জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনের কারণে ইউনেসকোর ঘোষিত বিশ্বের ৪৯টি ঐতিহ্যবাহী স্থান এখন হুমকির মুখে। এর মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৪২টি ঐতিহ্যবাহী স্থান উপকূলে অবস্থিত। ভূমধ্যসাগর উপকূল এলাকার সাগরের পানির উচ্চতা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় প্রায়শ অকাল বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
জার্মানির কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়, ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বের অনেক সাগর উপকূল এলাকার পানির উচ্চতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাবে। বিশেষ করে ২১০০ সালে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী এলাকায় বন্যার কারণে ৫০ ভাগ এবং সাগর পাড়ের ভাঙন তীব্র হওয়ার কারণে ১৩ শতাংশ ক্ষয়ক্ষতি হবে।
জার্মানির কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান লিনা রেমিন তাঁর গবেষণালব্ধ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানান, বিগত দুই বছর ধরে চালানো গবেষণায় পাওয়া তথ্যউপাত্ত অনুসারে এলাকার ৫০ শতাংশের বেশি ঐতিহ্যবাহী সংরক্ষিত এলাকা সত্যিকারের ব্যাপক হুমকির মুখে আছে। সেসব সংরক্ষিত এলাকা বিলীন হওয়ার আগেই যে সব পদক্ষেপ নিতে হবে, তা হবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ইউনেসকোর অর্থায়নে উপকূলীয় বন্যা রক্ষা প্রকল্পগুলো ক্রমেই অকার্যকর হতে চলছে। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা এসব মূল্যবান ঐতিহ্যসমৃদ্ধ ভবন, সৌধ এবং শত বছরের পুরোনো দেয়াল সংরক্ষণে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। গবেষকেরা উদাহরণ স্বরূপ তুরস্কের ইস্তাম্বুল, নিউইয়র্কের সারাকুস, ইতালির রকি নেক্রোপলিস এলাকা ২১০০ সাল নাগাদ শতভাগ বিপজ্জনক অবস্থার মুখোমুখি হবে বলে ধারণা করছেন। পাশাপাশি অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বৈরুত ও আলবেনিয়া। এসব জায়গায় সাগরপাড়ের ভূমিধসের আশঙ্কা বেড়ে যাবে ৪০ ভাগ। শুধু ঐতিহ্যবাহী স্থানই নয়, জনবসতিও বিলীনের আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
উপকূলীয় বন্যার আশু প্রকোপে ভেনিস নগরের লেগুন বলে খ্যাত খালের পানির উচ্চতা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে যা সর্বোচ্চ অনিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞের মত। ইউনেসকো এই মুহূর্তে আসন্ন এই বিরূপ পরিস্থিতির বিপজ্জনক দিকগুলো সারা বিশ্বের দেশ ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করানোর জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বৈজ্ঞানিকদের মত হলো, এ ব্যাপারে সব ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য সমুদ্রের দ্রুত উচ্চতা বৃদ্ধি ঠেকাতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রতিরোধ পদক্ষেপ গ্রহণে এখনো সময় আছে। সঠিক পরিকল্পনা ও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে এখনো পৃথিবীর শত শত ঐতিহাসিক সংরক্ষিত স্থান রক্ষা করা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরবর্তী পদক্ষেপ কী, আর কীভাবে সে সব পদক্ষেপ আরও বেশি জোরদার করা যায়, তা নিয়ে বিশ্বের বৃহৎ শক্তির দেশসহ সারা বিশ্বের উপকূলীয় দেশগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে সব ধরনের প্রতিরোধ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিবেদনের একাংশে এশিয়া মহাদেশের সাগর তীরবর্তী অনেক দেশসহ অববাহিকা অঞ্চলের দেশের বৃহৎ অংশ সাগরের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়। পাশাপাশি এই অঞ্চলে ভূমিধসের এবং সাগর ও বড় বড় নদ–নদীর তীর বিলীনের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্য অন্যতম বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ। দুনিয়ার সব দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতি ইউনেসকোর সর্বশেষ পরামর্শ হলো, মনুষ্য সৃষ্ট এই বিরূপ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সর্বস্তরের ক্ষতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সময় আর বেশি নেই!