জ্যাকসন হাইটসে দু দিনব্যাপী একুশের গ্রন্থমেলা
প্রতি বছরের মতো এবারও ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত প্রবাসী লেখকদের প্রকাশিত বই নিয়ে উদ্যাপন করা হয় মুক্তধারা একুশে গ্রন্থমেলা। উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বিপুলসংখ্যক লেখক-পাঠকদের উপস্থিতিতে এ গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করেন লেখক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান।
জ্যাকসন হাইটসে আয়োজিত এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সাজানো হয় প্রবাসে থাকা ৪০ জন লেখকের নতুন প্রকাশিত বইয়ের পরিচিত পর্ব নিয়ে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন লন্ডন থেকে আগত বিশিষ্ট কবি ও লেখক শামীম আজাদ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই ফিতা কেটে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন লেখক সেলিম জাহান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন লেখক হাসান ফেরদৌস, সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ, লেখক ফাহীম রেজা নূর, বিশিষ্ট লেখক ও প্রাবন্ধিক ড. আবেদীন কাদের, সাংবাদিক কৌশিক আহমেদ, শিল্পী তাজুল ইমাম, কবি ফকির ইলিয়াস, কবি শামস আল মমীন, লেখক রানু ফেরদৌস, কবি আলম সিদ্দিকী, কবি স্বপ্ন কুমার, কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি, লেখক পলি শাহীনা, লেখক রোমেনা লেইস, গল্পকার স্মৃতি ভদ্র, পেনসিলভানিয়া থেকে আগত কবি আলী সিদ্দিকী দম্পতি, সংগঠক শুভ রায়, সাংবাদিক শিতাংশু গুহ, লেখক আবদুশ শহীদ, সংগঠক গোপাল স্যানালসহ আরও অনেকে। এ পর্বের আলোচনায় অংশ নেন আলী সিদ্দিকী, পলি শাহীনা, স্মৃতি ভদ্র, আলম সিদ্দিকী, রোমেনা লেইস, শামীম আজাদ, হাসান ফেরদৌস ও সেলিম জাহান।
সেলিম জাহান বলেন, ‘বাংলা ভাষা ও বাংলা বইমেলার জন্য মুক্তধারা নিউইয়র্ক যে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে, তা আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। বিশেষ করে বিশ্বজিত সাহার একক চেষ্টায় নিউইয়র্কে এখন বেশ জাঁকজমক করে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে শুধু বাংলা শিখিয়ে নয়, তাদেরকে যেকোনো ভাষায় যেকোনো মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে হবে। তবেই আমাদের ভাষা ও সাহিত্য টিকে থাকবে।’
হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘ইদানীং দেখি নিজেকে কোনো রকম প্রস্তুত না করেই একজন লেখক বাজারে বই প্রকাশ করে ফেলছেন। এটা ঠিক নয়। লেখককে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। প্রচুর পড়াশোনা করে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয়। আমাদের অবশ্যই প্রচুর লেখক প্রয়োজন; কিন্তু সেই লেখককে প্রস্তুত হতে হবে।’
শামীম আজাদ বলেন, ‘বাংলা ভাষা এখন পৃথিবীব্যাপী ছাড়িয়ে গেছে। প্রবাসের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর লেখক ছড়িয়ে রয়েছেন। তাঁরা তাদের কাজ করে যাচ্ছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রবাসী লেখক বলতে কিছু মানি না। প্রবাসে লেখকেরা থাকেন বিভিন্ন কারণে। প্রবাসী লেখক বললে বলতে হবে বাংলাদেশেও বলতে হবে নোয়াখালীর লেখক, সিলেটের লেখক ইত্যাদি। সত্যি বলতে লেখকদের কোনো ভৌগোলিক সীমায় বেঁধে রাখা যায় না।’
পরে শামীম আজাদ এ বছর বইমেলায় প্রকাশিত তাঁর ‘চূর্ণ কবিতা’ ও ‘কইন্যা কিচ্ছা’ থেকে কিছু কবিতা পাঠ করে শোনান। তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকেই বাংলা পড়তে পারে না। আমাদের উচিত এই বইগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করা। তাতে নতুন প্রজন্ম অনায়াসে আমাদের সংস্কৃতি, দেশ ও সাহিত্য নিয়ে জানতে পারবে।’
নিনি ওয়াহেদ বলেন, ‘যারা প্রবাসে বসে সাহিত্য চর্চা করেন, তাঁদের প্রতি রইল আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আমি বিশ্বাস করি তাঁরাই এই প্রবাস থেকে বাংলাদেশের বড় বড় সাহিত্য পদকগুলো একদিন ছিনিয়ে আনবে।’
কৌশিক আহমেদ বলেন, ‘প্রবাসী লেখকদের কাজও শক্তিশালী। তাঁরা তাঁদের লেখায় সে যোগ্যতা তুলে ধরছেন। প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো লেখার মাধ্যমে পাঠকদের সামনে তুলে ধরছেন।’
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিল্পী তাজুল ইমাম নিউইয়র্কে মুক্তধারার উপস্থিতিতে বাংলা সাহিত্যের বিশ্বায়ন নিয়ে আলোচনা করেন। বক্তব্যের শেষে তাঁর লেখা ও সুর করা ‘আবার জেগেছে কৃষ্ণচূড়া গান’ গানটি পরিবেশন করেন।
মেলার দ্বিতীয় দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মুক্তধারা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় কাব্যপাঠ ও সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা। এতে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন কবি ফকির ইলিয়াস। এতে ‘ভাষার অর্থনীতি ও আমাদের প্রজন্ম’ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন লেখক ড. আবেদীন কাদের। ‘প্রজন্মের মননে ভাষার বীজ’ বিষয়ে কথা বলেন সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ। ‘প্রবাসে বাংলা শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ: অতীত পর্ব’ বিষয়ে আলোচনা করেন মূলধারার রাজনীতিক ও সমাজসেবক হাসান আলী। ‘কবিতার ভাষাচিত্রে সমকালীন বিশ্বপ্রভা’ বিষয়ে কথা বলেন কবি শামস আল মমীন। ‘বাংলা ভাষায় কবিতার শক্তি’ নিয়ে কথা বলেন লেখক নসরত শাহ। ‘প্রবাসে বাংলাচর্চায় সংবাদপত্র’ শীর্ষক আলোচনা করেন ‘সাপ্তাহিক পরিচয়’ সম্পাদক নাজমুল আহসান। ‘বাংলা অনুবাদ সাহিত্য: বিপণন ও বিশ্বপাঠ’ বিষয়ে আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক ও গল্পকার আদনান সৈয়দ। অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ নেন কবি শামস আল মমীন, কবি ফারহানা ইলিয়াস তুলি, কবি আহমেদ ছহুল, কবি আশরাফ হাসান ও কবি সৈয়দ আহমদ জুয়েদ। কবি শহীদ কাদরীর কবিতা আবৃত্তি করেন শিল্পী সেমন্তী ওয়াহেদ।