ট্রাম্পকে অভিশংসন প্রশ্নে ডেমোক্র্যাটদের তদন্ত কমিটি
ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিশংসনযোগ্য অপরাধ করেছেন কি না, তা তদন্তে কমিটি করেছে ডেমোক্র্যাটরা। আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আনুষ্ঠানিকভাবে এই তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ট্রাম্প ফোনালাপে সাহায্য চেয়েছিলেন।
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
অনৈতিক কিছু করার কথা ট্রাম্প অস্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটদের তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।
ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে জোর সমর্থন রয়েছে। তবে তদন্তের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সিনেটে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাব উঠলে তা পাস হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনালাপ নিয়ে ট্রাম্পকে ঘিরে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে বাগ্যুদ্ধ শুরু হয়েছে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের।
ট্রাম্পের দাবি, বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ইউক্রেনের একটি গ্যাস কোম্পানির ব্যাপারে সে দেশের সরকার যে তদন্ত শুরু করে, তা বন্ধে তিনি চাপ প্রয়োগ করেন।
অভিযোগ উঠেছে, গত ২৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সময় তাঁকে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তাঁর ছেলের সম্ভাব্য দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তে চাপ দেন।
এ ঘটনায় বাইডেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ট্রাম্প আগেও তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। কিন্তু এবার তিনি সীমালঙ্ঘন করেছেন।
ট্রাম্প-ভলোদিমির ফোনালাপ নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কিছু জানা যায়নি। গোয়েন্দা বিভাগগুলোর সমন্বয়কারী পরিচালকও হোয়াইট হাউসের নির্দেশে কিছু বলতে রাজি হননি।
বিষয়টি এখনো স্পষ্ট না হলেও ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত না করলে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিতের হুমকি দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপে বাইডেন প্রসঙ্গ এনেছেন বলে স্বীকার করেছেন। তবে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সামরিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়েছেন এ জন্য যে, যাতে ইউক্রেনকে সহায়তায় ইউরোপ এগিয়ে আসে।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্প আইন ভঙ্গ করেছেন। তিনি তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছেন।
ন্যান্সি পেলোসি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন, যা তাঁকে রাজনৈতিক ফায়দা দেবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
পেলোসির ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফোনালাপ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ এল। এই কমিটি ঠিক খতিয়ে দেখবে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিশংসনযোগ্য কোনো অপরাধ করেছেন কি না।
ঘোষণায় পেলোসি আরও বলেন, যে ছয়টি কংগ্রেসনাল কমিটি ট্রাম্পের অন্যান্য বিষয়গুলো তদন্ত করছে, তারা অভিশংসন তদন্ত কমিটির সঙ্গে কাজ করতে পারবে।
প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। তাই অভিশংসনের বিষয়ে তদন্তের পর কমিটি কোনো প্রস্তাব করলে তা প্রতিনিধি পরিষদে সহজেই পাস হয়ে যাবে। এরপরই তা যাবে সিনেটে। সেখানে প্রস্তাব পাসের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ভোট লাগবে। তবে সিনেটে রয়েছে রিপাবলিকানদের আধিপত্য। ফলে সেখানে ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাব পাসের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ইউগভের এক জরিপে বলা হয়েছে, ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যদি প্রমাণ হয়, তবে ৫৫ শতাংশ মার্কিনি ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে সমর্থন দেবে।