প্রেমের জেরে 'দৃশ্যম'-এর কৌশলে হত্যা, বিজেপির সাবেক এমএলএসহ গ্রেপ্তার ৫
সিনেমা দেখে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে কুকুর মেরে মাটিতে পুঁতে রেখেছিলেন পাঁচ ব্যক্তি। কিন্তু পারেননি। পুলিশ ঠিকই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে।
দৃশ্যম ছবির মতোই করে ২০১৬ সালে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে টুইঙ্কল দরগে নামের ২২ বছরের এক তরুণীকে হত্যা করা হয়। কিন্তু ছবির বিজয় সালগাওকরের মতো ইন্দোরের বিজেপি নেতা জগদীশ কারোতিয়ার (৬৫) ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। দৃশ্যম ছবিতে অজয় দেবগন (বিজয় সালগাওকর) একটি খুনের ঘটনা চাপা দিয়ে তদন্তের মোড় অন্যদিকে ঘোরাতে কুকুর মেরে মাটিতে পুঁতে রেখেছিলেন। সিনেমায় নিহত যুবক ছিলেন গোয়া পুলিশের আইজির ছেলে। আইজি এবং গোয়া পুলিশের গোয়েন্দারা অনেক দিন ধরে তদন্ত চালিয়েও এই হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা করতে পারেনি। উদ্ধার হয়নি মরদেহ। বিজয় সালগাওকরকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু বাস্তবের অভিযুক্ত হত্যকারী বিজেপির সাবেক এমএলএ জগদীশ কারোতিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, শুধু একই কৌশল নয়, দৃশ্যম সিনেমা দেখেই অভিযুক্ত জগদীশ কারোতিয়া হত্যা করেন ওই তরুণীকে। শেষ পর্যন্ত দুই বছর তিন মাস পর জগদীশকে আটক করে পুলিশ। তাঁর তিন ছেলে অজয় (৩৬), বিজয় (৩৮) ও বিনয় (৩১) এবং এক সহযোগী নীলেশ কাশপকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ইন্দোরের বনগঙ্গা এলাকার টুইঙ্কল দরগের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয় বিজেপি নেতা জগদীশ কারোতিয়া। কিছুদিন সম্পর্ক চলার পরই ২০১৬ সালের মাঝামাঝি শুরু হয় বিবাদ। তখন জগদীশ কারোতিয়াকে বিয়ে করতে বলেন টুইঙ্কল দরগে। কিন্তু তিন সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে সংসার করা জগদীশ রাজি হননি। টুইঙ্কলও অনড় বিয়ের ব্যাপারে। টানাপোড়েনের জেরে নিজের পরিবারে অশান্তি এড়াতে টুইঙ্কলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জগদীশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পুলিশকে জানিয়েছেন, হত্যার আগে তাঁরা ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া দৃশ্যম ছবিটি দেখেছেন। ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর টুইঙ্কল দরগেকে প্রথমে গলা টিপে হত্যা করেন। শরীর পুড়িয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেন অভিযুক্তরা। এরপর তদন্তের মোড় ঘোরাতে একটি কুকুর মেরে কাছাকাছি একটি জায়গায় মাটিতে পুঁতে রাখেন তাঁরা।
ইন্দোরের ডিআইজি হরিনারায়ণচারী মিশ্র বলেন, যেখানে কুকুরটি পুঁতে ফেলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা খবর ছড়িয়ে দেন যে সেই এলাকায় খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরে সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি করে পুলিশ কুকুরটির দেহাবশেষ ছাড়া কিছুই পায়নি। কিন্তু তদন্ত থেমে থাকেনি। টুইঙ্কলের পরিবারের লোকজন জগদীশের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনেন। স্থানীয় এক বিজেপি নেতার প্রভাবে পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ ওঠে। ইতিমধ্যে টুইঙ্কলকে যেখানে খুন করা হয়, সেখান থেকে তাঁর চুড়ি এবং অন্যান্য অলংকারের পোড়া অংশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করেও কোনো সূত্র মেলেনি। কুকুরের দেহাবশেষ উদ্ধারের ঘটনায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে গোয়েন্দা পুলিশেরা।
জগদীশ ও তাঁর এক ছেলেকে গুজরাটের একটি ল্যাবরেটরিতে ব্রেন ইলেকট্রিক্যাল অসিলেশন সিগনেচার (বিইওএস) টেস্ট করায় পুলিশ। এটা একধরনের নিউরো সাইকোলজিক্যাল প্রযুক্তি, যাতে জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধী সাধারণত সত্যি কথা বলেন বলেই ধরে নেওয়া হয়। এ কারণে এটা ব্রেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট বলেও পরিচিত।
হরিনারায়ণচারী মিশ্র বলেন, ইনদোরের কোনো খুনের ঘটনায় প্রথমবারের মতো এ ধরনের পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পরীক্ষাতে জগদীশ ও তাঁর ছেলে খুনের কথা স্বীকার করেন। এরপর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দৃশ্যম ছবির বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, আমরা জেনেছি খুনের আগে অভিযুক্তরা একসঙ্গে অজয় দেবগনের দৃশ্যম ছবিটি দেখেছেন। সেখান থেকেই ‘অনুপ্রাণিত’ হয়ে জগদীশ ও তাঁর ছেলেরা টুইঙ্কল দরগেকে খুন করেন এবং কুকুর মেরে পুঁতে ফেলার পরিকল্পনা করেন।
প্রসঙ্গত, মালয়ালম ছবির দৃশ্যমের অনুকরণে বলিউডেও একই নামে ছবি মুক্তি পায় ২০১৫ সালে। এতে কেন্দ্রীয় চরিত্র বিজয় সালগাওকরের ভূমিকায় অভিনয় করেন অজয় দেবগন। সিনেমার গল্পে একটি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পে বিজয়ের ১২ বছরের পালিতা মেয়ে অঞ্জুর গোসল করার দৃশ্য ধারণ করেন সমীর দেশমুখ স্যাম নামের এক তরুণ। এ নিয়ে চলতে থাকে ব্ল্যাকমেল। স্যাম গোয়ার আইজি মীরা দেশমুখের (টাবু) ছেলে। একসময় দেখা করার কথা বলে স্যাম অঞ্জু বাসায় যান। কিন্তু সেখানে ঘটনাক্রমে খুন হন স্যাম। বিজয় সালগাওকারকে ঘটনাটি জানানোর পর স্যামের মরদেহ নির্মীয়মাণ একটি ভবনের নিচে পুঁতে ফেলা হয়। অন্যদিকে একটি কুকুর মেরে পুঁতে দিয়ে সেই ঘটনা রটিয়ে দেওয়া হয়।