অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ে তিন দিনের কংগ্রেস ঢাকায় শুরু

অসংক্রামক ব্যাধির ওপর প্রথম বৈজ্ঞানিক কংগ্রেস হচ্ছে ঢাকায়। এ উপলক্ষে বিএসএমএমইউতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিএসএমএমইউ মিলনায়তন, ঢাকা, ১৭ অক্টোবর। ছবি: জাহিদ হোসেন খান
অসংক্রামক ব্যাধির ওপর প্রথম বৈজ্ঞানিক কংগ্রেস হচ্ছে ঢাকায়। এ উপলক্ষে বিএসএমএমইউতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিএসএমএমইউ মিলনায়তন, ঢাকা, ১৭ অক্টোবর। ছবি: জাহিদ হোসেন খান

আইসিডিডিআরবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের (বিএমজে) একটি উদ্যোগ ক্লিনিকাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ। ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ঢাকায় আগামী শনিবার থেকে (১৯–২১ অক্টোবর) তিন দিনব্যাপী আয়োজন করছে ‘১ম সায়েন্টিফিক কংগ্রেস অন নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস (অসংক্রামক ব্যাধি)’।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিএসএমএমইউ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্যোগের কথা জানানো হয়। বিএসএমএমইউর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অসংক্রামক ব্যাধি বিষয়ে প্রথম বৈজ্ঞানিক কংগ্রেসের লক্ষ্য হলো, একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষকদের মধ্যে গবেষণা সহযোগিতা জোরদার করা। কংগ্রসের মাধ্যমে অসংক্রামক ব্যাধিবিষয়ক বিভিন্ন কাজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উপস্থাপন ও পরামর্শের সুযোগ থাকছে। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ কংগ্রেস বাংলাদেশে অসংক্রামক ব্যাধি মোকাবিলা করার জন্য নানান ব্যবহারিক কৌশল বিকাশে সহায়তা করবে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) লক্ষ্য ৩.৪—প্রতিরোধ ও চিকিৎসার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের কারণে অকালমৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়তা প্রদান-অর্জনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে।

কংগ্রেসে ৯টি মূল প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়েছে, সেগুলো হলো—
১.
হাইপারটেনশন ও কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ
২.
বাংলাদেশে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ
৩.
স্ট্রোক ও অন্যান্য স্নায়বিক রোগ
৪.
মানসিক স্বাস্থ্য ও নিউরো বিকাশসংক্রান্ত ব্যাধি
৫.
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ
৬.
রিউম্যাটোলজি ও পেশিসংশ্লিষ্ট ব্যাধি
৭.
দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত রোগ
৮.
অনকোলজি এবং
৯.
বাংলাদেশে এনসিডির প্রমাণ: প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ

কংগ্রেসে দেশের ৪০০ জন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য গবেষক অংশ নিচ্ছেন, যেখানে ২০০ অ্যাবস্ট্র্যাক্ট (গবেষণা সংক্ষেপ) জমা পড়েছে। প্রতিটি বিষয়ের অধীনে স্বাধীন জুরিবোর্ড সেরা মৌখিক ও পোস্টার উপস্থাপনার জন্য বিজয়ী নির্বাচন করবেন।

২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুর হার বেড়েছে ৮.৭ শতাংশ (৫৮.৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৬.৯ শতাংশ)। ২০১৫ সালের এক হিসাব অনুসারে, ২৫ বছরের বা তার বেশি বয়সের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশের নাগরিক হাইপারটেনসিভ বা উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এখানে প্রতি ১০ জনের একজনের ডায়াবেটিস আছে। দীর্ঘস্থায়ী ক্রনিক পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) মাত্রা গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে ১৩.৫ শতাংশ। ক্যানসারের প্রকোপও খুব বেশি, ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখের মতো রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত, এ ছাড়া প্রতিবছর নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন প্রায় ২ লাখ ক্যানসার রোগী। বাংলাদেশের কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী দেশে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত, যার মধ্যে প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার রোগী দীর্ঘমেয়াদি কিডনিসংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত।

সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউর উপাচার্য ও কংগ্রেসের চেয়ার অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘সবাই অনুধাবন করেন যে বাংলাদেশের জনগণের উপযোগী ও তথ্যপ্রমাণ নির্ভর কার্যক্রম ও চিকিৎসাই কেবল অসংক্রামক ব্যাধিসংশ্লিষ্ট মৃত্যুহার ও অসুস্থতা হ্রাস করতে পারে। ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের মাধ্যমে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য গবেষকদের মধ্যে গবেষণার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, এবং অসংক্রামক ব্যাধি গবেষণার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করেছে।’

আইসিডিডিআরবির ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেসের প্রধান আলিয়া নাহিদ বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগসম্পর্কিত সচেতনতা ও চিকিৎসার মাত্রা বৃদ্ধি পেলেও আমাদের সামনে এখনো বিশাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশে অপরিণত মৃত্যুহার কমানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ৩.৪ অর্জন করা বেশ বড় চ্যালেঞ্জ। আমি আশা করছি, আমরা প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনে যে গতিতে এগোচ্ছি, তা ধরে রাখতে পারব এবং সবাই একত্রে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।’

আগামীকাল শনিবার (১৯ অক্টোবর) ঢাকার মহাখালীর আইসিডিডিআরবির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে গবেষণাপত্র প্রকাশ করার ওপর কর্মশালার মাধ্যমে শুরু হবে এ বৈজ্ঞানিক কংগ্রেস। কর্মশালাটি পরিচালনা করবেন বিএমজের ক্লিনিক্যাল সম্পাদক মিজ অনিতা জেইন।

রোববার (২০ অক্টোবর) কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে বিএসএমএমইউ শহীদ ডা. মিলন মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং স্বাস্থ্যসচিব মো. আসাদুল ইসলাম।

সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে আগামী সোমবার (২১ অক্টোবর)। সমাপনীতে অতিথি থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব শেখ ইউসুফ হারুন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।

কংগ্রেসের বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে http://www.crplatform.icddrb.org/conferences-copz ওয়েবসাইট থেকে।