পশ্চিমবঙ্গে এনআরসির আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল
জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গে। এ ব্যাপারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায় ঘোষণা দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসির আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করা হবে। আর সেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে এই রাজ্যে আসা উদ্বাস্তু এবং শরণার্থীদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হবে।
গতকাল রোববার বীরভূমে দলীয় কর্মী স্বরূপ গড়াই হত্যার পর মৃতের স্ত্রীর হাতে ৫ লাখ রুপির একটি চেক তুলে দেন মুকুল রায়। সে সময় সাংবাদিকদের এ কথা বলে মুকুল রায় বোঝাতে চেয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি হবে। একই দিনে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টারও ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর রাজ্যেও কার্যকর করা হবে এনআরসি।
বিজেপি জোর দিয়ে বলছে, আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি হবে। ঠিক তেমনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি কার্যকর করতে দেওয়া হবে না। তিনি জীবিত থাকতে এই রাজ্যে এনআরসি কার্যকর হবে না। এর পাল্টা জবাব দিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, মমতার জীবদ্দশাতেই এই রাজ্যে এনআরসি দেখে যেতে হবে তাঁকে। ফলে এনআরসি নিয়ে এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি উত্তাল। আর এতে করে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।
আসামে এনআরসিতে নাম তুলতে গেলে যে সব নথি চাওয়া হয়েছে, সে সব নথি এখানকার বাংলাদেশ বা সাবেক পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা বহু পরিবারের কাছে নেই। অনেকেই হারিয়ে ফেলেছে সে সব পুরোনো কাগজ। তবে সবার কাছে এখন রয়েছে ভারতের রেশন কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র এবং আধার কার্ড। তবুও এতে তাঁদের মন থেকে আতঙ্ক কেটে যায়নি।
বিশেষ করে সত্যিই যদি এনআরসি এই রাজ্যে কার্যকর হয়, তবে সংখ্যাগুরু হিন্দুরাও যে বিপাকে পড়বে সেটি এখন বুঝতে পারছে বিজেপি। আর তাঁর ফল যে ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে প্রতিফলিত হবে, সেটিও উপলব্ধি করতে পারছে রাজ্য বিজেপি। বিজেপিও মনে করছে, এনআরসি পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর হলে সমস্যায় পড়বে বাংলাদেশ ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা বহু উদ্বাস্তু ও শরণার্থী। আর এর ফলে তারা যে মমতার দিকে ঝুঁকবেন না, তার গ্যারান্টি নেই।
তবুও বারবার বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব বলেছে, হিন্দু শরণার্থী বা উদ্বাস্তুদের এই রাজ্য থেকে তাড়ানো হবে না। তাঁদের দেওয়া হবে নাগরিকত্ব। তাড়ানো হবে মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের।
আগামী ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন। সেই নির্বাচনে মমতাকে হারানোর জন্য বিজেপি আদাজল খেয়ে নেমেছে। কিন্তু বিজেপির কাঁটা হতে পারে এনআরসি, সেটি বুঝতে পেরেই মুকুল রায় গতকাল এই ঘোষণা দিয়েছেন।