সততা, নিষ্ঠা ও অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে কীভাবে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যায় মানুষ, কীভাবে মজবুত হয় সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থান, কীভাবে বৃদ্ধি পায় সাংসারিক কলেবর ও জীবনের উৎকর্ষ, তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলেন এ কে এম হোসেন। ‘সততা, পরিশ্রম ও আন্তরিকতা’কেই তিনি সাফল্যের মূলমন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করেন। সম্প্রতি কথা হয় শরিয়তপুর তারাবুনিয়ার এ সফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে।
মাত্র ২১ বছর বয়সে ১৯৯০ সালে ‘ওপি-১ ভিসা’ নিয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পা রাখেন এ কে এম হোসেন। আত্মীয়-স্বজন কেউ ছিল না, কেউ ছিল না বিমানবন্দরে গিয়ে সঙ্গে করে নিয়ে আসার। তবুও থেমে যাননি হোসেন। হান্টার কলেজে ভর্তি হলেও দেশে অনেক দায়িত্ব থাকায় আর হয়ে ওঠেনি পড়াশোনা। মনের গভীরে অসীম সাহস ও দৃঢ়তা দিয়ে সেলসম্যান থেকে ট্যাক্সি চালক, ট্যাক্সি চালক থেকে আজ একজন সফল ব্যবসায়ী উঠেছেন তিনি।
জ্যামাইকার হিলসাইড অ্যাভিনিউয়ের ১৭০ নম্বর রাস্তায় তাঁর নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ফ্যামিলি ফার্নিচার’। একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন তিনি এ প্রতিষ্ঠান। অচেনা-অজানা এ দেশে এসে সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার পেছনের গল্প উঠে আসে তাঁর সঙ্গে আলোচনায়। অতীত ফুঁড়ে উঠে আসে অনেক কষ্টের কথা, জীবনযুদ্ধের কথা।
এ কে এম হোসেন জানালেন, আমেরিকায় আসার পর প্রায় ১০ বছর ট্যাক্সি চালক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। শুরু থেকেই তাঁর মাথায় ভিন্ন রকমের একটা কিছু করার চিন্তা কাজ করছিল। কিন্তু ঠিক পেরে উঠছিলেন না। একদিন আসবাব কিনতে গিয়ে, নিজেই উদ্বুদ্ধ হলেন এ ব্যবসায়। অভিজ্ঞতার অভাব থাকায় প্রথমে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে শুরু করেন ব্যবসা। সেটা ২০০৯ সালের কথা। বললেন, ‘২০১১ সাল থেকে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করি। পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সব আসবাব সরবরাহ করতে শুরু করি। কাজের সঙ্গে মিল রেখে তাই প্রতিষ্ঠানটির নাম রেখেছি ফ্যামিলি ফার্নিচার।’
বিভিন্ন দেশের আসবাবপত্র পাওয়া যায় তাঁর প্রতিষ্ঠানে। এ কে এম হোসেন জানান, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইতালি, স্পেন ও ব্রাজিল থেকে আসা আসবাবপত্রই বেশি।’
দাম্পত্য জীবনও সুখের হোসেনের। স্ত্রী দিল আফরোজ ‘লগ অন’ স্কুল বাস কোম্পানিতে এসকর্ট হিসেবে কাজ করছেন। তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে আজমাইন হোসেন। স্ট্যাইভেশনের কৃতি এ ছাত্র বর্তমানে বারুখ কলেজে পড়াশোনা করছে। মেয়ে হাফসা হোসেন ইনডিপেনডেন্ট স্কুল ‘দি বার্লি’তে এবং আজরাফ হোসেন তৃতীয় গ্রেডের ছাত্র।
তাঁর সাফল্যের রহস্য জানতে চাইলে হোসেন বলেন, ‘কোন মন্ত্র-তন্ত্র আমি জানি না। তবে সততা, পরিশ্রম ও আন্তরিকতার কোনো বিকল্প নেই।’
প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য কোন পরামর্শ আছে কি না জানতে চাইলে হোসেন বলেন, ‘নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে মূলধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার পরামর্শ আমি সবাইকেই দিই। মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে সহজে অগ্রসর হওয়া যায় না।’