ছোট ছোট জেলার সার্কিট হাউসগুলো হলো পাড়ার শহীদমিনারের মতো। সারা বছর এর যত্নআত্তি নেওয়া হয় না। কোনো অকেশনে কিংবা ভিআইপি এলে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। শাহীন যেহেতু ভিআইপি নয়, মাঠপর্যায়ের একজন সাধারণ সরকারি কর্মকর্তা, তাই তাকে নিয়ে কোনো হুড়োহুড়ি লাগল না। ফলে সে আলগোছে চাদর তুলে দেখে নিল অবহেলার চিহ্নগুলো। এ রকম সার্কিট হাউস ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সেও একসময় জড়িত ছিল। ফলে বিষয়টা তার গায়ে লাগল। মনে মনে কিছুক্ষণ বকাঝকা করে ওয়াশরুমে গেল সে। সেই আইয়ুব খান যাওয়ার পর এখানে টাইলস লাগানো বাদে আর কোনো কাজ হয়েছে বলে তার মনে হলো না। টয়লেট ব্যবহার করার পর দেখল হ্যান্ডস্প্রে কাজ করছে না। পানি নেই। কী সর্বনাশ! এমন অবস্থায় তো কাউকে ডাকাও যায় না। অগত্যা কমনসেন্স কাজে লাগাল শাহীন। তবে তা করতে গিয়েই সে বুঝল, ব্যাপারটা খুব ননসেন্সের মতো হয়ে গেছে। হ্যান্ডস্প্রের কল ঘোরাতেই ফিনকি দিয়ে পানি বেরিয়ে এসে তাকে ভিজিয়ে দিল। নিজের ভুল শোধরাতে গিয়ে অর্ধেকটা বুক ভিজে গেল। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে দিয়ে গা মুছতে মুছতে সে খেয়াল করল তার সেলফোনের স্ক্রিন জ্বলছে-নিভছে। দুপুরে মিটিংয়ের সময় সেলটা মিউট করেছিল। তাই আওয়াজ হচ্ছে না। না জানি কতগুলো জরুরি কল এসেছে এর মধ্যে। সে জন্টি রোডসের মতো লাফিয়ে পড়ে লুফে নিল ফোনটি। নওরীনের ফোন।
: থ্যাংঙ্কু।
: হঠাৎ!
: এই যে আমার জন্য কষ্ট করলে।
: কিসের কষ্ট।
: এক জেলায় কাজ, উঠলে আরেক জেলায়—
: সে তো রাকিবের দাওয়াত রাখতে।
: যাই হোক, আই ফিল অনারড।
: কষ্ট তো করতে চেয়েছিলাম সারা জীবন। দিলে আর কই।
: রাখো তো এসব সস্তা ফাজলামো। কখন যাবে?
: সকালে ভিজিট আছে। এর আগেই বেরুব।
: গোলাপগাছটা আছে কিনা একটু দেখো তো...অনেক দিন যাওয়া হয়নি। কেউ এদিকটায় এলে, একবার বলি দেখে যেতে।
: আমি যাচ্ছি জিয়ারত করতে। গাছের গোড়া সাফ করতে নয় মেম। সরি—
: এ রকম কোরো না লক্ষ্মীটি। সার্কিট হাউসের মালিটিকে নিয়ে যাও। আমি রাকিবকে বলে দিচ্ছি...
: ও, রাকিব আমার কথায় মালি দেবে না, তা বলতে চাইছো তো।
: সরি। এভাবে ভাবিনি।
: হয়েছে, রাখো। বউ যদি কল করে না পায়, খবর আছে।
: ওকে ওকে, গুড নাইট। ভালো থেকো।
ফোনটা রাখার পর শাহীনের মেজাজ আরও তিতকুটে হয়ে উঠল। মেয়েটা তাকে ভাবে কী? সে কি সারা জীবন কৃষ্ণ-রাধার প্রেমের বড়াই বুড়ি হয়ে থাকবে? তার কি স্বকীয়তা বলতে কিছু থাকতে নেই?
সেই জাপান থেকে এ তাচ্ছিল্য দেখে আসছে সে। তারা ছয়জন কাছাকাছি ব্যাচের অফিসার সরকারি একটা প্রকল্পের অর্থায়নে উচ্চশিক্ষার জন্য জাপান গিয়েছিল। নওরীন শাহীনের ব্যাচের। কিন্তু ৬ বছর চাকরিজীবনে তার সঙ্গে এর আগে কখনো দেখা হয়নি শাহীনের। এয়ারপোর্টে প্রথম তাকে দেখে শাহীন তাজ্জব বনে গিয়েছিল। এ তো মানুষ নয়, গানের সেই ‘মোমের পুতুল মোমের দেশের মেয়ে’। এমন সুন্দরী এক ব্যাচমেটের সঙ্গে তার পরিচয় হতে এতদিন লেগে গেল! কেউ তো বললও না এর কথা। নওরীন বিহ্বল-চঞ্চল পায়ে এয়ারপোর্টে ছোটাছুটি করছিল। এটা যেন তার বাসাবাড়ি। শাহীন মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছিল আর মনে মনে ভাবছিল, এমন একটা মেয়েকেই তো এতদিন খুঁজছিল ভালোবাসার বড়শিতে গাঁথার জন্য।
কিন্তু জাপানে ক্লাস শুরু হওয়ার পর মেয়েটার ওপর একটা অভক্তি এসে গেল শাহীনের। ইরেটেবল বাউল সিনড্রম নামের একটা রোগের কথা শুনেছে শাহীন। এ রোগ হলে নাকি সময়–অসময়ে পেট বিগড়ে যায়। সেই রোগের সঙ্গে মিল রেখে নওরীনের সমস্যাটির নাম শাহীন দিয়েছে ইরেটেবল ল্যাকমিরাল সিনড্রম। আইএলসি। সামান্য কিছু হলেই ল্যাকমিরাল গ্রন্থি থেকে জল সরবরাহ শুরু হয়। ওরিয়েন্টেশন সেশনের শুরুতে ন্যাশনাল এনথাম বাজানো হয়েছিল। তখন নওরীনের দুচোখ ভেসে কান্না। কান্নার কারণ কী? তার নাকি পরিবারের কথা মনে পড়ছে। এই ধুমসি মেয়ে পরিবারের কথা ভেবে কাঁদছে, এটা ভাবা যায়?
ক্লাসে ফ্যাসিলেটর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের জনগণ কেমন কঠিন সময় পার করেছিল তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তার পরিবারের ছোট্ট একটা কাহিনি বললেন। বাংলা সিনেমা মার্কা কাহিনি। রিকশা চালাতে চালাতে কোটিপতি। ওমা, এ কাহিনি শুনে নওরীনের দুচোখ উপচে কান্না। প্রায় সে ক্লাসে এসে কোনায় বসে আপন মনে কাঁদত। চেপে ধরলে স্বীকার করত কারণটা। হয়তো কোনো বই পড়েছে কিংবা সিনেমা দেখেছে গতরাতে। তার রিঅ্যাকশন। আরেক দিন তুষারপাত হচ্ছিল বাইরে। এদিকে তা দেখে নওরীনের চোখে বৃষ্টিপাত। কী ব্যাপার? ঢোক গিলতে গিলতে বলল, ‘কি সুন্দর তুষারপাত হচ্ছে, অথচ ছোট ভাইটি দেখতে পাচ্ছে না।’
ছিঁচকে কাঁদুনে টাইপের মেয়ে শাহীনের একেবারে অপছন্দ। অপছন্দের জিনিসও অনেক দিন ধরে দেখতে দেখতে যেমন দৃষ্টি-সওয়া হয়ে যায়, তেমনটি হলো নওরীনের ক্ষেত্রে। মাস দুয়েক যাওয়ার পর শাহীন আবিষ্কার করতে লাগল এ ছিঁচকে কাঁদুনে মেয়েটার মধ্যে মহার্ঘ্য কিছু সম্পদ আছে। ছোটবেলা থেকে ঢাকায় বড় হওয়ায় তার চালচলনের মধ্যে একটা শার্পনেস আছে। ও জানে কীভাবে একপাশে হেলে একটু ঠোঁট বাঁকিয়ে কথা বললে তাকে আকর্ষণীয় লাগে। কোন কথার পর কীভাবে ভ্রু নাচিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। খুব দ্রুত যেকোনো টপিকস সে ধরে নিতে পারে। স্মার্টলি অনেক বিষয় সে হ্যান্ডেল করতে পারে। বিশেষত ইংরেজি বলার সময় তার সরু দুটো ঠোঁটের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। এই হলুদ মেমটা এত সুন্দর করে ইংরেজি বলা শিখল কোত্থেকে?
যে ছিঁচকে কান্নার জন্য শাহীনের এত বিরাগ, সে আবিষ্কার করল এর উল্টোপিঠে একটা কোমল হৃদয়ের ব্যঞ্জনা লুকিয়ে আছে। এটা সব নারীর মধ্যে থাকে না। যার থাকে তাকে অগ্রাহ্য করা যায় না। একটু একটু করে তাই নওরীনের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে শাহীন। তাকে সময় দেওয়া। ফুট ফরমায়েশে ছোটা। বুকশপে গিয়ে বই বেছে দেওয়াতে সাহায্য করা। ফলে নওরীন একধরনের নির্ভরতা খুঁজে পায় শাহীনের ওপর। শাহীন সেটাকে অবশ্য ভালো লাগা ভেবে নিয়েছিল। সে সেই অনুভূতির পরিপক্বতার অপেক্ষায় ছিল। এর মধ্যে একদিন নওরীন ফিচেল একটা হাসি দিয়ে বলল, ‘লোকটা কেমন রে’? তখনো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ আসেনি। ইয়াহু মেইলই সম্পর্কের গ্রন্থি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। মেইলে আসা ছবি ফটোভিউয়ার দিয়ে দেখাচ্ছিল নওরীন।
: আন্ডারওয়েট। শাহীনের উত্তর।
: থ্যাৎ, ভালো করে দেখে বল। টম ক্রুজের মতো না।
: গাল ভাঙা হলেই টম ক্রুজ, বেশ—
হাসি-ঠাট্টার মধ্য দিয়ে সেদিন ছবি দেখা পর্বের সমাপ্তি ঘটেছিল। শাহীন ভাবেনি নওরীন এ বিষয়ে এত সিরিয়াস। যদি টের পেত, নিজের আপিলটাও রাখত হয়তো। যখন বুঝল, তখন নওরীন এক সপ্তাহের ছুটি পেয়েছে দেশে যাওয়ার জন্য। টম ক্রুজের সঙ্গে তার বিয়ে। রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল শাহীনের। কিন্তু করার কিছু নেই। সে সার্ভিসের মধ্যে আছে। ভার্সিটি লাইফের মতো আবেগ দেখানো যায় না। সামনে ক্যারিয়ারের আকাশস্পর্শী মই। অসতর্ক হওয়া চলবে না।
ঠিক আট দিনের মাথায় ফিরে এল নওরীন। আরও রূপবতী, আরও ঝলমলে হয়ে। সে ঘুরেফিরে শুধু টম ক্রুজের গল্প শোনাত। তার সেন্স অব হিউমার, পারসোনালিটি, পড়াশোনা ইত্যাদি ইত্যাদি। শাহীনের রাগে গা জ্বলে যেত। মাত্র দুই দিন এক রাত একটা পুরুষের সঙ্গে থেকে তার নাড়ি-নক্ষত্র সব জেনে এসেছে। কী বেহায়া মেয়ে গো! শাহীন চাইত মেয়েটিকে এড়িয়ে যেতে। পরে সে আবিষ্কার করল, তার জীবনে নওরীন একধরনের অভ্যস্ততায় পরিণত হয়েছে। সে চাইলেও তাকে আর অগ্রাহ্য করতে পারে না। ফলে সে নিরুত্তাপ হয়ে গেল। চাবির পুতুলের মতো নওরীনের কর্মকাণ্ডে যান্ত্রিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে যায়।
মাস ঘুরতে না ঘুরতে খবর এল টম ক্রুজ নেই। লিভার সিরোসিসে মর্ত্যলোক ত্যাগ করেছেন। খবরটা পেয়ে নওরীনের ল্যাকমিরাল গ্ল্যান্ড ওপেন হয়ে গেল। শুধু ঝরে ঝরঝর...। ডিপার্টমেন্টে ‘জাতীয় শোক’ ঘোষণা হলো। ফ্যাসিলেটররা এসে দলে দলে শোক জানাতে লাগলেন। জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলের বাকি পাঁচ সদস্য চব্বিশ ঘণ্টা নওরীনদের কটেজের সামনে প্রটোকল দেয়।
অবশ্য মেয়েটার কান্না দেখে শাহীনের গাত্রদাহ পুনরুজ্জীবিত হয়। সহানুভূতির খোলস ছেড়ে ভেতরে ভেতরে খেঁকিয়ে ওঠে। একটা গাবা, গাধার বাচ্চা। নইলে এমন ছেলেকে বিয়ে করে, যে বিয়ের এক মাসের মাথায় অক্কা পায়। তা-ও লিভার সিরোসিসে। এমন না রোড অ্যাকসিডেন্টে কিংবা হার্ট অ্যাটাকে। মেয়েটা এখনো বুঝতে পারছে না, তাকে প্রতারিত করা হয়েছে। লিভার সিরোসিসের রোগী এক মাসে মরে না। তিলে তিলে মরে।
নওরীন স্বাভাবিক হওয়ার পর শাহীন ঠারেঠুরে বহুবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে বিষয়টি। কিন্তু ‘গাবা’ বোঝেনি। মাঝেমধ্যে আবার শাহীনের এমনও মনে হতো, স্রষ্টা বোধ হয় ছিঁচকাঁদুনে মেয়েটিকে খ্যাপানোর জন্য খেলার ছলে এমন আঘাত দিচ্ছেন। খেলা শেষ হয়ে গেলে বিধাতা নিজেই হেসে বলবেন, ‘কাঁদিস কেন রে, আমি তো তোর সঙ্গে দুষ্টামি করলাম।’ কিন্তু বাস্তবে তো তা নয়। মোমের পুতুল মেয়েটাকে চিতার আগুনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শাহীন কোনোভাবেই তা মেনে নিতে পারে না।
একদিন লাইব্রেরি ওয়ার্কের ফাঁকে নওরীনকে শাহীন প্রশ্ন করেছিল, আচ্ছা নওরীন, তোমার চোখে কি এখনো আবিদের চেহারাটা ভাসে।
: সত্যি বলব? নওরীন শরমিন্দায় পড়ে গেল। সব মিলে ৩০ থেকে ৩৫ ঘণ্টা কাটিয়েছিলাম তার সঙ্গে। এর মধ্যে আবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, ফেরার তাড়া। এ অল্প সময়ে একটা অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কি জড়তা কাটে? তবে যতটা দেখেছিলাম, সে ছবির চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। ফর্সা, কিন্তু রোগাটে। সত্যি বলতে কি তার চেহারাটা আমার স্মৃতিতে একেবারে স্পষ্ট নয়। ধোঁয়াটে। কিন্তু তার স্মৃতি হিসেবে একটা গন্ধ আছে আমার বুকের ভেতরে। গেঁথে যাওয়া পেরেকের মতো সেই গন্ধটা সারাক্ষণ ঘাঁই মারে। এই গন্ধ আমাকে কোনোদিন তাকে ভুলতে দেবে না।
: কিসের গন্ধ?
: রাশি রাশি গোলাপ ফুলের। আমাদের বাসররাতের দিনে পুরোটা বিছানা গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। সেই পাপড়ির স্তূপের ভেতরে আমি প্রথম পেয়েছিলাম ভিন্ন একটা উষ্ণতার ছোঁয়া। সেই স্মৃতিই আমার কাছে আবিদ। আমার ভালোবাসা।
এসব কান্নাকাটি হল্লাহাটির মধ্যে জাপানে একটা বছর কেটে গেল। নওরীনের দুর্দান্ত রেজাল্টের সুবাদে তার সুযোগ হয়েছিল পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু সত্যবতী নারী দুই দিনের স্বামীর কবরের টানে দেশে ছুটে এল। কিছুদিন নরসুন্দার তীরে গিয়ে টম ক্রুজের কবরে ল্যাকমিরাল গ্ল্যান্ড দিয়ে জলসেচ দিল। তারপর নিজের দাপ্তরিক কর্মে মনোনিবেশ করল। কেউ এদিকে এলে কবরের ঘাস সাফ করার অফিস আদেশ দিয়ে খালাস হন। এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে শাহীন খেয়াল করেনি। সন্ধ্যায় ডিনার সেরে নিয়েছিল বলে কেউ আর তাকে ডাকলও না।
সকালে মালির হাঁকডাকে তার ঘুম ভাঙল। দরজা খুলে দেখে ব্যাটা কোদাল বেলচা ওয়াটারিং ক্যান সব নিয়ে হাজির। পাটভাঙা সরকারি ইউনিফরম পরনে। যেন বরযাত্রায় যাবে। ফুর্তি ফুর্তি ভাব চেহারায়। শাহীনের ইচ্ছে হচ্ছিল দৌড়ে রাকিবের বাংলোয় গিয়ে তাকে চড়াতে।
রাগটা চেপে সে তৈরি হয়ে নিল।
গোরস্থানে গিয়ে দেখল বড় একটা তালা ঝুলছে গেটে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর কাউকে পাওয়া গেল না। শাহীন ভাবছিল ফিরে যাবে। কিন্তু মালি সোবহানের উৎসাহ বেশি। সে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকল। কোদাল বেলচা ভেতরে রেখে দেয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে টেনে শাহীনকে ভেতরে ঢোকাল। ঢোকার পর বুঝল কাজটা স্রেফ বোকামি হয়েছে। কারণ গোরস্থানের পেছনের দেয়াল ভাঙা। একটু ঘুরে এলেই অনায়াসে ভেতরে ঢোকা যেত। এত ক্যারিকেচারের প্রয়োজন ছিল না।
যাই হোক, নওরীনের দেওয়া লোকেশনমতো কবরটা খুঁজে পেতে কষ্ট হলো না। পুরোটা কবর ঘাসে ছেয়ে গেছে। ছনের মতো ঘাস। গোলাপগাছের নামগন্ধ নেই। নামফলক ভেঙেচুরে একাকার। শাহীন দ্বিধায় পড়ে গেল। নওরীনকে ফোন দিল। নওরীন বলল একটা টিউবওয়েল আছে, তার ঠিক উল্টো দিকে। শাহীন টিউবওয়েল পেয়ে গেল। তার অনুসন্ধান সঠিক।
অবশ্য নির্দেশের অপেক্ষায় বসে রইল না সোবহান। সে যেন আলাস্কার খনির দেখা পেয়ে গেছে। এখন কথা বলে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। কোদালের আঁচড় দিয়ে ঘাস পরিষ্কারে নেমে পড়ল। এমন সময় সাপ দেখার মতো চমকে গেল শাহীন। ঘাসের ভেতরে পুরোনো একটা গোলাপগাছ। গাছের ডালপালা দেখে বোঝা যাচ্ছে বেশ বয়স হয়েছে। কয়েকটি কুঁড়ি এসেছে বিক্ষিপ্তভাবে। সোবহান গোলাপের কাঁটায় রক্তাক্ত হয়ে চেঁচিয়ে উঠল, ‘মরার গুলাপ গাছ, এই জঙ্গলার ভেতরেও তোর নিস্তার নাই।’
আরেকটু ঘাস সরাতেই দেখা গেল লাল টকটকে একটা গোলাপ ফুটে আছে। গোলাপটা চোখে পড়তেই তীব্র একটা গন্ধ ভারী করে দিল বাতাস। রাশি রাশি গোলাপের গন্ধ।
শাহীন বুঝল এই গন্ধটার কথা সেদিন বলেছিল নওরীন। এই গন্ধের গ্রন্থিতেই বাধা পড়ে আছে দুটো হৃদয়।