পুরোটুকু সময় প্রধানমন্ত্রীময়
রাজনীতি বলেন
আর সাহিত্যই বলেন,
সবকিছুর মূল উদ্দেশ্য মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন।
শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ১ ও ৬ নম্বর গ্যালারিতে চলছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের আলোকচিত্র ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে সৃজিত শিল্পকর্মের মাসব্যাপী ‘শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি’ শীর্ষক প্রদর্শনী। ৬ নম্বর গ্যালারিতে ঢুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল্যবান উপরিউক্ত কথাটা পড়লাম। কথাটা পড়ে অনেকক্ষণ ধরে ভাবলাম, রাজনীতি আর সাহিত্য সবকিছু তো মানুষের জন্যই, মানুষের জীবনমান উন্নত না হলে সাধারণ মানুষ রাজনীতি বা সাহিত্য গ্রহণ করার জন্য সময় দেবে না, বরং জীবনমান উন্নয়নের জন্য ব্যস্ত থাকবে। পক্ষান্তরে জীবনমান উন্নত হলে মানুষ রাজনীতি করে দেশকে এবং সাহিত্যের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতিকে বিশ্ব পর্যায়ে নিয়ে যাবে। তাই সব রাজনীতিবিদ ও সব শ্রেণির মানুষের উচিত শুধু নিজেকে নিয়ে না ভেবে প্রধানমন্ত্রীর মতো সব মানুষ ও দেশকে নিয়ে সব সময় ভাবা এবং সবার জন্য কাজ করা।
জাতীয় চিত্রশালার ৬ নম্বর গ্যালারি প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। হেঁটে হেঁটে চিত্রগুলো দেখা শুরু করলাম। কোনো চিত্রে বাংলাদেশের সমুদ্র জয়ের ছবি শোভা পেয়েছে, কোনো চিত্রে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পরিদর্শন করছেন। দেশের উন্নয়নের তথ্য উঠে এসেছে—এমন একটা চিত্রে চমৎকারভাবে বিদ্যুৎ উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সে চিত্রে লেখা রয়েছে, ‘অন্ধকার যুগ পেছনে ফেলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আলোকিত আজ বাংলাদেশ’। বিদ্যুৎ উৎপাদন-৩২০০ মেগাওয়াট, বিদ্যুতের সুবিধাভোগী ৪৭ শতাংশ মানুষ, বিদ্যুতের গ্রাহক ১ কোটি এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র ২৭টি। আরেকটিতে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারীদের জন্য ভাতা এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা চালু করার এবং এ পর্যন্ত কতজনকে সহায়তা করা হয়েছে, সে বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।
পুরো গ্যালারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময়ের বিভিন্ন চিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে চিত্রগুলো দেখছি। চোখে পড়ল গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী রিকশা ও রিকশাচালকের চিত্র এবং ছিটমহলে বৃদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসা আদান-প্রদানের চিত্র।
নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ গড়ছে পদ্মা সেতু। এ সেতুর চিত্র না থাকলে তো গ্যালারিতে অপূর্ণতা রয়ে যাবে। তাই সবদিকে চোখ বুলিয়ে সময়ের সবচেয়ে সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প পদ্মা সেতুর চিত্র খুঁজছিলাম; পেয়েও গেলাম কিছুটা সময় পর। পদ্মা সেতুর চিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলছি, আজ সেতুর চিত্র দেখছি, কয়েকটা দিন পরে তো সেতুর ওপর দিয়ে ভ্রমণ শুরু করবে বাংলাদেশের মানুষ। অজানা এক আনন্দে মন মাতোয়ারা হয়ে গেল।
গ্যালারির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বঙ্গোপসাগরের লোনাপানিতে প্রধানমন্ত্রীর পা ভেজানোর নান্দনিক চিত্রটি। বিভিন্ন দেশ বা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর অ্যাওয়ার্ড ও পুরস্কার গ্রহণের ছবিও আছে।
গ্যালারিতে রয়েছে বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কিছু চিত্র।
গ্যালারির প্রবেশের শুরুতেই রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল ছবি এবং পাশে লেখা—
শুভ জন্মদিন
শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি
লিফট থেকে নামার পর একটা আর্টিফিশিয়াল বটবৃক্ষ চোখে পড়ল, সন্ধ্যার আলোয় বিভিন্ন রঙের বাতির কারণে বৃক্ষের সৌন্দর্য নজর কেড়ে নিচ্ছে সব দর্শকের।
শিল্পকলা একাডেমিতে দেশের উন্নয়নের এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা অনেক বই দিয়ে সাজানো হয়েছে একটি বুক স্টল।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয়েছে কাঠ বা শলাকা দিয়ে বানানো প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতিটি। প্রধানমন্ত্রীকে বা তাঁর প্রতিকৃতি পাশে পেয়ে দর্শকেরা ছবি তুলবেন না, তা কি হয়? ৬ নম্বর গ্যালারিতে প্রবেশ করার আগে তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতির সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে দর্শকদের ব্যস্ততা চোখে পড়ল।
চিত্রশালার ১ নম্বর গ্যালারিও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন চিত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে। তবে এ গ্যালারিতে প্রধানমন্ত্রীর জীবনের সংগ্রামী চিত্রের সংখ্যা বেশি। কালো কাপড়ে মোড়ানো বোর্ডের ওপর ন্যক্কারজনক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার চিত্র দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এমন বর্বরোচিত ঘটনা আর যেন বাংলাদেশে না ঘটে, তাই প্রার্থনা।
প্রতিটি চিত্রের ফ্রেমে লেখা রয়েছে ‘শেখ হাসিনা: বাংলাদেশের স্বপ্নসারথি এবং অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’।
আমরা আজ সমালোচনা সহ্য করতে পারি না এবং ভিন্নমত মেনে নিতে পারি না। অথচ গ্যালারিতে প্রধানমন্ত্রীর এ প্রসঙ্গে মূল্যবান উক্তিটিও চিত্রসহকারে সাজানো রয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে—
‘যদি আলোচিত হতে চাও
সমালোচনাকে ভয় করো না
মনে রেখ—
সমালোচনাও এক প্রকার আলোচনা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের আলোকচিত্র এবং সৃজিত শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হচ্ছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ১ ও ৬ নম্বর গ্যালারিতে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মাসব্যাপী এ চিত্রশালার উদ্বোধন হয়েছে। ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে।