আশ্রয় নিয়ে নারী নির্যাতনের প্রবণতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। একজন নারীর কোনো বিশেষ বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কের ভিডিও ক্লিপকে পুঁজি করে সেই নারীকে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তাঁকে বিশেষ চাহিদা পূরণে বাধ্য করা হচ্ছে।
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণের যে একটি কঠোর আইন আছে, অনেক নারী সেটি জানেন না। এ জন্য নারী এ নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।
বৈবাহিক দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের কাউন্সেলিং প্রয়োজন। কিন্তু যখন স্বামীকে কাউন্সেলিংয়ের জন্য ডাকা হয়, তখন তাঁরা আসেন না। স্বামী-স্ত্রীর দৈনন্দিন কলহের প্রভাব বাচ্চাদের ওপর পড়ছে। ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।
পুরুষেরা চিন্তা করে নারীকে যদি বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে তাঁকে দমিয়ে রাখা যাবে না। সে জন্য নারীকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে না। নারীকে মারধর করে ক্ষমতা ধরে রাখার উপায় হিসেবে ভাবা হয়। যারা অপরাধ করছে, তার আত্মীয়স্বজনেরাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীদের সমর্থন করে না। নারীর প্রতি এমন অসংবেদনশীলতা দূর করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘জয়‘ নামের অ্যাপস তৈরির কথা চলছে। যার মাধ্যমে একজন নারী নির্যাতনের সব তথ্য দ্রুত কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিয়ে আইনের সহায়তা পেতে পারবেন।
সাদেকা হালিম
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে এ ঘটনাগুলোর পেছনে যে মূল কারণগুলো রয়েছে, সেগুলো উদ্ঘাটন করা প্রয়োজন। নারীর প্রতি সহিংসতার মূলে রয়েছে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের মধ্যে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর পিতৃতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি।
পরিবারে শিশুর সামাজিকীকরণ করার মধ্য দিয়েই নারীর প্রতি সহিংসতার বীজ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। একটা ছেলেশিশুকে যেভাবে দেখাশোনা করা হয়, একটি মেয়েশিশুকে সেভাবে দেখাশোনা করা হয় না। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি পর্যায়ে অনেক গুণগত পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সনাতনী ধ্যানধারণা ভেঙে নারীরা বাইরে বেরিয়ে আসছেন। কিন্তু এখনো পর্যাপ্ত গুণগত পরিবর্তন হয়নি। এই পরিবর্তন না হওয়ার পেছনের কারণগুলো অত্যন্ত জটিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির বিষয়ে যে প্রক্টরিয়াল আইন আছে, সেটি অনেক পুরোনো। যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিষয়ে তদন্ত করার পর কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট থেকে উচ্চ আদালতে ঘটনা চলে যায়। পরে আদালতে আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শিক্ষকেরা পার পেয়ে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় যৌন হয়রানির প্রমাণ রয়েছে এমন শিক্ষকেরাও মাত্র চার-পাঁচ বছরের ব্যবধানে দাপটের সঙ্গে আবার শিক্ষকতা করার সুযোগ পাচ্ছেন।
অপরাধের ধরন অনুযায়ী আইনের সুষ্ঠু সমন্বয় প্রয়োজন। ধর্ষণের জন্য এক রকম, যৌন হয়রানি জন্য এক রকম, আবার মনস্তাত্ত্বিক হয়রানির জন্য আরেক রকম আইন থাকা প্রয়োজন।
পর্দার বাইরের নির্যাতনের ঘটনাগুলো নিয়ে তা-ও কিছুটা কাজ করা যায়। কিন্তু পর্দার ভেতরে যে নির্যাতনগুলো হচ্ছে, সেগুলো নিয়েও কাজ করা উচিত। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ইউটিউবে উসকানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। নারীর বিরুদ্ধে ৭৫ শতাংশ ‘সাইবার ক্রাইম’ ফেসবুকে হচ্ছে।
এটি বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর আইনি জটিলতা ও সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে নারীরা আদালতমুখী হচ্ছেন না। এই প্রবণতা দূর করা প্রয়োজন।
পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো চর্চাকারী অনুষ্ঠানগুলো বন্ধে যথাযথ পদেক্ষপ নেওয়া প্রয়োজন। গণমাধ্যম িনয়ন্ত্রিত না বলে অপসংস্কৃতি মানুষের িচন্তার গভীরে ঢুকে গেছে।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নকে টেকসই করার অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হবে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা।
সহিংসতা রোধের জন্য অর্জিত জ্ঞানকে সাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। নিরাশ হলে চলবে না। ধীরগতিতে হলেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। নারীর সহিংসতার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে সমষ্টিগতভাবে কাজ করলে সমস্যার সমাধান হবে। আবার যেসব নারী সমাজে এগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদেরও এগিয়ে আসা উচিত।
আব্দুল কাইয়ুম: নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পাশাপাশি নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
বিদ্যমান আইনগুলোর দুর্বলতা দূর করে সেগুলো বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে। সে জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জবাবদিহির মধ্যে আনা জরুরি। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ না করলে উন্নয়নকে টেকসই করা যাবে না।
আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।