যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবিরের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ আঁতাত ছিল। ট্রাম্পের পক্ষে ফলাফল আনতে রাশিয়ার প্রচেষ্টার প্রধান ভূমিকা পালন করে ওয়েবসাইট উইকিলিকস। যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের গোয়েন্দাবিষয়ক কমিটির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক উভয় পার্টির সদস্যদের একটি প্যানেল তিন বছরের বেশি সময় ধরে ওই প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। প্রায় এক হাজার পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে এর আগে তদন্ত করেন রবার্ট ম্যুলার। গত বছর তিনি তদন্তের তথ্য প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন। সেখানে নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু সিনেটের প্রতিবেদনে হস্তক্ষেপের বিস্তারিত ও খুঁটিনাটি বিষয় উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, রাশিয়ার গোয়েন্দাদের সঙ্গে আঁতাতের নাটের গুরু ছিলেন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার তৎকালীন চেয়ারম্যান পল ম্যানাফোর্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে ট্রাম্পকে জেতাতে রাশিয়ার হয়ে কাজ করে উইকিলিকস। যুক্তরাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁস করে রাশিয়ার গোয়েন্দাকে সহায়তা করছে, এমন তথ্য প্রতিষ্ঠানটির অগোচরে ছিল না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের সামরিক-অসামরিক লাখ লাখ গোপন নথি ফাঁস করে সাড়া ফেলে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ওয়েবসাইট উইকিলিকস।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, রাশিয়ার গোয়েন্দাদের সঙ্গে আঁতাতের নাটের গুরু ছিলেন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণার তৎকালীন চেয়ারম্যান পল ম্যানাফোর্ট। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনের পর রিপাবলিকান ট্রাম্পের
পক্ষে এবং ডেমোক্র্যাট হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য ম্যানাফোর্ট রাশিয়ার ব্যবসায়ী নেতা ওলেগ দেরিপাসকাসহ রুশ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করেন। ম্যানাফোর্টের ভূমিকা এবং তাঁর সঙ্গে ট্রাম্পের নৈকট্য রুশ গোয়েন্দাদের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেওয়া হয়। প্যানেল বলেছে, উচ্চপর্যায়ে তাঁর (ম্যানাফোর্ট) প্রবেশাধিকার ও রুশ গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত লোকদের কাছে তথ্য পাচারের সম্মতি মার্কিন নিরাপত্তার জন্য ব্যাপক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বহুল চর্চিত বিষয়, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করতে রাশিয়া ট্রাম্পকে সহায়তা করেছিল। তদন্ত প্রতিবেদনের শেষ ও পঞ্চম অধ্যায়ে নির্বাচনে রাশিয়া ও ট্রাম্পের প্রচারণা শিবিরের যোগসাজশের কথা উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যগুলো অনুমোদন করা হয়েছে আগের অধ্যায়গুলোতে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির ইমেল হ্যাকিংয়ের জন্য কনস্টানটিন ক্লিমনিক নামের এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে সিনেটের প্যানেল, যিনি রুশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউয়ের কর্মকর্তা। এক দশকের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে ক্লিমনিকের সঙ্গে কাজ করেন পল ম্যানাফোর্ট। ২০১৬ সালে তাঁর সঙ্গে ম্যানাফোর্ট সাক্ষাৎ করেন। তখন যাতে ট্রাম্প হিলারিকে হারাতে পারেন, সে বিষয়ে ক্লিমনিকের সঙ্গে যুক্তিবুদ্ধি আঁটেন ম্যানাফোর্ট এবং তিনি অভ্যন্তরীণ তথ্য রাশিয়ার গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেন। অর্থ পাচারসহ একাধিক অভিযোগে ২০১৯ সালে ম্যানাফোর্টের ৯০ সপ্তাহের সাজা হয়।