জেবিবিএর দ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে
জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের (জেবিবিএ) নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব আবার প্রকাশ্যে এসেছে। জেবিবিএর এক পক্ষ এবার নতুন কমিটি গঠন করেছে। এর আগে শাহ নেওয়াজ ও মাহবুবুর রহমান টুকুর নেতৃত্বাধীন অংশ দাবি করেছে, তাঁরা জেবিবিএর নির্বাচিত কমিটি। সুতরাং জেবিবিএর নামে অন্য কারও সাধারণ সভা করার অধিকার নেই। কেউ এমন কিছু করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিভক্ত জেবিবিএর একাংশ পালকি পার্টি সেন্টারে সাধারণ সভা ডেকে নতুন কমিটির আবুল ফজল দিদারুল ইসলামকে সভাপতি ও মো. জামান কামরুলকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯ সদস্যের নতুন কার্যকরী কমিটি করেছে। সভায় জেবিবিএর পরিচালনা পর্ষদ ও উপদেষ্টা পরিষদের তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়।
সাধারণ সভায় এই অংশের নেতারা বলেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীদের কাছে জেবিবিএর নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনতে হবে। ব্যবসায়ীরা ভালো থাকলে, ঐক্যবদ্ধ থাকলে কমিউনিটি ভালো থাকে। উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশি তথা দক্ষিণ
এশীয়দের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্ক নগরের জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনের নেতৃত্বে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংকল্প ব্যক্ত করেন নবগঠিত কমিটির কর্মকর্তারা।
কার্যকরী কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুনসুর এ চৌধুরী, সহসভাপতি মোশারফ হোসেন ও মোহাম্মদ এ নমী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ও বিপ্লব সাহা, কোষাধ্যক্ষ সেলিম হারুন, সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল মিয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, সাংস্কৃতিক ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক রাশেদ আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ হোসেন বাদশা, নির্বাহী সদস্য কামরুজ্জামান বাবু, সুবল দেবনাথ, শাহ চিশতী, ইলিয়াস মিয়া, নাজিরুল ইসলাম, সনাতন শীল ও মাসুদ মিয়া।
পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন হারুন ভূঁইয়া, কাজী শামসুদ্দোহা, আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম, ইকবালুর রহিম লিটন, হোসেন সোহেল রানা, রাশেদ আহমেদ, প্রদীপ সাহা, ফাহাদ সোলায়মান, মোহাম্মদ এম জামান, মোস্তাফিজ খন্দকার, জে মোল্লাহ সানী, ড. রফিক আহমেদ, রফিকুল আলম, রুহুল আমিন সরকার, মহসিন ননী, মোহাম্মদ মহসিন, এম রহমান, কাজী মন্টু, মো. পিয়ার প্রমুখ।
উপদেষ্টামণ্ডলীতে রয়েছেন বদরুল হক, ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান, ডা. ইভান খান, কেশব সরকার, এম কে রহমান, সিরাজুল হক কামাল, সারওয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আবদুল হাই জিয়া, আসাদুল হক প্রমুখ।
উপস্থিত সবার সম্মতিতে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন মহসিন ননী, কাজী মন্টু, মহসিন মিয়া, এম রহমান প্রমুখ। এর আগে সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন মহসিন ননী, পরিচালনা করেন আবুল ফজল দিদারুল ইসলাম ও মোশারফ হোসেন।
এ সময় সাধারণ সদস্যদের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো হয়, জেবিবিএর অ্যাটর্নির পরামর্শক্রমে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের এই সভা আহ্বান করা হয় এবং সংগঠনের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারকল্পেই নতুন কমিটি গঠন করা হলো। সাধারণ সদস্যদের পক্ষ থেকে আগের কমিটির বিরুদ্ধে জেবিবিএর তহবিল তছরুপের গুরুতর অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের জবাব দিতে না পারার কারণেই সাধারণ সদস্যদের অজ্ঞাতে একটি পকেট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
তবে অন্যপক্ষের সাধারণ সভার বিষয়ে কথা বলতে ১৪ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন ডাকে শাহ নেওয়াজ-মাহবুবের নেতৃত্বাধীন পক্ষ। জ্যাকসন হাইটসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ পক্ষের নেতারা দাবি করেন, জেবিবিএর নির্বাচিত কমিটি বহাল থাকার পর সাধারণ সভা ডাকারও কোনো সুযোগ নেই। সাধারণ সভা ডাকতে হলে কার্যকরী পরিষদই ডাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে জেবিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খান ছাড়াও মোহাম্মদ মাহবুব এ চৌধুরী, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও বেলাল আহমেদসহ জেবিবিএর কার্যকরী পরিষদের ১৫ জন কর্মকর্তাদের মধ্যে ১০ জন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দুজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ অবস্থান করছেন বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবুর রহমান বলেন, সভাপতি শাহ নেওয়াজ আর সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান টুকুর নেতৃত্বাধীন কমিটিই জেবিবিএর নির্বাচিত ও বৈধ কমিটি। কিন্তু কে বা কারা বা কোনো এক কুচক্রীমহল বেনামে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জেবিবিএর লোগো ব্যবহার করে সাধারণ সভা আহ্বান করেছে। এতে আদালতের আদেশ অমান্য হয়েছে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, জেবিবিএর নির্বাচন ঘিরে ইতিপূর্বে দায়ের করা আদালতের রায়ে জেবিবিএর নাম ও লোগো অন্য কারও ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ভবিষ্যতে যদি কেউ আবার জেবিবিএর নাম ও লোগো ব্যবহার করেন তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভাপতি শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘জেবিবিএর গত নির্বাচন ঘিরে বিগত দিনে যাঁরা মামলার বাদী হয়েছিলেন, তারা জেবিবিএর সদস্য ছিলেন না। আর আদালতের রায় আছে জেবিবিএর নির্বাচিত কমিটি ছাড়া অন্য কেউ জেবিবিএর নাম ও লোগো ব্যবহার করতে পারবেন না। তাই কার্যকরী পরিষদ ছাড়া অন্য কারও সাধারণ সভা ডাকারও কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু গণমাধ্যমে দেখছি কে বা কারা জেবিবিএর নাম ও লোগো ব্যবহার করে সাধারণ সভা আহ্বান করেছে; যা অবৈধ। আমরা এ ব্যাপারে অ্যাটর্নির সঙ্গে কথা বলেছি এবং আগামী দিনে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
শাহ নেওয়াজ বলেন, জেবিবিএর কার্যকরী পরিষদের প্রথম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৩০ অক্টোবর জেবিবিবিএর নির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই দিন জ্যাকসন হাইটসের বেলোজিনো পার্টি হলে এই অভিষেক হবে। এ ছাড়া নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে।
এরপর সাধারণ সম্পাদক টুকু জেবিবিএর নতুন উপদেষ্টা পরিষদের নাম ঘোষণা করেন। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট জেবিবিএর নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। উপদেষ্টারা হলেন জাকারিয়া মাসুদ জিকো, মোহাম্মদ মাহবুব এ চৌধুরী, তারেক হাসান খান, আনোয়ার হোসেন ও অ্যাডভোকেট জাকির এইচ মিয়া। অপরদিকে, ৩০ অক্টোবর জেবিবিবিএ নির্বাচিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম জেবিবিএর একটি নিজস্ব কার্যালয় করতে। কিন্তু নির্বাচন ঘিরে মামলা-মোকদ্দমা আর ব্যবসায়ীদের মধ্যকার অনৈক্যের কারণে কার্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ব্যাহত হয়েছে।’ অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবার জেবিবিএর ভোটার তালিকায় কোনো ভুয়া ভোটার ছিল না। আর যাঁরা ভোটার হননি, তাঁরা তো ভোট দেওয়ার অধিকার রাখেন না। তবে নির্বাচনের আগে আমরা প্রতিপক্ষের কাছে প্রস্তাব রেখেছিলাম, জেবিবিএর সদস্য হতে হলে সবাই মিলে গাইডলাইন (নির্দেশনা) তৈরি করি। কিন্তু সে প্রস্তাবে তারা এগিয়ে আসেনি। আর নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা পরিবর্তন করতে পারেন। শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘বিভক্তিতে আমরা হ্যাপি নই। কিন্তু আমরা বসে থাকতেও পারি না।’ অপর এক প্রশ্নের উত্তরে শাহ নেওয়াজ বলেন, জেবিবিএতে ছোট বা বড় ব্যবসায়ী বলতে কিছু নেই। সদস্য হিসেবে সবার অধিকার সমান।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খান বলেন, সংগঠনকে গতিশীল রাখতে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব পালন করতে হবেই। আর কেউ যদি ঐক্য না চায়, তাহলে তো বিভক্তি থাকবেই।