মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিনে সাড়ে ছয়টি মিথ্যা বলেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের গোপন আঁতাত নিয়ে তদন্তরত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট মুলার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মুখোমুখি প্রশ্ন করতে চান। তিনি ইতিমধ্যে ৪৯টি প্রশ্ন দিয়েছেন। এগুলো নিয়েই সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। তবে ট্রাম্পের আইনজীবীরা এই ভেবে উদ্বিগ্ন, মুখোমুখি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নির্ঘাত মিথ্যা বলে ফেঁসে যাবেন। তাঁরা চান না ট্রাম্প মুলারের পাতানো এই ফাঁদে পা দেন।

আইনজীবীদের এই উদ্বেগ একদম ভিত্তিহীন নয়। নির্বাচনের আগে থেকেই ট্রাম্প মনের মাধুরী মিশিয়ে অনেক কথাই বলেছেন। এর মধ্যে অনেক কথাই পরে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাঁর সে অভ্যাস বদলায়নি। সাংবাদিক ও ভাষ্যকারেরা প্রেসিডেন্টের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাঁকে সরাসরি ‘মিথ্যাবাদী’ বলার বদলে তাঁর সেই কথাকে অসত্য অথবা সত্যের অপলাপ বলে ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্পের কথিত মিথ্যার হিসাব রেখেছে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা। তারা জানিয়েছে, গত ৪৬৬ দিনে ট্রাম্প মোট ৩ হাজার ১টি মিথ্যা বলেছেন। অন্য কথায়, প্রতিদিন তিনি সাড়ে ছয়টি মিথ্যা বলেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ১০০ দিনে তাঁর মিথ্যা বলার হার ছিল দৈনিক ৪ দশমিক ৯। কিন্তু গত দুই মাসে এই হার প্রায় দ্বিগুণ, দিনে ৯টি মিথ্যা। এমন অনেক মিথ্যা আছে, যা ট্রাম্প বারবার বলেন, পোস্টের হিসাবে ১১৩টি মিথ্যা রয়েছে যা ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন।

সিএনএনের জনপ্রিয় ভাষ্যকার ক্রিস সিলিজা মন্তব্য করেছেন, ডানে-বাঁ মিথ্যা বলেন, এমন কোনো প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে আগে কখনোই ছিল না। জর্জ বুশ অথবা বারাক ওবামা দিনে কতবার মিথ্যা বলেছেন, তার কোনো হিসাব কেউ রাখেনি। তার কারণ, ট্রাম্পের মতো তাঁরা কেউই মিথ্যা বলতে ও সেই মিথ্যা বারবার আওড়াতে অভ্যস্ত ছিলেন না।

ট্রাম্পের এই মিথ্যা বলার প্রবণতার কারণেই তাঁর আইনজীবীরা মুলারের সামনে তাঁকে হাজির করতে চান না। মুলার জানিয়েছেন, ট্রাম্প যদি সাক্ষাৎকারে সম্মত না হন, তাহলে জুরিবোর্ডের সামনে প্রশ্নের উত্তর দিতে তাঁর নামে সমন জারি করা হবে। এমন সমন জারির ক্ষমতা মুলারের রয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

বিল ক্লিনটনের সময় হোয়াইট ওয়াটার কেলেঙ্কারি নিয়ে দায়িত্ব পালনকারী কৌঁসুলি জ্যাক শারমান মনে করেন, এটি আসলে মুলারের একটি কৌশল। চাপ দিয়ে প্রেসিডেন্টকে সাক্ষাতে বসাতে চাইছেন তিনি। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, সমনের কথা তুলে তিনি ট্রাম্পকে বলতে চাইছেন, স্বেচ্ছায় সাক্ষাৎকার না দিলে এই নিয়ে জনসমক্ষে কথা-কাটাকাটি হবে। আইনি ঝামেলাও হতে পারে। তিনি চান বা না চান, কথা তাঁকে বলতেই হবে। অতএব জল ঘোলা না করে স্বেচ্ছায় সেই কাজ করা তাঁর জন্য কম বিপজ্জনক।

সম্ভবত মুলারের এই হুমকির মুখে ট্রাম্পের নতুন উপদেষ্টা আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি সাক্ষাৎকারের বিষয়টি নিয়ে মুলারের সঙ্গে সলাপরামর্শ শুরু করেছেন। বুধবার ফক্স টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, মুলার প্রেসিডেন্টকে যত প্রশ্ন করতে চান, তার জবাব দিতে দুই দিন লেগে যাবে। অত সময় প্রেসিডেন্টের নেই। তিনি বড়জোর ঘণ্টা দুয়েক সময় বরাদ্দ করতে পারেন, তাও প্রেসিডেন্ট যখন সময় খুঁজে পাবেন, তখন। এই মুহূর্তে তাঁর সামনে উত্তর কোরিয়া, ইরান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেসব মিটে গেলে এই নিয়ে ভাবা যাবে।