প্রহরগুলো মোম হয়ে গেল
মহুয়া:
ভালোবাসা দিবসে অসম্পূর্ণ কবিতা,
মন খারাপ, তাই লেখা খারাপ।
কিন্তু বললে না তো, কেমন লাগল
আমার ভালোবাসার কবিতা পাঠ?
সুখেন:
তোমার কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত
প্রতিটি শব্দই আমার কানে স্লোগান
হয়ে যায়, এক সময় বিমুগ্ধ বিস্ময়ে
আবিষ্কার করি, আমি বারবারই তোমার
প্রেমে পড়েছি, তোমাকে ভালোবাসি!
তবে, তার মানে এই না যে ......
মহুয়া:
শুনছি! তারপর?
সুখেন:
তার মানে এই না যে,
তোমাকে না পেলে সংসারত্যাগী
ব্রহ্মপুরুষ হয়ে যাব, অথবা বেছে
নেব পথ আত্মহননের!
মহুয়া:
তাহলে নিশ্চয়ই বলবে তার
সুস্পষ্ট কারণ? যদি থাকে কোনো!
সুখেন:
তার কারণ, ধূলির সন্তান ধূলি
নিয়ে খেলতে জানে,
তার কারণ, জাহান্নামের করিডরে
আমি ঘুমিয়েছি হাজার বছর,
এবং মানুষ মূলতই প্রেমজীবী!
মহুয়া:
আশ্চর্য! এতটা স্বার্থপর আর
আত্ম-প্রেমিক ঠিক কবে থেকে
হয়ে উঠলে তুমি?
‘নার্সিসাস’, নিশ্চয়ই পড়েছ শেলীতে?
এখন ও-নামেই ডাকব তাহলে!
সুখেন:
তোমাকে না দেখে দেখে, যেন আমি
ইদানীং, হ্রদের জলে উবু হয়ে তাকিয়ে
থাকা, সত্যিই এক স্বার্থপর আত্মপ্রেমিক—
নার্সিসাস যার নাম!
মহুয়া:
মনে হচ্ছে, তোমার মতো একজন
নার্সিসাসের পরিণতি এ রকমই হবে
সুধীন দত্তের ভাষায়—
‘আমার মৃত্যুর দিনে কৌতূহলী প্রশ্ন করে যদি
সাধলাম কী সুকৃতি, হব যার প্রাসাদে অমর?
মেনে নিও মুক্ত কণ্ঠে, নেই মোর পাপের অবধি;
সারা ইতিহাস খুঁজে মিলিবে না হেন স্বার্থপর!’’
এরপরও কি তুমি তোমাকে আত্মপ্রেমিক
দাবি করবে?
সুখেন:
হুমমম, আমার একলা পাখি নীড়ে না ফেরা
পর্যন্ত! বলো, কোথায় হারালে তুমি?
মহুয়া:
আমিও কেমন না দেখে দেখে তোমায়,
হয়ে উঠেছি প্রতিশোধ-পরায়ণ। ভাবছি,
তোমার স্বার্থপরতার প্রতিশোধ নেব—
প্রতিশোধ আমি ঠিকই নেব, নিকারাগুয়ার
কবি আর্নেস্তো কার্দেনালের মতো!
সুখেন:
আমার কিন্তু ভয় লাগছে, আজ কি
তবে আমরা দুজন, শুধু প্রতিশোধ আর
স্বার্থপরতার কথাই বলে যাব? বেশ,
এবার তাহলে আর্নেস্তো কার্দেনাল এবং
তোমার—প্রতিশোধের কথাই বল l
মহুয়া:
একদিন তোমার হাতে, ধরা থাকবে
বিখ্যাত এক কবির বই এবং তোমারই
জন্য লেখা কবিতা পড়বে তুমি,
কিন্তু জানতে পারবে না!