যৌন হয়রানির অভিযোগের বিচার হবে: মানেকা গান্ধী

ভারতের কেন্দ্রীয় শিশু ও নারীকল্যাণমন্ত্রী মানেকা গান্ধী। ছবি: এএফপি
ভারতের কেন্দ্রীয় শিশু ও নারীকল্যাণমন্ত্রী মানেকা গান্ধী। ছবি: এএফপি

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের রাজনৈতিক ভাগ্য এখনো অজানা হলেও ‘#মি টু’ আন্দোলনে যৌন হয়রানির যেসব অভিযোগ সামনে এনেছে, তার বিচার করা হবে। অবসরপ্রাপ্ত চারজন বিচারপতিকে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি কমিটি গঠন করবে। সেই কমিটি এসব অভিযোগের বিচার করবে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তা রুখতে যে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো রয়েছে, সেগুলোকে কীভাবে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করা যায়, এ কমিটি তার সুপারিশও করবে। কেন্দ্রীয় শিশু ও নারীকল্যাণমন্ত্রী মানেকা গান্ধী এ কথা জানিয়েছেন।

আজ শুক্রবার এ খবর জানিয়ে মানেকা বলেন, রাজনীতি, মিডিয়া অথবা বেসরকারি সংস্থায় ক্ষমতাসীন বহু মানুষ প্রায়ই এমন অপকর্ম করে থাকেন। নির্যাতিতা নারীদের অনেকেই লজ্জা বা ভয়ে কিছু বলতে পারেন না। কিন্তু আজ যখন তাঁরা প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন, তখন প্রতিটি অভিযোগের বিচার হওয়া প্রয়োজন। এক বিবৃতিতে মানেকা বলেছেন, ‘প্রতিটি অভিযোগের পেছনে কতটা যন্ত্রণা ও আতঙ্ক রয়েছে, তা আমি অনুভব করি। কাজের জায়গায় যৌন হেনস্তার ঘটনার মোকাবিলায় জিরো টলারেন্স নীতি নিতে হবে।’

মানেকা এর আগে বলেছিলেন, ‘#মি টু’ আন্দোলন দেশের নারীদের সাহসী করে তুলেছে, এটা খুশির কথা। ১০ বা ১৫ বছর পরও কেউ যদি এই অভিযোগ তোলেন, তা হলে তা গ্রাহ্য হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেছিলেন, আইন মন্ত্রণালয়কে তাঁরা লিখেছেন, এ ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা রাখা উচিত নয়।


অভিনেতা নানা পাটেকারসহ মুম্বাইয়ের সিনেমা জগতের একাধিক পরিচিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনার পর বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগের বন্যা বইতে শুরু করেছে। শুধু বিনোদন জগৎই নয়, অভিযোগ আসতে শুরু করেছে মিডিয়া এবং রাজনীতিকদের বিরুদ্ধেও। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের বিরুদ্ধে। একসময়ের অতি সফল এই সাবেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন অতীতে তাঁরই অধীনে কাজ করা অন্তত ১০ জন নারী সাংবাদিক। টুইটার মারফত তো বটেই, প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমকেও তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। প্রশ্ন এখন একটাই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিড়ম্বনার হাত থেকে বাঁচতে আকবরকে ইস্তফা দিতে বলবেন কি না।

আকবর এখনো বিদেশে। সরকারি এক প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে তিনি এখন নাইজেরিয়া সফর করছেন। অভিযোগগুলো নিয়ে এখনো একটি শব্দও তিনি উচ্চারণ করেননি। সরকারি মুখপাত্রেরও মুখে কুলুপ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন। এড়িয়েছেন বিজেপির সরকারি মুখপাত্রও। কিন্তু মোদি সরকারের তিন মহিলা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, মানেকা গান্ধী ও স্মৃতি ইরানি ‘#মি টু’ আন্দোলনকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন। আকবর সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে কিছু না বললেও তাঁরা যে অভিযোগকরীদের পক্ষে, সেই সমর্থনের কথা জানাতে দ্বিধা করেননি।

বিরোধীরা এ বিষয়ে একজোট। কংগ্রেস ও বামপন্থী দলগুলো ইতিমধ্যেই আকবরের ইস্তফা দাবি করেছে। একই দাবি বিজেপির শরিক দল শিবসেনারও। তেলেগু দেশম ও হায়দরাবাদের এমআইএম নেতা আসাদুল্লা ওয়াইসির দাবিও তা–ই। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী শুক্রবার ‘#মি টু’ আন্দোলনকে সমর্থন করে এক টুইটে বলেছেন, ‘নারীদের শ্রদ্ধা করা ও সম্মান দেওয়াটা সবার শেখা উচিত। যারা তা করে না, তাদের পরিসর যে ক্রমেই কমে আসছে, তা দেখে আমি খুশি। পরিবর্তন আনতে গেলে সত্যটা জোর গলায় স্পষ্ট করে বলতে হবে।’

মুম্বাইয়ের ফিল্ম দুনিয়ায় ‘#মি টু’ আন্দোলন রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। এত দিন চুপ থাকা ও মন্তব্য না করায় সমালোচিত অমিতাভ বচ্চন তাঁর ৭৬তম জন্মদিনের দিন মুখ খুলেছেন। বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে অথবা অন্য কোথাও কোনো নারীর অবমাননা হওয়া উচিত নয়। পরিচালক সুভাষ কাপুরের বিরুদ্ধে অভিনেত্রী গীতিকা ত্যাগী ধর্ষণের অভিযোগ তোলায় ‘মোগুল’ সিনেমা থেকে সরে এসেছেন আমির খান।

এদিকে অক্ষয় কুমারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘হাউজফুল-৪’ সিনেমা থেকে সরে আসার। পরিচালক সাজিদ খানের এই সিনেমায় তাঁর অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু সাজিদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনেন তাঁরই সহকারী সালোনি চোপড়া এবং অভিনেত্রী রেচেল হোয়াইট। বিদেশ থেকে ফিরে সামাজিক মাধ্যমে অক্ষয় লিখেছেন, প্রযোজককে শুটিং বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছি। বলেছি, আগে তদন্ত হোক, তারপর শুটিং হবে। অক্ষয় লিখেছেন, ‘এটা এমন একটা বিষয়, যার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অভিযোগ প্রমাণিত এমন কারও সঙ্গে কোনো কাজ আমি করব না। নির্যাতিতাদের সুবিচার পাওয়া উচিত।’

বাঙালি গায়ক অভিজিৎ ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন বোধিসত্তা নামে এক বিমানবালা। এর জেরে দুর্গাপূজার সময় উত্তর আমেরিকার নিউ জার্সিতে অভিজিতের গানের অনুষ্ঠান সংগঠকেরা বাতিল করে দিয়েছে। সংগঠকেরা জানিয়েছে, এ বিষয়ে আপসের প্রশ্নই ওঠে না।