হাসতে নাকি জানে না কেউ
কে বলেছে ভাই?
এই শোনো না কত হাসির
খবর বলে যাই।
ছোটবেলায় পড়া রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের লেখা ‘হাসি’ কবিতাটির এই চার লাইন এখনো হয়তো অনেকের মনে পড়ে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কবিতার অন্য লাইনগুলোর মতো আমাদের হাসিও বিম্মৃতির গহ্বরে হারিয়ে গেছে। আমাদের প্রথম কথা শেখার আগেই আমরা হাসতে শিখেছি, তারপর আমরা কারণে-অকারণে হেসেছি। এরপর যত বয়স বেড়েছে, আমাদের হাসির মাত্রা কমেছেই শুধু।
মনোবিদ অ্যানি বাড়ৈ বলেন, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দিনে ১০ থেকে ১২ বার হাসেন, সেখানে একজন শিশু দিনে কমপক্ষে শতবার হাসে। শিশু আর পূর্ণবয়স্ক মানুষের মধ্যে হাসির পরিমাণের এত পার্থক্যের কারণ একটাই—‘পারিপার্শ্বিকতা’। শিশুরা সাধারণত মন থেকে হাসে, কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে একজন মানুষ হাসির আগে ভাবতে শুরু করেন। ‘আমার এখানে হাসা যাবে কি?’, ‘আমি যদি এখন হাসি, তাহলে সবাই কী ভাববে?’, ‘সবাই এখানে আমার বড়, আমি হাসলে ভালো দেখাবে কী?’—এমন আরও কত ভাবনাচিন্তা!
হাসি এমন একটা বিষয়, যা কিনা সংক্রমিত হয়; ধরুন, আপনি হাসছেন প্রাণ খুলে, এই হাসি দেখে অন্যের মুখে হাসি ফুটবে না, এটা হতেই পারে না! হাসি তাৎক্ষণিকভাবেই অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম। একাধিক গবেষণায় এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে হাসি নানাভাবে আমাদের শরীরের গঠনে সাহায্য করে। হাসি আমাদের অনেক দিক দিয়ে সুস্থ রাখতে পারে। হাসি সুখ, আনন্দ ও সুস্থতার প্রতীক। হাসি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হাসি মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। হাসি ব্যথা লাঘব করে।
হাসির কিছু উপকারিতা
মানসিক চাপমুক্ত করে: হাসলে মানসিক চাপ কমে যায়। হাসির সময় আমাদের শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ হয়, যা স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত কর্টিজল হরমোনের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে ফেলে। এতে মানসিক চাপ দূর হয় এবং আমাদের হারানো আত্মবিশ্বাসও ফিরে আসে। সুতরাং প্রাণ খুলে হাসুন।
বন্ধন মজবুত করে: যদি দুজন মানুষ একসঙ্গে প্রাণ খুলে হাসতে পারেন, তাহলে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়ার আশঙ্কা বেশ কম। হাসি দলীয় বন্ধন (টিমওয়ার্ক) মজবুত করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: হাসি শরীরে স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং রোগ প্রতিরোধক শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করে। ফলাফল মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায়: হাসার কারণে ফুসফুস প্রসারিত হয়। ফলে আমাদের শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। রক্তের মাধ্যমে ফুসফুসে বিশুদ্ধ অক্সিজেন প্রবেশ করে, যা পরবর্তী সময়ে আমাদের শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে নানান রোগের প্রকোপ কমে যায়।
রাগ কমাতে সাহায্য করে: হাসির মতো কোনো কিছুই এত দ্রুত রাগ প্রশমিত করতে সাহায্য করে না। কোনো সমস্যার মজার দিকটায় নজর দিলে অনেক সময় সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায়। তিক্ততা বা বিরক্তির সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়।
রক্তচাপ কমায়: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, হাসার সময় শরীরে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়, রক্তনালিগুলো প্রসারিত হতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিরা-ধমনির ওপর চাপ কম পড়ে। আর এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমায়। তাই রক্তচাপ কমাতে প্রফুল্ল থাকুন এবং প্রচুর হাসুন।
অনেক সময় আমাদের একা একা সময় কাটাতে হয়। কাজের চাপের জন্য বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের কারও সঙ্গে তেমন সময় কাটানো কিংবা প্রাণ খুলে আড্ডা দেওয়া হয় না। যেহেতু প্রায় সবার হাতের নাগালেই রয়েছে স্মার্টফোন, আপনারা চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন বিভিন্ন হাস্যরসপূর্ণ ওয়েবসাইট। এই সব হাস্যরসপূর্ণ ওয়েবসাইটজুড়ে রয়েছে মজার মজার লেখা। লেখাগুলো পড়ে প্রাণ খুলে হাসলে মন্দ কী? আপনাদের জন্য রইল এমন কিছু মজার ওয়েবসাইটের নাম—নাইনগ্যাগ ডটকম, রেডিটের জোকস সেকশন।