কাশ্মীরে 'ফেরান' ফিরল ঠিকই
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে শীতের গরম পোশাক ‘ফেরান’ অফিসে পরা নিষিদ্ধ করে বিপাকে পড়ে প্রশাসন। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে এ নিয়ে বেশ হইচই পড়ে যায়। পরে এই নিষেধাজ্ঞা থেকে পিছু হটে প্রশাসন।
কাশ্মীরে প্রচণ্ড ঠান্ডা তুষারপাতে উষ্ণতা পেতে যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যবাহী ‘ফেরান’ পরার চল রয়েছে। লম্বা ঢিলেঢালা কোটের মতো পোশাকটি সেখানের নারী-পুরুষ সবাই পরে থাকেন। এমনকি শিশুরাও। শীত চলে এসেছে, তাই ফেরান পরারও ধুম পড়েছে। ঘর থেকে বাইরে বেরোনোর সময় গায়ে ফেরান চাপিয়ে নিচ্ছেন কাশ্মীরী নারী-পুরুষেরা।
অফিসে সেই ফেরান পরা নিষিদ্ধ করে রীতিমতো বিপাকে পড়ে কাশ্মীরি প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ টগবগিয়ে উঠলে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে প্রশাসন।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, কাশ্মীরের শিক্ষা অধিদপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে কর্মীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে অফিসে আসা নিষিদ্ধ করেছে। ১১ ডিসেম্বর জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অফিসের সব কর্মীকে যথাযথ পোশাকে বিধি মেনে অফিসে আসতে বলা হচ্ছে। কেউ ফেরান, ঐতিহ্যবাহী ট্রাউজার ও স্লিপার বা প্লাস্টিকের জুতা পরে অফিসে আসতে পারবেন না।
এর প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সেখানকার মানুষ। তারা ফেরান পরিহিত নিজেদের ছবি পোস্ট করতে শুরু করে।
পরে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। যদিও পৃথক স্থানীয় সরকার শ্রীনগরে সচিবালয়ে ফেরান নিষিদ্ধ বহাল রেখেছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরে গত জুনে মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভেঙে পড়লে সেখানে এখন সরাসরি দিল্লির শাসন চলছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্টে অনেকে ফেরান নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের ওপর হামলা বলে মন্তব্য করেছেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এটাকে ‘পশ্চাদমুখী’ সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না কেন ফেরান নিষিদ্ধ হবে! এটা একধরনের পশ্চাদমুখী নির্দেশ, যার কোনো মানেই নেই। আমাদের আত্মপরিচয়ের অংশ হওয়ার পাশাপাশি ফেরান শীতের সময় ঠান্ডা থেকে উষ্ণ রাখার কার্যকরী একটি পোশাক।’
অনেকে এটাকে তাঁদের ‘সংস্কৃতির ওপর প্রচণ্ড হামলা’ বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁরা শীতে ফেরান পরার উপকারিতার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন এবং ফেরান পরে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করেছেন। হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফেরানের পক্ষে প্রচারও চলছে অনলাইনে।
নিষেধাজ্ঞা জারির নির্দেশদাতা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল রশিদ জানিয়েছেন, ফেরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘লোকজন ফেরান পরে অফিসে চলে আসেন, আমাকে তা নিষিদ্ধ করতে বলা হয়। প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা আমাকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বলেছেন, তাই আমি করেছি।’ তবে ফেরান এই প্রথম নিষিদ্ধ হয়নি। ২০১৪ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী শ্রীনগরের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের ফেরান পরে আসতে নিষিদ্ধ করেছিল। পরে সেই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অনিচ্ছাকৃত’ উল্লেখ করে সেনাবাহিনী ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেয়।