বাঙ্গি কেন খাবেন
গ্রীষ্মকালীন ফল ফুটি বা বাঙ্গি। অঞ্চলভেদে নাম পাল্টে কোথাও ডাকা হয় খরমুজ, কাঁকুড় বা বানি। ছোট এবং লম্বাটে জাতকে বলা হয় চিনাল। বাঙ্গি আকারে বেশ বড় হয়। কাচা ফল সবুজ, পেকে গেলে হলুদ রঙের হয়। বাঙ্গির স্বাদ নিয়ে সম্প্রতি নেটিজেনরা দুই ভাগে বিভক্ত। স্বাদে তেমন মিষ্টি নয়। তাই একদল বলছে, ‘এটা কেন খাব?’ আরেক দলের পছন্দের তালিকায় আছে এই হলুদ ফল। সুগন্ধযুক্ত সাধারণ স্বাদের বাঙ্গি কিন্তু পুষ্টিগুণে অনন্য। বাজার এখন ভরপুর গ্রীষ্মের এই ফলে। পুষ্টিগুণে যেহেতু এর জুড়ি নেই, তাই বাঙ্গিকে অবহেলা করা ঠিক হবে না; বরং বাড়তি পুষ্টি পেতে মুখে তুলতে পারেন বাঙ্গি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ফলটি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। দেশে প্রধানত দুই জাতের বাঙ্গি দেখা যায়, বেলে ও এঁটেল বাঙ্গি। বেলে বাঙ্গির শাঁস নরম। খোসা খুব পাতলা, শাঁস খেতে কিছুটা বালু বালু লাগে। তেমন মিষ্টি নয়। অন্যদিকে, এঁটেল বাঙ্গির শাঁস কচকচে, একটু শক্ত এবং তুলনামূলকভাবে মিষ্টি।
বাঙ্গির পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। এটি ভিটামিন সি, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিনসমৃদ্ধ। খাওয়ার আগে আসুন জেনে নেওয়া যাক বাঙ্গির পুষ্টি সম্পর্কে।
বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। তাই মানুষের জন্য, বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য বাঙ্গি বিশেষ উপকারী ফল।
বাঙ্গিতে কোনো চর্বি নেই। যাঁরা দেহের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিশেষ চিন্তায় ভোগেন, তাঁরা এ ফল খেতে পারেন নির্দ্বিধায়। দেহের ওজন কমাতে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বাঙ্গির ভূমিকা অপরিহার্য।
বাঙ্গিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি। বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
বাঙ্গিতে চিনির পরিমাণ রয়েছে খুবই কম, তাই ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন স্বাচ্ছন্দ্যে।
বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পানি, যা গরমে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ আছে, যা খাবার হজম করতে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
গরম ও অতিরিক্ত রোদের জন্য হয় সানবার্ন, সামার বয়েল, হিট হাইপার পাইরেক্সিয়া। বাঙ্গির রস এই অসুখগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
অ্যাসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামান্দ্য, নারীদের হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করতে সাহায্য করে বাঙ্গি। পুরুষের হাড়ও মজবুত হতে সাহায্য করে। মনের অবসাদ দূর করার ক্ষমতাও রয়েছে এ ফলের।
বাঙ্গি ত্বকে বয়সের ছাপ এবং ত্বক কুচকে যাওয়া প্রতিরোধ করে। বাঙ্গি থেঁতো করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। নিয়মিত ব্যবহারে পাবেন উজ্জ্বল–সুন্দর ত্বক পাবেন।
ত্বকের ব্রণের সমস্যা কিংবা একজিমা সমস্যায় যাঁরা ভুগে থাকেন, তাঁদের জন্য বাঙ্গি অনেক বেশি উপকারী। বাঙ্গি ব্লেন্ড করে একটি পাতলা কাপড়ে ছেঁকে রসটুকু বের করে নিন। এই রস আপনি লোশনের মতো ব্যবহার করতে পারেন। এতে ব্রণ ও একজিমার সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন।
ভিটামিন বির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইন্সনিটোল, যা আমাদের নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে। এ উপাদান বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। নিয়মিত বাঙ্গি খেলে চুল হয় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও সুন্দর।
এ ছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য খুব উপকারী বাঙ্গি। নিয়মিত বাঙ্গির শরবত খেলে খাবারে অরুচি, নিদ্রাহীনতা, আলসার ও অ্যাসিডিটি দূর হয়। এবার সিদ্ধান্ত আপনার হাতে, বাঙ্গি খাবেন কি না।