উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশিদের সর্ববৃহৎ ফেডারেশন, ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা)। বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করা বাংলাদেশিদের পরিচালিত সংগঠনগুলোর সম্মিলিত একটি ফেডারেশন হলো ফোবানা। এটি হলো সংগঠনের সংগঠন।
১৯৮৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনের মাধ্যমে ফোবানার যাত্রা শুরু হয়। গত ৩২ বছরে বিভিন্ন রাজ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফোবানা সম্মেলন। এ বছর ৩৩তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে নিউইয়র্ক শহরে। ৩৩তম ফোবানা সম্মেলনের আয়োজক সংগঠনের দায়িত্ব পেয়েছে নিউইয়র্কের পুরোনো জনপ্রিয় নাট্য সংগঠন ড্রামা সার্কেল।
এর আগে নিউইয়র্ক নগরীতে একাধিক বার ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও এবারের আয়োজনটি, সম্মেলনের ভেন্যু, অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দর্শকের সংখ্যা সব দিক থেকেই অতীতের সব আয়োজনকে ছাড়িয়ে যাবে।
এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে নিউইয়র্ক লং আইল্যান্ডের বিখ্যাত নাসাউ কলিসিয়ামে। ১৭ হাজার আসন বিশিষ্ট এই ইনডোর ভেন্যুটি আমেরিকার সেরা ১০ টি ভেন্যুর একটি। আমেরিকার অন্যতম সেরা এই ভেন্যুতে বাংলাদেশিরা প্রথমবারের মতো কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে যাচ্ছে এবং সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির উপস্থিতিতে আমেরিকার মূলধারায় ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে।
সম্মেলনের অফিশিয়াল হোটেল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে লং আইল্যান্ডের ম্যারিয়ট হোটেল। যেখানে ৬০০ টি রুম সম্মেলনের জন্য ব্যবহার করবেন বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা অংশগ্রহণকারী অতিথিরা। এ ছাড়া ভেন্যুর পাশেই আরও ২টি হোটেল, শেরাটন ও হায়াতেও সম্মেলনের জন্য রুম বুকিংয়ের সুবিধা থাকবে।
আমেরিকার ১৭ রাজ্য থেকে ৭৬টি সংগঠন অংশ নেবে এবারের সম্মেলনে। সংগঠনগুলোর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছাড়াও বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের
প্রায় দুই ডজন তারকা শিল্পী অংশ নেবেন সব অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে বেশ কজন সাংবাদিক, সংস্কৃতি কর্মী, বুদ্ধিজীবী ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তিদের।
নিউইয়র্কের মেয়র, গভর্নরসহ আমেরিকার মূলধারার ৩০ জনেরও অধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে এবারের ফোবানা সম্মেলনের মূল অনুষ্ঠানে।
এবারের সম্মেলনের স্লোগান হলো ‘Our Children Our Pride’. আমেরিকায় ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে
ওঠা আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নিয়েও রয়েছে বেশ কিছু পরিকল্পনা। মূলধারায় বাংলাদেশি আমেরিকান হিসেবে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছে, কিংবা বিশেষ স্থান করে নিয়েছে এমন সেরাদের সেরা ১০ জনকে
বিশেষ সম্মাননা জানানো হবে। এ ছাড়া Youth Conference নামে বিশেষ সেশন পরিচালনার মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অন্তর্ভুক্তি থাকবে এবারের সম্মেলনে।
সম্মেলনে স্থান পাবে ৮টি বিষয় ভিত্তিক সেমিনার, কাব্য জলসা, সাহিত্য আড্ডা। ফোবানা ২০১৯ মিউজিক আইডল ও মিস ফোবানা ২০১৯ নামে দুটি ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবার।
বিজনেস নেটওয়ার্কিং লাঞ্চ নামে একটি হাই প্রোফাইল বিজনেস সেশনে অংশ নেবে আমেরিকার বিভিন্ন চেম্বার ও বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরা, অংশ নেবে বাংলাদেশ থেকে বেশ কজন ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে বসবাস করা বেশ কজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীও অংশ নেবে এ পর্বে।
সম্মেলনের মূল এলাকার সঙ্গেই ৬০ হাজার বর্গফুটের বিশাল এক্সপো সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে ফোবানা এক্সপো, যেখানে থাকবে ১৫০টি স্টল। পৃষ্ঠপোষকদের স্টল ছাড়াও খাবার, বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্যের স্টলসহ স্বাস্থ্য সেবা, জব ফেয়ার, আবাসন ফেয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের স্টল থাকবে ফোবানা এক্সপোতে।
নিউইয়র্কে ৩৩তম ফোবানা সম্মেলন তিনদিনে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশিদের পদচারণায় মুখরিত হবে এবং আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সর্ববৃহৎ মিলনমেলায় পরিণত হবে সেই প্রত্যাশা আমাদের।