কর্মস্থলেই ইফতারের পর যখন কিছুটা অবসর মেলে, তখন কয়েক দিন ধরে সে সময়টিতে বিভিন্ন অনলাইন শপে সময় কাটাচ্ছেন রাশনা চৌধুরী। কোনো পোশাক বা গয়না পছন্দ হলে নোটবুকে টুকে রাখেন। বাসায় ফিরে পরিবারের সবাই মিলে দেখে চূড়ান্ত করে ফরমাশ দিয়ে দেন। তিনি জানান, এই গরমে যানজট ঠেলে কেনাকাটার ধকল এড়াতে অনলাইনেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
অনলাইন ঘেঁটে দেখা যায়, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে পোশাক–গয়নার ব্র্যান্ডের দোকানও মুঠোফোন বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভেসে বেড়াচ্ছে। আঙুলের ছোঁয়ায় পছন্দসই পণ্যটি পেতে হলে যানজট পেরোতে হবে না, গুনতে হবে না যাতায়াত ভাড়া। নিমেষেই পণ্য পছন্দ করে ফরমাশ দিলে এক থেকে তিন দিনের মধ্যে পণ্যটি হাতে মিলবে। নগদ, বিকাশের মাধ্যমে বা ডেবিট–ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দাম মেটানো যাবে।
তিন মাস আগে বিয়ে করেছেন ঐশী রহমান। আগে শুধু নিজের জন্য কিনলেও এবার ঈদে শাশুড়ির শাড়ি, ননদের সালোয়ার–কামিজ এবং স্বামীর পাঞ্জাবি অনলাইন থেকে কিনেছেন। ঐশী বলেন, অনলাইনে সময় নিয়ে কাপড়ের রং, নকশা দেখা যায়। ভিন্ন ধরনের শাড়ি, কামিজও মেলে।
ফ্যাশন হাউস আড়ংয়ের উপমহাব্যবস্থাপক তানভীর হোসেইন বলেন, অনলাইনে কেনাকাটা এখনো ২ শতাংশের নিচে হলেও পোশাক বা অন্য পণ্য দেখে আউটলেটে এসে কেনাকাটা করেন এমন ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে।
শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে অনলাইন শপ কইন্যা পোশাক তৈরি করে। এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী বাঁধন মাহমুদ জানান, দেশীয় শাড়ির চাহিদা থাকলেও বিদেশি পণ্যের ভিড়ে দেশীয় পোশাকের ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া কিছুটা কঠিন।
নকশাতে বৈচিত্র্য থাকে বলে বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে পোশাক, গয়না, জুতা ও ব্যাগের চাহিদা বেশি বলে জানান কয়েকটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তাঁরা জানান, কর্মজীবী নারী ও তরুণ–তরুণীরা অনলাইন শপের মূল ক্রেতা। অনলাইনে কেনাকাটার অভিজ্ঞতা সব সময় সুখকর নয়। কয়েকজন ক্রেতার অভিযোগ, কখনো পণ্যের গুণগত মান ভালো থাকে না, কখনো ডিসপ্লের পণ্যের সঙ্গে ডেলিভারি পণ্যের মিল থাকে না। আবার কেউ কেউ দাম বেশি রাখে।
ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই–ক্যাব) সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদ বলেন, অনলাইনের বার্ষিক বাজার এখন ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪ সালে এ বাজার ছিল ৪০০–৫০০ কোটি টাকার। বর্তমানে দেড় হাজারের মতো ওয়েবসাইট ও ২০–২২ হাজার ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে কেনাবেচা চলছে।