জীবনের সব সঞ্চয় ফিরে পেলেন বৃদ্ধা
নিউইয়র্ক সিটির বাণিজ্যিক শহর ম্যানহাটনে বসবাসরত ৭৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত নারী বিনাকর গেল খাবার হোটেলে ভুলে চার লাখ ৪২ হাজার ডলারের ক্যাশিয়ার চেক রেখে চলে যান। সারা জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। অ্যাপার্টমেন্ট কেনার জন্য এই অর্থ জমা করেছিলেন তিনি। অবশেষে হোটেলের কর্মী ও মালিকের সহযোগিতায় সেই চেক ফিরে পেয়েছেন তিনি।
নতুন একটি কন্ডোমনিয়াম অ্যাপার্টমেন্ট কেনার চেষ্টা করছিলেন বিনাকর। ৪ মে দুপুরে একটি অ্যাপার্টমেন্টটি দেখার সময় নির্ধারণ ছিল। এর আগে দুপুরে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ম্যানহাটনের ইস্ট হারলেম এলাকায় পিজারিয়া ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খান তিনি। অ্যাপার্টমেন্ট দেখার তাড়া থাকায় দ্রুত দুজন রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করেন। এ সময় ভুলে খামে ভরা সিটি ব্যাংকের চার লাখ ৪২ হাজার ডলারের ক্যাশিয়ার চেকটি টেবিলে রেখে চলে যান। কিছুদিন আগে সারা জীবনের সঞ্চয় করা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি করে ওই ডলারের ক্যাশিয়ার চেকটি করেছিলেন।
ক্যাশিয়ার চেক নগদ অর্থের মতো। উদ্দেশ্য নতুন একটি কন্ডো অ্যাপার্টমেন্ট কিনবেন বিনাকর। দুপুরের খাবার খেয়ে মেয়েসহ তিনি যখন রিয়েল স্টেট অফিসে পৌঁছান, তখনই বিড়ম্বনাটি টের পান। চেক নেই। মা–মেয়ে সঙ্গে থাকা হাত ব্যাগ খোঁজাখুঁজি করে কোথাও পেলেন না। ফিরে যান অ্যাপার্টমেন্টে, কিন্তু হদিস নেই। ব্যাংক থেকে বের হয়ে যেখান থেকে কফি নিয়েছেন সেখানেও ছুটে যান, পাননি। মা–মেয়ে পাগলের মতো এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন।
পুরো জীবনের সঞ্চয় হারিয়ে পাগলপ্রায় বিনাকর। ছুটে যান ইউনিয়ন স্কয়ারে সিটি ব্যাংকের শাখায়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, চেকটি হারিয়ে গেছে। তিনি তাদের নতুন চেক ইস্যু করার অনুরোধ করেন। যেহেতু ক্যাশিয়ার চেক, তাই নতুন চেক ইস্যু হবে না। অপেক্ষা করতে হবে তিন মাস। এর মধ্যে কেউ চেকটি ক্যাশ না করলে তবেই নতুন চেক ইস্যু হবে। কারণ ক্যাশিয়ার চেক তখনই দেওয়া হয়, যখন চাহিদা অনুযায়ী সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে থাকতে হয়। চাহিদা অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয়ী হিসাব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ক্যাশিয়ার চেক বা সার্টিফায়েড চেক একই।
রেস্টুরেন্টের ওয়েটার আরমান্ডো খাবার টেবিল পরিষ্কার করতে গেলে দেখেন একটি খাম পড়ে আছে। যেহেতু একটি ব্যাংকের খাম তাই খামটি খুলে দেখেই চমকে উঠেন। প্রায় অর্ধ মিলিয়ন ডলারের ক্যাশিয়ার চেক। সঙ্গে সঙ্গে রেস্টুরেন্ট মালিক ফ্রেংক ব্রিজাকে বিষয়টি জানান। চেকটি মালিকের কাছে জমা দেন। তাদের ধারণা মালিক কোটিপতি। এত তাড়া নেই। দুদিন পার হওয়ার পরও যখন কেউ আসছে না, তখন রেস্টুরেন্ট মালিক নিউইয়র্ক হোম টাউন নিউজ পেপারে কল দিয়ে মেসেজ পাঠান। চেকের মহিলা বিনাকর এসে চেকটি নিয়ে যান। নগদ চেকটি ফিরে পাওয়ার পর আনন্দে উদ্বেলিত বিনাকার বলেন, ‘আমি বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলাম। জীবনের সঞ্চয় ফিরে পেয়ে মা–মেয়ে রেস্টুরেন্টের কর্মী আরমান্ডো ও মালিক ফ্রেংককে ধন্যবাদ জানান।’