দুনিয়াজুড়ে কমে যাচ্ছে শিশু
বৈশ্বিক জন্মহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০১৭ সালে বৈশ্বিক জন্মহার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের অর্ধেক দেশেই জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখার মতো শিশুর জন্ম হচ্ছে না। চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটের এক গবেষণাবিষয়ক নিবন্ধে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ল্যানসেট বলছে, গবেষণায় যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা বিস্ময়কর। তরুণ জনগোষ্ঠীর তুলনায় প্রবীণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার একটা গভীর প্রভাব পড়বে সমাজে। ১৯৫০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যার ধারা পর্যালোচনা করে এই গবেষণাবিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে ল্যানসেট।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে ১৯৫০ সালে নারীপ্রতি সন্তান জন্মদানের হার ছিল ৪ দশমিক ৭ জন। গত বছর তা কমে হয়েছে ২ দশমিক ৪ জন। তবে দেশভেদে আসলে ব্যবধানটা অনেক বেশি। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে জন্মহার ৭ দশমিক ১ শতাংশ। অন্যদিকে সাইপ্রাসে গড়ে একজন নারী সারা জীবনে একটির বেশি সন্তান নেন না।
এই পরিস্থিতিতে যদি বিশ্বের জন্মহার ২ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে যায়, তাহলে মোট জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে হলে অন্তত ২ দশমিক ১ শতাংশ জন্মহারের প্রয়োজন হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষণা পত্রের মূল লেখক ক্রিস্টোফার মারি বলেন, আমরা এমন চরম মুহূর্তে পৌঁছেছি, যেখানে অর্ধেক দেশের জন্মহার এতই কম যে পুনঃস্থাপন হবে না। তাই কিছু না ঘটলে এসব দেশের জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। এটা আসলে খুবই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। অভিবাসন ছাড়া দেশগুলোর জনসংখ্যা কমবে—এমন প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে।
তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন এজিং বিভাগের পরিচালক জর্জ লেসন বিষয়টি এভাবে দেখেন না। তিনি বিবিসিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যখন সমাজ এই জনমিতি পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবে, তখন এটা আর খারাপ বলে মনে হবে না। জনতত্ত্ব আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। আপনার জানালা দিয়ে একটু বাইরে তাকান। হেঁটে যাওয়া মানুষ, ঘরবাড়ি, রাস্তা, ভিড়, কেনাকাটা—সবকিছুই পরিচালিত হয় এই জনতত্ত্ব দ্বারা।’
জর্জ লেসন বলেন, আমরা যা কিছু পরিকল্পনা করি তা এমনটা নয় যে, জনসংখ্যার সংখ্যা দ্বারা প্রভাবিত হয়; বরং বয়সের কাঠামো ও কীভাবে তা পরিবর্তন হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে।
কিন্তু অধ্যাপক মারি বলছেন, বর্তমান প্রবণতায় শিশুর সংখ্যা কমছে, বাড়ছে প্রবীণের সংখ্যা। ফলে সমাজকে টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন।
বর্তমানে জনসংখ্যার নিম্নহার সমস্যায় ভুগছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যেমন জার্মানি, লাটভিয়া। জাপানের নিম্ন জন্মহার তো এখন সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ১৯৫০ সালে চীনের জন্মহার ছিল ব্যাপক। ফলে জনসংখ্যা ৫০ কোটি থেকে বেড়ে ১৪০ কোটিতে পৌঁছে যায়। এরপর জন্মহার কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় সরকার। ২০১৭ সালে চীনের জন্মহার ১ দশমিক ৫ শতাংশ। এমন অবস্থায় এক সন্তাননীতি থেকে সরে এসেছে দেশটি।