রাজনৈতিক খামখেয়াল আর একটি গণহত্যা

নাফ নদী পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার সময় একজন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু মৃত সন্তান কোলে নিয়ে কাঁদছেন। এএফপি ফাইল ছবি
নাফ নদী পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার সময় একজন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু মৃত সন্তান কোলে নিয়ে কাঁদছেন। এএফপি ফাইল ছবি

দুজন শান্তিতে নোবেলজয়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, মিয়ানমারের জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রামী কণ্ঠস্বর অং সান সু চি। দুজনে মিলে ওভাল অফিসে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ ঠিক করছেন। সঙ্গে আছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা কূটনীতিক। তবে এই চেষ্টায় হয়তো কিছু খামতিই ছিল। গণতন্ত্রের ‘গণ’ বাদ রেখে স্রেফ ‘তন্ত্র’ চর্চাই হচ্ছিল। কারণ, এরপরের গল্পটা মানবতার বিপর্যয়ের।

মিয়ানমার রাখাইনের তুলাতলি গ্রাম, আগস্ট মাসের ৩০ তারিখ। মিয়ানমারের রাখাইন স্টেট, এই জায়গাটা মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপরে চালানো বিভীষিকার কেন্দ্র। যখন ১১ বছর বয়সী কোনো কিশোর নির্লিপ্তভাবে তার দাদিকে পুড়িয়ে মারার দৃশ্য বর্ণনা করে, সে আতঙ্কের মাত্রা আমাদের পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব নয়।

চলতি সংখ্যা ফরেন পলিসি বলছে, গত এক বছরে মিয়ানমার থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। গাদাগাদি করে, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় জীবন যাপন করছে তারা। আধুনিক সময়ে এ রকম মানবতার সংকট দুঃখজনক। তবে আরও দুঃখজনক আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের ব্যর্থতা।

এ বছরের ২৭ আগস্ট জাতিসংঘ বেশ কড়া শব্দের কিছু প্রতিবেদন করেছে। ইকোনমিস্ট বলছে, সেই প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সহিংসতায় মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ দিয়েছে জাতিসংঘ। সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার কথাও বলছে। অভিযোগ হবে গণহত্যার।

এটুকুতেই থেমে থাকেনি জাতিসংঘের প্রতিবেদন। সেই প্রতিবেদনে নিজেদের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ। এই পুরো ঘটনায় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সমাজের ঠুঁটো জগন্নাথসুলভ আচরণে স্পষ্টভাবে হতাশ। হিসেবে, একেবারে জাতিসংঘের নাকের তলা দিয়ে রোহিঙ্গা সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সেই সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের কর্মপন্থা হতাশাজনক বটেই, পারলে শাস্তিও হতে পারে।

ফরেন পলিসি বলছে, রোহিঙ্গা সহিংসতা আচমকা শুরু হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের ২০১২-১৭ সালের বিভিন্ন প্রতিবেদনে সহিংসতার জমতে থাকা মেঘের কথা বলা হচ্ছিল। তবে বাঘা কূটনীতিকেরা এসব প্রতিবেদনকে আমলে নেননি। নিলেও উড়িয়ে দিয়েছেন। কূটনীতিকদের পুরো বিশ্বাস, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে আলোচনাতেই সফলতা আসবে।

সে সময় মিয়ানমারে নোবেলজয়ী অং সাং সু চির নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা চলছে। ২৭ আগস্টের প্রতিবেদন বলছে, ‘মিয়ানমারে তখন গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হওয়ার কথা, যদিও দেশটিতে তখন গঠনতান্ত্রিক বৈষম্য বিরাজ করছিল।’ কূটনীতিকেরা আলোচনা করে এই গণহত্যার ভিত স্থাপন করেছিলেন মাত্র। তাঁরা চিন্তা করছিলেন, অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে দিয়ে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের শৈশবকে সহজ করবেন, ফরেন পলিসি এমনটাই মনে করছে।

মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হিল্যাং (বাঁয়ে) অং সান সু চির সঙ্গে করমর্দন করছেন। রয়টার্স ফাইল ছবি
মিয়ানমারের কমান্ডার ইন চিফ মিন অং হিল্যাং (বাঁয়ে) অং সান সু চির সঙ্গে করমর্দন করছেন। রয়টার্স ফাইল ছবি

পত্রিকাটি ওখানেই থেমে নেই। তাদের মতে, মিয়ানমারের জাতীয় বয়ানে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কেউ নয়; অবৈধ বাঙালি অভিবাসী। রোহিঙ্গাদের প্রতি এ রকম বর্ণবাদী মনোভাব মিয়ানমারে বহু পুরোনো। এরপর ২০১২ সালের মে মাসে রাখাইন-রোহিঙ্গা সংঘর্ষের পরে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। সেনাবাহিনী নেমে আসে, ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষকে আশ্রয় নিতে হয় শরণার্থীশিবিরে। ইন্টারন্যাশনাল স্টেট ক্রাইম ইনিশিয়েটিভ এই ঘটনাকে নাৎসি জার্মানির ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাবের সঙ্গে তুলনা দেয়। তাতেও টনক নড়েনি কারও।

মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেরেক মিচেলের চোখেও খটকা লেগেছিল। ২০১২ সালের অক্টোবরে রাখাইনে পরিদর্শন শেষে তিনি ওয়াশিংটনে পাঠানো এক বার্তায় বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দৃষ্টিকটুভাবেই বিচ্ছিন্ন, লেখাপড়া কিংবা চিকিৎসাব্যবস্থায় তাদের প্রবেশের সুযোগ নেই।’

তবে বারাক ওবামার গণতন্ত্রের পক্ষে ঝলমলে ভূমিকায় চোখধাঁধানো কূটনীতিকদের এসব সামান্য বিষয়ে নজর দেওয়ার সময় ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকেরা মিয়ানমারের গণতন্ত্রের অনুঘটক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাবার স্বপ্নে বিভোর।

জাতিসংঘের চোখেও পড়েছিল জাতিগত সংঘর্ষের মেঘ। কিন্তু তারাও একেবারে এড়িয়ে গিয়েছিল বিষয়টা। কানাডিয়ান কূটনীতিক রেনাটা লক-ডেসালেন মিয়ানমারে রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে। সময়টা ছিল জাতিসংঘের জন্যও টালমাটাল। ২০০৯ সালে শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কান গৃহযুদ্ধে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। রাষ্ট্রের চাপে পড়ে, নিজেদের মানবাধিকার প্রতিবেদনে সেন্সর করেছিল তারা।

সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ২০১৩ সালে রক্তপাত ঠেকাতে নতুন পলিসি নেয় জাতিসংঘ। যেখানেই রক্তপাত, সাহসের সঙ্গে এবং আদর্শের ভিত্তিতে মোকাবিলা করবে।

লক ডেসালেন মিয়ানমারে পৌঁছানোর কিছুদিন পরেই রাখাইনের ছোট্ট শহর দু চি ইয়ার টানে শুরু হয় সংঘর্ষ। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পরে হিসাব করে দেখা যায়, মারা গেছে অনেক রোহিঙ্গা, আট হাজার বাস্তুচ্যুত।

ঘটনার তদন্তে যাওয়া সাবেক ইউএন কর্মকর্তা মাইকেল শাইখ ইকোনমিস্টকে বলেন, ‘লোকের শরীরে ছিল গুলির দাগ, বিশাল বিশাল কাটা ছিল তাদের দেহে। ভয়ংকর কিছু যে ঘটেছে, সেটা পানির মতো পরিষ্কার।’

লক ডেসালেন জাতিসংঘকে চাপ দেন এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য। সে বছর ২৩ জানুয়ারি জাতিসংঘ এই বক্তব্য দেয়। সেই বক্তব্যে তারা বলে, ৪০- এর বেশি মানুষ মারা গেছে সেই সংঘর্ষে। জাতিসংঘের এই বয়ানকে সর্বৈব মিথ্যা দাবি করে মিয়ানমার।

লক ডেসালেনের সামনে দুটো রাস্তাই খোলা ছিল: হয় মিয়ানমারের এই দাবি মেনে নেওয়া, কিংবা জাতিসংঘের পলিসিকে অস্ত্র করে মিয়ানমারের ওপর চাপ বৃদ্ধি করা।

মিয়ানমার সম্পর্কে স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্য অনুসন্ধান মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসমান চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন। জেনেভা, সুইজারল্যান্ড, ২৭ আগস্ট। ছবি: রয়টার্স
মিয়ানমার সম্পর্কে স্বাধীন আন্তর্জাতিক তথ্য অনুসন্ধান মিশনের প্রধান মারজুকি দারুসমান চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংবাদ সম্মেলনে আসেন। জেনেভা, সুইজারল্যান্ড, ২৭ আগস্ট। ছবি: রয়টার্স

শাইখ, ডেসালেনসহ ইউএনের উচ্চপদস্থ অন্য কর্মকর্তারা মিয়ানমারের সঙ্গে সুর মেলালেন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে, মিয়ানমার ও জাতিসংঘের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এক নৈশভোজে লক ডেসালেন দাবি করেন, দু চি ইয়ার তান শহরে কোনো সহিংসতাই ঘটেনি। প্রমাণ হিসেবে নৈশভোজে উপস্থিত আরেক কর্মকর্তার ই-মেইলের উদাহরণ টানেন তিনি, তেমনটাই বলছে ফরেন পলিসি।

মূলত মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার চাপের কাছে নতিস্বীকার করেন লক-ডেসালেন। মিয়ানমারে তখন গণতন্ত্রের সুবাতাস বইয়ে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় চলছে। অং সান সু চির নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র এলে সে স্রোতেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমূলে বিনাশ হবে। তবে তার জন্য মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা ছিল জরুরি। চল্লিশ মৃতদেহ, গণতন্ত্রের সামনে আসলে তুচ্ছ।

মাইকেল শাইখ ফরেন পলিসিকে বলেন, ‘সে সময় পুরো জাতিসংঘ কাঠামোগতভাবেই মিয়ানমারের কাছে নতিস্বীকার করেছিল। শ্রীলঙ্কা ট্র্যাজেডির পরে, মিয়ানমারে একটি কূটনৈতিক বিজয়ের জন্য জাতিসংঘ মরিয়া। আরও গভীর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে সেই আভাস পুরোই ছিল। কিন্তু রাজনীতির খাতিরে আমরা সবাই সেটা এড়িয়ে গেছি। তাতে মিয়ানমারই জিতেছে। দিন শেষে হিসেব মেলাতে বসলে, দু চি ইয়ার তানের ঘটনা স্রেফ নেট প্র্যাকটিস।’

লক-ডেসালেনের শীর্ষ সহকারী, ভান্ডেনাবিলি মিয়ানমারে তাঁর চাকরির মেয়াদ শেষ করেন ২০১৫ সালের জুন মাসে। চাকরি ছাড়ার আগে অফিসে মেমো লেখেন তিনি। সেখানে জানান, মিয়ানমারে গঠনতান্ত্রিকভাবে সরকারের বশংবদ হয়ে পড়েছে জাতিসংঘ। ফলে, আবারও শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া সহিংসতার আশঙ্কা আছে শতভাগ। তাতে ক্ষতি হবে মিয়ানমারের জনগণেরই।

জাতিসংঘের উপদেষ্টা লিয়াম মাহোনি তাঁর এই বক্তব্যকে সমর্থন করেন। ২০১৫ সালে, তাঁর এক গোপন প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারে যা চলছে, সেটা আশঙ্কাজনকভাবে শ্রীলঙ্কা গৃহযুদ্ধের শেষ দিককার ঘটনাবলির সমান্তরাল। সে সময়ও জাতিসংঘ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিল। মিয়ানমারেও তা-ই চলছে। শ্রীলঙ্কা ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা নেয়নি কেউই।’

ভ্যান্ডেনাবিলি তাঁর অফিস মেমোয় আরও লেখেন, ‘আমাকে মিয়ানমারে চলতে থাকা সহিংসতার বিষয়ে চুপ থাকার জন্য ক্রমাগত আদেশ দেওয়া হয়। যেটা চলছে, তা নিয়ে মিয়ানমার অফিস গঠনতান্ত্রিকভাবে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’

বারাক ওবামা এবং অং সান সু চি শেষবার ওভাল অফিসে বৈঠক করেন ২০১৬ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। সে বৈঠকেই ওবামা ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর থেকে সব অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ওবামার বৈদেশিক নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা বেন রোডস এই ঘটনাকে ‘তাঁদের সরকারের আমলের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, এর ফলে মিয়ানমার গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে গেল আরও একধাপ।

ঠিক একই সময়ে সৌদি নাগরিকদের পৃষ্ঠপোষকতায় হারাখান-আল-ইয়াক্বিন নামের একটি সংগঠন শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। অন্তত এমনটাই বলছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ।

দুই নোবেল বিজয়ীর সাক্ষাতের ঠিক ২৫ দিন পর, হারাখা-আল-ইয়াক্বিন তিনটি পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জবাবও ছিল ত্বরিত এবং নিখুঁত। আর ঠিক এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সর্বনাশের নীলনকশা।

তবে ফরেন পলিসি বলছে, মিয়ানমারের কর্মরত মানুষের দেখার চোখ ভিন্ন। হারাখা-আল-ইয়াক্বিন অনেক দিন থেকেই শক্তি সঞ্চয় করছে। ২০১৭ সালের, এপ্রিলে জাতিসংঘের এক মেমোতে এমনটাই বলা হয়েছে। মেমোতে এটাও বলা হয়েছে, যেকোনো মুহূর্তে সংঘাত শুরু হতে পারে, এটা বুঝতে পারার পরেও জাতিসংঘ ছিল নিশ্চুপ। এমনকি নাম বদলে হারাখান-আল-ইয়াক্বিন যখন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিতে (এআরএসএ) রূপ নেয়, তখনো জাতিসংঘ বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যদিও প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এরপরে কোনো ধরনের হামলা হলে পরিস্থিতির আরও ঘোলাটে হবে।

যদিও আরাকান চোর পালিয়ে জাতিসংঘের বুদ্ধি এখন বেড়েছেই। তবে সেটা বহু দেরিতে। মানবাধিকার, মানবতা যখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বুটের তলায় শেষনিশ্বাস ছাড়ছে, তখনো বার্মা সরকারের গণতান্ত্রিক নেত্রী সু চিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়নি। সাফাই গাইতে বলা হয়েছে দেশের জান্তা বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেই সু চির। সংসদে ভেটো ক্ষমতা নিজেদের হাতে রেখে সামরিক জান্তাও যে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেই রেখেছে, সে বিষয়েও উচ্চবাচ্য করেনি কেউ। রাজনৈতিক আদর্শিক বয়ান আর তার সাফল্য নিয়ে বিভোর সবাই। তাতে কিছু মানুষের জীবন গেলে যাকগে।

দীর্ঘ এক বছর পরে হলেও জাতিসংঘের টনক নড়েছে। গণহত্যার অভিযোগ তুলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর জড়িত অফিসারদের বিচার দাবি করছে তারা। তবে এই অভিযোগ থেকে সু চি অব্যাহতি পান কি না, সেটা ভেবে দেখার ও সময় এসেছে।

কূটনীতি ও রাজনীতি মানুষের জন্যই হয়তো করা হয়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে কূটনীতি এবং রাজনৈতিক মতাদর্শিক সাফল্যই যখন মুখ্য হয়ে যায়, খেসারত দিতে হয় রাজনীতি, কূটনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন মানুষদেরই। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সে রকম মানুষের লম্বা তালিকার আধুনিক সংযোজন মাত্র।