শাস্তির মুখে শত্রুঘ্ন সিনহা
এবার শাস্তির মুখে পড়তে চলেছেন শত্রুঘ্ন সিনহা। কলকাতায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজেপি-বিরোধী সমাবেশে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তুলোধুনা করার পর দলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আজ রোববার তিনি ছাড়া পেয়েছেন। দলীয় সূত্রের ধারণা, এবার শাস্তির খাঁড়া এড়ানো শত্রুঘ্নের পক্ষে কঠিন।
হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা বিহারের পাটনা সাহিব লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত। অটল বিহারি বাজপেয়ি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির আমলে দলে ক্রমশ তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এখন তিনি মোদি ও অমিত শাহের ঘোরতর বিরোধী।
মোদি-শাহ জুটির বিরোধিতা করলেও বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে এত দিন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিজেপির যেসব নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে দল ছেড়েছেন, যেমন সাবেক অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিনহা ও সাবেক মন্ত্রী অরুণ শৌরি, শত্রুঘ্ন প্রকাশ্যেই তাঁদের সঙ্গ দিয়েছেন। সমর্থন করেছেন। তবে সাংসদ হিসেবে দলের বিরুদ্ধে কখনো ভোট দেননি। কিন্তু কলকাতার সমাবেশে তিনি যে ভাষা ও ভঙ্গিতে মোদির সমালোচনা করেছেন, তার পর তাঁকে শাস্তি না দিলে দলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে বলেই ধারণা।
শত্রুঘ্ন সিনহা নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে মারাত্মক ভুল ও অদূরদর্শী বলেছেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বলা শব্দ উচ্চারণ করে বলেছেন, জিএসটি হলো ‘গব্বর সিং ট্যাক্স’। রাফাল নিয়ে সরাসরি সেই সব প্রশ্ন তুলেছেন যেগুলো তুলে ধরেছে কংগ্রেস। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হ্যাল’কে বাদ দিয়ে অনিল আম্বানির রিল্যায়েন্সকে অফসেট পার্টনার করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, বিশ্বাসযোগ্য উত্তর না পেলে মানুষ বুঝবে ‘চৌকিদারই চোর’।
কলকাতার গতকাল শনিবারের সমাবেশকে বিজেপি অবশ্য কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারছে না। দেশের ২৩টি রাজনৈতিক দলের নেতারা শনিবাসরীয় ব্রিগেড সমাবেশে দেশকে ‘মোদি-মুক্ত’ করার আহ্বান জানান। ওই দিনেই দিউ ও দমনে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই সমাবেশ সম্পর্কে বলেছিলেন, অপরাধীরা এখন হাতে-হাত ধরে বাঁচতে চাইছে। যারা আকণ্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছে, যাদের হাত থেকে দেশকে বাঁচানো মোদির ধর্ম, তারাই এক জোট হয়ে মোদিকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাইছে। আজও বিরোধীদের একহাত নেন প্রধানমন্ত্রী। গোয়ার পানাজিতে এক জনসমাবেশে তিনি বলেন, লোকসভা ভোটে ফের হারবে জেনেই বিরোধী নেতারা এখন থেকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করতে চাইছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমকে।
উত্তর প্রদেশে ভোটে হারার পর বিএসপি নেত্রী মায়াবতী প্রথম ইভিএমকে দায়ী করেছিলেন। তার পর ক্রমে ক্রমেই সুর চড়ান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদব, শারদ পাওয়ার এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। গতকাল ব্রিগেডেও ইভিএমকে ভিলেন হিসেবে প্রতিপন্ন করেন ফারুক আবদুল্লাহ। ইভিএম সম্পর্কে সবাইকে সজাগ করে দিয়ে তিনি বলেন, এটা ‘চোর মেশিন’। সজাগ না থাকলে ওই মেশিন শাসক দলের হয়ে ভোট চুরি করবে।
উত্তর প্রদেশে মায়াবতী-অখিলেশ জোট অবশ্য বিজেপিকে চিন্তায় রেখেছে। এই জোটের পাটিগণিত যে বিজেপির পক্ষে বিপজ্জনক, রাজ্যস্তরের নেতারা তা বুঝতে পারছেন। মোঘলসরাই বিধানসভায় নির্বাচিত বিজেপি নেত্রী সাধনা সিং গত শনিবার এক জনসভায় মায়াবতীকে ‘নারী জাতির কলঙ্ক’ বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ক্ষমতার জন্য মায়াবতী নিজের আত্মসম্মান পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে ঘটনার উল্লেখ করে সাধনা বলেন, ওঁকে কীভাবে হেনস্তা করা হয়েছিল সবার জানা। হেনস্তা হতে হয়েছিল দ্রৌপদীকেও। কিন্তু দ্রৌপদী তার বদলা নিতে সারা জীবন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। আরা মায়াবতী ক্ষমতার জন্য সম্মানটুকুও জলাঞ্জলি দিয়েছেন। তিনি নারী জাতির কলঙ্ক।
উত্তর প্রদেশে এসপি-বিএসপি জোট বিজেপির পক্ষে মারাত্মক। দুই দলের সম্মিলিত প্রাপ্ত ভোট বিজেপির তুলনায় অনেকটাই বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিরোধী শিবিরের ‘নেতৃত্বহীনতার’ মোকাবিলায় বিজেপির রয়েছে মোদির ‘সফল নেতৃত্ব’। আগামী ভোটের দ্রষ্টব্য তাই পাটিগণিত ও রসায়নের লড়াই।