প্রবাসীদের স্বার্থে তাঁরা যেতে চান সংসদে
বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী আমেরিকাপ্রবাসীর সংখ্যা ততই বাড়ছে। মনোনয়ন পেতে নিজ নিজ দলের নীতি নির্ধারণী কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা। পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করতে দেশে গিয়ে নির্বাচনী এলাকায় কেউ কেউ কাজও শুরু করেছেন।
প্রবাসীরা বলছেন, তাঁদের ঘাম ঝরানো অর্থে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। দেশের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পেছনে তাঁদের অবদান কম নয়। কিন্তু দেশে প্রবাসীদের কোনো মূল্যায়ন নেই। তাঁদের স্বার্থে কথা বলার কেউ নেই। তাই সংসদে বড় দল থেকে প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব থাকলে সরকার অন্তত তাঁদের সুখ-দুঃখের কথা শুনবে।
যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ (জামালপুর-৪), সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ (সিলেট-৪), জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন (সিলেট-১) দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন সম্প্রতি দেশে গিয়ে এলাকায় গণসংযোগ করছেন। বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনে মর্যাদার আসন সিলেট-১। এই আসনে যারা জিতেন তারাই সরকার গঠন করে। এই আসনের বর্তমান সাংসদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন। এক সময় তাঁর পরিবর্তে ভাই আবদুল মোমেন প্রার্থী হবেন বলে ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পর মোমেনসহ কয়েকজন মাঠে নামছেন। তবে আবদুল মোমেন আশাবাদী, সবকিছু বিবেচনা করে দল মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে তাঁকেই মনোনয়ন দেবে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকে আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছি। এবারও চেষ্টা করছি। দল যদি আমাকে ভালো মনে করে মনোনয়ন দেয়, তাহলে অবশ্যই আমি নির্বাচনে প্রার্থী হব।’
দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসছি। নেতা-কর্মী ও গরিব দুঃখী মানুষের পাশে সব সময় পাশে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বৃহৎ পরিসরে দেশের সেবা করতে চাই। তাই দল যদি মনোনয়ন দেয়, অবশ্যই আমি বিজয়ী হব এবং দেশের সেবা করব।’
বিএনপি থেকেও একাধিক আমেরিকাপ্রবাসী প্রার্থী দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র শাখা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) থেকে, তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পরিষদের সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) থেকে, যুক্তরাষ্ট্র শাখা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সোলেমান ভূঁইয়া ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভূঞা) থেকে এবং আরেক সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ সম্রাট নড়াইল-১ (কালিয়া) আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন।
বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মোস্তফা বাবুল ও পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের দুর্দিনে আমরা পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। দল নিশ্চয়ই আমাদের মূল্যায়ন করবে। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী।
সোলেমান ভূঁইয়া বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন। নেতা-কর্মীদের নিয়ে এলাকার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করছেন। আবদুল লতিফ শিগগিরই দেশে যাবেন বলে আশবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আমেরিকায় বসবাস করে দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, আমরা প্রতিবছর দেশে কোটি কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠাই। আমাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বলার কেউ নেই। তাই বড় দল থেকে প্রবাসীদের জন্য মনোনয়নের সুযোগ দেওয়া উচিত। তাহলে আমাদের কথা সংসদের ভেতরে বাইরে আলোচনা হবে।
তবে দেশে নির্বাচন কেমন হবে—এ নিয়ে রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী বা খোঁজখবর রাখেন—এমন প্রবাসীদের মধ্যে আলোচনার অন্ত নেই। অনেকেই মনে করেন, তাঁরা দেশের জন্য কাজ করতে চান। প্রবাসে থেকেও তাঁরা দেশের রাজনীতি করেন। এখন সময় এসেছে মাঠে নামার।