৭ রোহিঙ্গাকে আজ মিয়ানমারে পাঠাচ্ছে ভারত
আসামের কারামুক্ত সাত রোহিঙ্গাকে আজ বৃহস্পতিবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠাচ্ছে ভারত। গতকাল বুধবার সকালে এদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে শিলচর থেকে মণিপুরের মোরে সীমান্তে নেওয়া হয়।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে আজ এই সাত ব্যক্তিকে হস্তান্তর করা হবে। রাখাইন রাজ্যের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের শহর কাইউক ডাউক শহরের বাসিন্দা ছিল তারা। মিয়ানমার সরকার এর মধ্যে এই ব্যক্তিদের পরিচয়ের বিষয় নিশ্চিত করেছে। এদের ফিরিয়ে নিতে সম্মতও হয়েছে মিয়ানমার ।
শিলচরের কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০১২ সালের ২৯ জুলাই আট বিদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাজার মেয়াদ শেষে এদের মধ্যে একজনকে ইতিমধ্যে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বহু বছর ধরে সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে বসবাস করছে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী নরেন্দ্র মোদি সরকার মনে করে, এই অবৈধ রোহিঙ্গা অভিবাসীদের কারণে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি। গত বছর এসব রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করে ফেরত পাঠাতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয় কেন্দ্র সরকার।
আসামের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক ভাস্কর জ্যোতি মোহন্ত বলেন, আজ সকালেই এই সাত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এটি নিয়মমাফিক কার্যক্রম বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, একে একে সব অবৈধ বিদেশিকে ফেরত পাঠানো হবে।
তবে ভারতের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। বর্ণবাদবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টেনদায়ি আচিউম বলেন, আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে অবগত ভারত সরকার। তাদের এটা মানতে হবে। বৈষম্য, হত্যা, বিদ্বেষ ও নিপীড়নের শিকার হয়ে এই মানুষগুলো পালিয়ে এসেছে। তাদের অবশ্যই নিরাপত্তা দিতে হবে।
নতুন সিদ্ধান্তের বিষয়ে মিয়ানমারের সরকারি মুখপাত্র হাও তায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পায়নি তারা। গত মাসে হাও তায়ে এক বিবৃতিতে বলেন, এই ইস্যুতে সংবাদমাধ্যম কোনো কথা বলবেন না তিনি।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে গত বছরের আগস্টে তল্লাশিচৌকিতে হামলার পর সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এরপর প্রাণ বাঁচাতে দলে দলে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, এ দফায় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের প্রায় সবাই অভিযোগ করেছে, মিয়ানমারের সেনারা রাখাইনে অভিযানের নামে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে। মিয়ানমারের এই সামরিক কর্মকাণ্ডকে জাতিগত নিধন বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। তারা বলছে, গত বছরের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায় আগে। এরপর সামরিক বাহিনী জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে।
গত বছর ভারতে অবস্থানকারী সব রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। তবে বিষয়টি নিয়ে আদালতে রিট হলে মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের না তাড়ানোর রায় হয়।