মার্কিন ফেডারেল আদালত ২১ মার্চ আমেরিকায় আশ্রয়প্রার্থীদের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা প্রাথমিক শুনানিতে ব্যর্থ হলে সরকার তাদের দ্রুত ডিপোর্ট বা বিতাড়ন করবে। তবে আদালতের বিধি অনুযায়ী এসব আবেদনকারী আপিল করতে পারবে।
১৯৯৬ সালে কংগ্রেসে গৃহীত এক আইনে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভের আশায় রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত করেছিল। তারপরও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীরা অভিবাসন কর্মকর্তা ও বিচারকের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে কেন্দ্রীয় সরকারের পুরোনো আইনকে আরও সীমিত করা হয়েছে। প্রথম দফায় মামলায় হেরে গেলে আশ্রয়প্রার্থীদের সরাসরি দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তবে নবম সার্কিটের আপিল আদালত থেকে বলা হয়েছে, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ আমেরিকার সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী।
কোন ব্যক্তির আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন বৈধ, উপযুক্ত ও অর্থপূর্ণ কোন কারণে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে কি না, তা জানার জন্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ থেকে বাদি কিছু পদ্ধতিগত সুরক্ষা পেতে পারেন। আশ্রয় আবেদনের প্রথম জিজ্ঞাসায় উন্নীত না হলে আশ্রয়প্রার্থীকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ না দেওয়া সাংবিধানিকভাবে অন্যায়। ক্ষমতাসীনরা হাজার হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে কেন্দ্রীয় বিচার ব্যবস্থায় পর্যালোচনার অধিকার দিতে পারে।
আইনি বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে আপিল করা যেতে পারে। সিভিল লিবার্টি ইউনিয়ন বলছে, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে আশ্রয়প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। সিভিল লিবার্টি ইউনিয়নের অভিবাসী প্রকল্প উপপরিচালক লি গেলারনটের মতে, ফেডারেল কোর্টের এমন সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থিতার আবেদনের ঐতিহাসিক ও ব্যবহারিক গুরুত্বকে ছোট করে তুলবে।
বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্রয়প্রার্থীদের নিজেদের পক্ষে কথা বলার স্বাধীনতা অবশ্যই ফেডারেল কোর্টে থাকতে হবে।
শ্রীলঙ্কার বিজয় কুমার সংখ্যালঘু হিসেবে আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন। তিনি আমেরিকার সিভিল লিবার্টি ইউনিয়নের অভিবাসী রাইটস প্রকল্পের সহযোগিতায় আশ্রয় প্রার্থনা করেন। শ্রীলঙ্কার সেনা কর্মকর্তাদের হাতে তিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন। তিনি মেক্সিকোর ইয়েসিড্রোর সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করেন। কিন্তু অ্যাসাইলাম কর্মকর্তাসহ ইমিগ্রেশন বিচারক তাঁর আবেদনকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেননি। বিজয় কুমারকে আমেরিকা থেকে বহিস্কার করা হয়। ফলে বিজয় কুমারের এখানেই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থনার আইনি লড়াই যাত্রা শেষ হয়ে যায়। পরে তিনি আমেরিকার উচ্চ আদালতে আপিল করেন ।
এখন চাইলে আমেরিকার নবম সার্কিটের সুবিধা পেতে ফেডারেল কোর্টের অধীনস্থ জেলা আদালতগুলোর মাধ্যমে আপিল করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে আমেরিকায় আশ্রয়প্রার্থীদের সংবিধানের ‘সাসপেনশন ধারা’ অনুযায়ী আদালতের হাবিয়াস কর্পাস (Habeas corpus)পর্যালোচনার জন্য আবেদন করার সুযোগ আছে।
তারপরও ফেডারেল কোর্টের এমন দ্রুত ফেরত পাঠানোর বিষয়কে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে।