চলছে অস্ত্রোপচার, রোগী বাজাচ্ছেন গিটার!
মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার চলছে। এদিকে যিনি রোগী, তিনি গিটারে মৃদু সুর–ঝংকার তুলে চলেছেন অস্ত্রোপচারের টেবিলে শুয়েই। চিকিৎসকেরা তাতে বাধাও দিচ্ছেন না। এই অভিনব অস্ত্রোপচার হয়েছে গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলীয় শহর ডারবানে। আর যাঁর মাথায় অস্ত্রোপচারটি করা হয়েছে, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রখ্যাত জ্যাজ সুরস্রষ্টা মুসা মানজিনি।
মানজিনির মাথার টিউমার সরিয়ে ফেলতে অস্ত্রোপচারটি করা হয়। ২০০৬ সালে মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ে তাঁর। তখন থেকেই অস্ত্রোপচার করাবেন বলে ভাবছিলেন। কিন্তু মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সঙ্গে স্নায়ুর সম্পর্ক থাকার কারণে জটিল এই অস্ত্রোপচারের উপযুক্ত শল্যচিকিৎসক ও মনের জোর মেলাতে সময় লেগে যায় তাঁর। দীর্ঘ ছয় ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচারেও তাঁকে কোনো ধরনের অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করা হয়নি। কারণ, এ ধরনের অস্ত্রোপচারে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হলে মস্তিষ্কের মোটর করটেক্স অংশটি অকার্যকর হয়ে অনেক সময় রোগীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ঝুঁকি কমাতে মানজিনিকে তাই চেতন রেখেই অস্ত্রোপচারটি চলে।
ইঙ্কোসি আলবার্ট লুথুলি হাসপাতালে মানজিনির অস্ত্রোপচারের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অস্ত্রোপচার টেবিলে নিউরোসার্জন ব্যাজিল অ্যানিকার ও রোহেন হরিচাঁদপ্রসাদের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচার চলছে। মানজিনি তাঁর শান্ত আঙুলে গিটারের তারে মৃদু সুর তুলছেন। যেন জ্যাজের আবহে ভেসে যাচ্ছে অস্ত্রোপচার কক্ষ। এমনিতে বেশ কয়েকটি সংগীতযন্ত্রের ওপর দখল রয়েছে মানজিনির। একটি বিশ্ববিদ্যালয়েও সংগীত পড়ান তিনি। সফল অস্ত্রোপচারের পর মানজিনি বলেন, ‘সংগীতস্রষ্টা হিসেবে আমার দক্ষতা এখানে কাজে লেগেছে। চিকিৎসক দলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই।’
চিকিৎসক অ্যানিকার বলেন, ‘রোগীর শরীর অবশ করার চেয়ে তাঁকে চেতন রেখেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিই আমরা। এর ফলে টিউমারটি ছোট ছোট অংশে ভাগ করে অপসারণ করি আমরা। প্রতিটি অংশ কাটার আগে আমরা রোগীর ঐচ্ছিক পেশী সঞ্চালন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হই ওই অংশ কাটা যাবে কি না। এ জন্য রোগীর আঙুলের নড়াচড়া অব্যাহত রাখার জন্য তাঁকে গিটার বাজাতে দিই আমরা। আর এ কাজে মানজিনি দারুণ সফলতা দেখিয়েছেন।’