১৭ বছর পর মুক্তি পাচ্ছেন 'আমেরিকান তালেবান'
তালেবানদের পক্ষে যুদ্ধ করে ২০০১ সালে ধরা পড়েন আমেরিকার নাগরিক জন ওয়াকার লিন্ধ। প্রায় ১৭ বছর কারাবাসের পর আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের জেলখানা থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান কারাগারের এক কর্মকর্তা। লিন্ধকে ঘিরে নিরাপত্তাঝুঁকি রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা।
২০ বছর বয়সী, শ্মশ্রুমণ্ডিত লিন্ধকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর চোখে ছিল বন্য দৃষ্টি। ২০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত লিন্ধ ১৭ বছর কারাবাস শেষ করে আজ ইন্ডিয়ানার ফেডারেল জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জঙ্গি হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে আটক অনেক কয়েদির একজন লিন্ধ। তখনকার টগবগে তরুণ এখন পরিণত পুরুষ।
লিন্ধের মুক্তি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন কতিপয় কর্মকর্তা। তাঁদের প্রশ্ন, কেন লিন্ধকে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মুক্তি দেওয়া হচ্ছে?
সাবেক জিহাদিদের মৌলবাদ ও অপরাধপ্রবণতা দূর করতে প্যারোল কর্মকর্তারা কী ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন, তা তাঁরা জানতে চেয়েছেন। ২০১৬ সালে বৈদেশিক নীতি ম্যাগাজিনে ফাঁস হওয়া মার্কিন সরকারের নথিতে লিন্ধকে ‘চরমপন্থী মতাদর্শসম্পন্ন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেলখানার ফেডারেল ব্যুরোতে লেখা এক চিঠিতে মার্কিন সিনেটর রিচার্ড শেলবি ও মার্গারেট হাসান জানতে চেয়েছেন, ‘চরমপন্থী বা সন্ত্রাসী হিসেবে গ্রেপ্তারকৃতদের পুনরায় সমাজে ফিরিয়ে আনলে বাকিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে তো?’ এদের নিয়ে বর্তমান নীতি, কৌশল এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছতা প্রয়োজন বলে জানান তাঁরা।
লিন্ধের বাবা-মা ম্যারিলিন ওয়াকার ও ফ্র্যাঙ্ক লিন্ধ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া লিন্ধ কৈশোরেই ক্যাথলিসিজম ছেড়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। ২০০২ সালে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি জানান, আরবি ভাষা শিখতে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন তিনি। পরে ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়ালেখা করতে যান পাকিস্তানে। মুসলিমদের জিহাদে সহায়তা করতে তালেবান জঙ্গি হিসেবে স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করেন লিন্ধ। তবে কখনোই ‘আমেরিকাবিরোধী যুদ্ধে’ অংশ নেওয়ার ইচ্ছা তাঁর ছিল না বলে জানান তিনি। এমনকি জিহাদ মানে আমেরিকাবিরোধী যুদ্ধ—এমনটাও কখনো ভাবেননি লিন্ধ।
আদালতে দাঁড়িয়ে লিন্ধ সর্বস্তরের সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা করেন। আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের কর্মকাণ্ডকে ‘একেবারেই ইসলামবিরোধী’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। ২০০২ সালে আদালতের রায়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে।