ভেনেজুয়েলায় ট্রাম্প-পুতিন যা চান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে দীর্ঘ সময় টেলিফোনে কথা হয়েছে। ভেনেজুয়েলা প্রসঙ্গেও তাঁরা আলোচনা করেছেন। আলোচনার পরে ট্রাম্প দাবি করেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন তাঁকে জানিয়েছেন, রাশিয়া ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে আগ্রহী নয়। সেখানে যাতে ভালো কিছু একটা হয়, তিনি শুধু তা–ই চান। ট্রাম্প বলেন, ‘আমিও ঠিক তা–ই চাই।’
এর আগে অবশ্য উল্টো কথা বলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার রেডিও সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, রাশিয়া ভেনেজুয়েলায় হস্তক্ষেপ করছে। এতে রুশ-মার্কিন সম্পর্ক বিপদগ্রস্ত হতে পারে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে টেলিফোন আলাপচারিতায় পম্পেও ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরার প্রতি রাশিয়ার অব্যাহত সমর্থন বন্ধ করার জন্য আবেদন করেন।
পম্পেও ওই সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ভেনেজুয়েলায় হাজার হাজার রুশ ও কিউবান সামরিক সদস্য মাদুরো সরকারের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। মাদুরা নন, তাঁরাই সে দেশের যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনও ভেনেজুয়েলায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। গতকাল শুক্রবার ট্রাম্প-পুতিনের টেলিফোন আলাপের আগে এক টুইটে তিনি অভিযোগ করেন, শুধু রাশিয়া ও কিউবার সমর্থনেই মাদুরো সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। বিদেশি হস্তক্ষেপ না থাকলে ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হতো।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলতে বোল্টন সম্ভবত ভেনেজুয়েলার আইন পরিষদের প্রধান হুয়ান গুয়াইদোর সামরিক বাহিনীর প্রতি অভ্যুত্থানের কথা বুঝিয়েছেন। গুয়াইদো নিজেকে ভেনেজুয়েলার অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন। গত সপ্তাহে গুয়াইদো একদল সামরিক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সে দেশের সেনাবাহিনীকে অবিলম্বে মাদুরোকে উৎখাতের আহ্বান জানান। বেশির ভাগ ভাষ্যকারই গুয়াইদোর সেই আহ্বানকে ‘ক্যু’র চেষ্টা বলেই ব্যাখ্যা করেছেন। অল্প কিছুসংখ্যক সেনা কর্মকর্তা ছাড়া কেউ তাঁর ডাকে সাড়া দেননি।
একাধিক মার্কিন সূত্র বলছে, গুয়াইদো সামরিক বাহিনীর প্রতি অভ্যুত্থানের যে ডাক দিয়েছেন, তার প্রতি ওয়াশিংটনের সমর্থন রয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন গুয়াইদোর সমর্থনে সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা বাতিল করেনি। পত্রিকাটি পম্পেওর বক্তব্য উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার চলতি সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। কিন্তু প্রয়োজনে সামরিক হস্তক্ষেপে পিছপা হবে না।
জন বোল্টনও একই ভাষায় কথা বলেছেন। গত বুধবার একটি টিভি চ্যানেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বরাবরই বলেছেন, ভেনেজুয়েলার ব্যাপারে সব প্রস্তাবই বিবেচনাধীন রয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। কিন্তু তাই বলে সে দেশের সরকার গুয়াইদোকে হেনস্তা করবে, তা আমরা কিছুতেই হতে দেব না।’
বোল্টন অভিযোগ করেছেন, মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে গুয়াইদোর আহ্বানে সে দেশের সেনাবাহিনী সাড়া দেয়নি। এর পেছনে রাশিয়া রয়েছে। একই সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, মাদুরো কিউবার উদ্দেশে রওনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। এ জন্য একটি উড়োজাহাজ প্রস্তুত ছিল। কিন্তু মস্কো দেশ ছাড়ার বিরুদ্ধে পরামর্শ দিলে তিনি সিদ্ধান্ত বদলান।
বোল্টন আরও জানান, ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদরিনো, প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের প্রধান হেরনান্দেজ দালা ও দেশের প্রধান বিচারপতি মাইকেল মরেনো পক্ষত্যাগ করে গুয়াইদোর প্রতি সমর্থন ঘোষণায় প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা মাদুরোর সঙ্গেই থেকে যান।