বুতেফ্লিকা, বশির, এরপর কে?
তিন দশক সুদান শাসনের পর গত বৃহস্পতিবার পতন হয়েছে ওমর আল-বশিরের সরকারের। এর আগে গত সপ্তাহেই আলজেরিয়ায় অবসান ঘটেছে আবদেল আজিজ বুতেফ্লিকার শাসনের। তিনিও ক্ষমতায় ছিলেন দুই দশক। দুজনেরই পতন হয়েছে জীবনমানের উন্নয়নের দাবিতে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রবল বিক্ষোভের মুখে। পার্থক্য শুধু বশিরকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে আটক করেছে সুদানের সেনাবাহিনী। আর বুতেফ্লিকা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তবে এ ক্ষেত্রেও আলজেরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা ছিল। পরপর দুই কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রনায়কের এমন পতনে প্রশ্ন উঠেছে, এরপর কার পালা?
বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থিত অলাভজনক সংগঠনে অতিথি বিশেষজ্ঞ মার্ক পিয়েরিনির মতে, ‘আলজেরিয়া আর সুদানের প্রেক্ষাপটের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবে দেশ দুটির ঘটনা থেকে স্বৈরশাসক ও একনায়কদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হলো ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র আর সবার জন্য সমান সুযোগের ক্ষুধা সর্বজনীন।’ তিউনিসিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া, মরক্কো ও তুরস্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, উভয় দেশের ক্ষেত্রেই ক্ষমতার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ ও অর্থ পকেটে পুরেছেন।
অনেকেই বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় বুতেফ্লিকা ও বশির ছাড়া আরও কয়েকজন একনায়ক রয়েছেন। মরক্কো রাজপ্রথায় পরিচালিত। আর মিসর চলছে সাবেক সেনাপ্রধান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির নেতৃত্বে। মোহাম্মদ মুরসির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন সিসি।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সেন্টার ফর মিডল ইস্ট পলিসির পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো শরন গ্রেওয়াল বলেন, আলজেরিয়া ও সুদানের ঘটনা ২০১০-১১ সালের আরব বসন্তের পুনরুত্থান ঘটাবে কি না, তা ধারণা করা কঠিন। ওই বিক্ষোভ মিসর ও তিউনিসিয়ায় শাসকশ্রেণির পতন ঘটিয়েছে, সিরিয়া ও ইয়েমেনে যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছে। জীবনমানের উন্নয়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আলজেরিয়া ও সুদানে যে বিক্ষোভ, তার ওপর ওই অঞ্চলের বাকি একনায়কেরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন বলেও দাবি করেন শরন গ্রেওয়াল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল সুদান বা আলজেরিয়ায়ই পরিবর্তন দেখা যায়নি, এই বসন্তে আরেক একনায়ক তাঁর জায়গা ছেড়েছেন। তিনি কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নাজারবায়েভ।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় আরও বিক্ষোভ দেখা যেতে পারে।