>যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল এঅ্যান্ডই নেটওয়ার্কের ডকুসিরিজ নির্মাণের জন্য ২০ ঘণ্টার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মনিকা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তাঁর কার্যালয়ে তৎকালীন শিক্ষানবিশ মনিকা লিউনস্কির মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আজও আলোচনা হয়। এ সম্পর্কের কারণে হোয়াইট হাউস থেকে বিতাড়িত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন ক্লিনটন। আর সে সম্পর্কের ইতি ঘটার ২০ বছর পর আজও মনিকা অনুশোচনায় ভোগেন, ব্যথিত হন। যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে শুরু হওয়া ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলনের সময় কথা বলেছেন মনিকা। এবার ক্লিনটনের সঙ্গে সম্পর্কের বিস্তারিত জানালেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন চ্যানেল এঅ্যান্ডই নেটওয়ার্কের একটি ডকুসিরিজ নির্মাণের জন্য ২০ ঘণ্টার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন লিউনস্কি। ডকুসিরিজটির নাম ‘দ্য ক্লিনটন অ্যাফেয়ার’। এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর গত সপ্তাহে মার্কিন সাময়িকী ভ্যানিটি ফেয়ার–এ লিউনস্কি ‘বিদায় লিউনস্কি কেলেঙ্কারি’ শিরোনামে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে লেখা প্রকাশ করেন। ২০ বছর পর এসে ক্লিনটন-মনিকা সম্পর্কের বিস্তারিত প্রকাশের পক্ষে তিনি যুক্তি হিসেবে লিখেছেন, ‘আমার মনে হয় এই (কেলেঙ্কারির) আবরণে নিজেকে ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে ২০ বছর যথেষ্ট সময়।’
ডকুসিরিজটির কিছু অংশ এরই মধ্যে প্রকাশ হয়েছে। এসব পর্বে লিউনস্কি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ক্লিনটনের সঙ্গে তাঁর শারীরিক সম্পর্কের দিনগুলোর কথা বলেছেন। আরও বলেছেন, তাঁরা দুজনই সম্পর্কটাকে গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি।
মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবিসির ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’ অনুষ্ঠানে সম্প্রচার হওয়া সাক্ষাৎকারের একটি পর্বে লিউনস্কি বলেন, ‘আমরা দুজনই সতর্ক ছিলাম। তবে যতটা প্রয়োজন ছিল, ততটা সতর্ক ছিলাম না।’ সাক্ষাৎকারে লিউনস্কি আরও স্মরণ করেছেন, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে বলে ক্লিনটন তাঁকে সতর্ক করেছিলেন। পলা জোনস নামে এক নারী যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করার পর ক্লিনটন ওই সতর্কবাণী দেন লিউনস্কিকে।
সাক্ষাৎকারে লিউনস্কি বলেন, ‘আমি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। নিজের পরিবার নিয়ে এবং সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে কী ঘটবে, তা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলাম।’ ক্লিনটন অবশ্য লিউনস্কিকে সাক্ষ্য দেওয়া এড়াতে হলফনামায় সই করতে বলেছিলেন। লিউনস্কি বলেন, ‘তিনি (ক্লিনটন) বলেননি—শোনো, তোমাকে মিথ্যা বলতে হবে। আবার তিনি এও বলেননি—শোনো সোনা, এটা একটা জঘন্য ব্যাপার হতে চলেছে। কাজেই আমরা সবাইকে সত্য বলব।’
লিউনস্কি পরে ক্লিনটনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে একটি নথিতে সই করেন। ক্লিনটনও শপথ করে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। লিউনস্কির সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে মিথ্যা বলায় ক্লিনটন অবশ্য মার্কিন কংগ্রেসে অভিশংসনের খাঁড়ায় পড়েছিলেন। তবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট শেষ পর্যন্ত তাঁকে হোয়াইট হাউস থেকে বিতাড়িত না করার পক্ষেই অবস্থান নেয়।
ভ্যানিটি ফেয়ার–এ লিউনস্কি লিখেছেন, ‘আমার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন প্রশ্ন করেছেন, আমি কেন আমার জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক এবং দুঃখজনক অধ্যায়টি আবার স্মরণ করছি। তা–ও আবার প্রকাশ্যে, ক্যামেরার সামনে। এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো অতীতকে স্মরণ করা, যা কখনো কখনো বেদনাদায়ক হয়।’