ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল আদালত অভিবাসন সংক্রান্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয়প্রার্থনা সংক্রান্ত মামলার শুনানির জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করতে হবে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এমন একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা কমাতে নেওয়া নানা কর্মসূচির মধ্যে এটিও একটি।
অধিকাংশ অভিবাসনপ্রত্যাশী মধ্য ও ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে এসে আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে ভিড় করছেন। এক দশকের মধ্যে গত মাসে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, অভিবাসী সুরক্ষা নীতির (এমপিপি) আওতায় তারা কিছু অভিবাসনপ্রত্যাশীকে মামলার শুনানির জন্য আমেরিকার বাইরে মেক্সিকো সীমান্তে অপেক্ষা করতে হবে—এমন ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি, এমপিপির প্রয়োজন রয়েছে। কারণ শুনানির অজুহাতে অনেক বেশি আশ্রয়প্রার্থী আমেরিকায় অবস্থান নেন। তাঁদের আবেদন খারিজ না হওয়া পর্যন্ত এবং অভিবাসনবিষয়ক বিচারক তাঁদের ফেরত পাঠানোর আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত—কখনোই তাঁরা আদালতের শুনানিতে হাজির হন না।
বিচারক সিবর্গ বলেন, অভিবাসন ও জাতীয়করণ আইন সরকারকে এই ক্ষমতা দেয়নি যে, সরকার চাইলে আশ্রয়প্রার্থীদের মেক্সিকোতে ফেরত পাঠিয়ে দেবে। শরণার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা বা স্বাধীনতা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই নীতিতে যথাযথ সুরক্ষা দেওয়া হয়নি।
৮ এপ্রিল আদেশ নিয়ে মার্কিন বিচার বিভাগের মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউসও তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, এটি ‘আমেরিকার অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত’। আদালতের এই আদেশে অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অবশ্য সরকার এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের শিশুসন্তানদের আটককেন্দ্রে রাখার সময়সীমা নিয়ে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। তাই অনেক পরিবারকে মুক্ত করে অভিবাসন মামলায় আদালতের শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় এতটাই মামলার রয়েছে যে, আদালতের সিদ্ধান্ত পেতে বছরের পর বছর পার হয়ে যায়।
মেক্সিকো সীমান্তে আটকে পড়া হাজার হাজার মেক্সিকান পরিবার কারাগারে বন্দী। শিশু, গর্ভবতী নারীও রয়েছে। বন্দী অবস্থায় তারা আশ্রয় প্রার্থনা করলেও অভিবাসনের কঠোর নীতিমালার কারণে তারা ছাড়া পাচ্ছে না। অভিবাসন মানবাধিকার গ্রুপগুলো আইনি নানা পদক্ষেপ নিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
এদিকে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সাবেক সেক্রেটারি যে কয়েকটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে, যে সব মেক্সিকান সীমান্তে আটো পড়েছে, তাদের মেক্সিকো ফেরত পাঠানো। সেখান থেকে তারা আমেরিকার দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৈধভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করবে। তারপর তাদের আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করে স্থানীভাবে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে।
মানবাধিকার কমিশন ক্যালিফোর্নিয়ার ফেডারেল আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সব অভিবাসীর ঐক্য প্রক্রিয়ায়, ট্রাম্পের এ ধরনের অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নিত্যনতুন ইমিগ্রেশন নীতিমালার কারণে অভিবাসীরা উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য অনেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেয়ে জামাই জার্ড ক্রুশনারকে দায়ী করছেন। অভিবাসী মনে করেন, ক্রুশনারের পরামর্শেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসনবিরোধী আচরণ করছে।