ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয়-ঝুঁকিতে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জ
গোপন নথি প্রকাশ করে বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলা উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ছয় বছর ধরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থিত ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তাঁর এই আশ্রয় এখন ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ, সম্ভাব্য পলাতক অপরাধীদের যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও একাধিক সূত্র থেকে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যমটি।
এর আগে দাবি করা হয়েছিল, দূতাবাসে অ্যাসাঞ্জের অবস্থান হুমকির মধ্যে রয়েছে। সূত্রমতে, অ্যাসাঞ্জ এখন ‘ঝুঁকি’তে আছেন। তাঁর এখনকার অবস্থা ‘অস্বাভাবিক খারাপ’। তিনি ‘যেকোনো সময়’ দূতাবাস ছাড়তে পারেন। হয় তাঁকে দূতাবাস ছাড়তে বাধ্য করা হবে অথবা এতটা বিধিনিষেধের বেড়াজালে থেকে তিনি নিজেই দূতাবাস ছাড়তে চাইবেন।
দূতাবাস থেকে অ্যাসাঞ্জ বেরিয়ে এলে তাতে সুবিধা হবে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত কর্মকর্তাদের। অ্যাসাঞ্জ কী কী জানেন, তা জানার সুযোগ তৈরি হবে তাঁদের।
এর আগে গত বছরের এপ্রিলে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করতে অভিযোগ গঠনের প্রস্তুতি নিয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা। এই সংস্থাই ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারের সময় ডেমোক্র্যাটের পক্ষে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সরকারি ই-মেইল হ্যাক করা এবং তা ছড়িয়ে দিয়ে রাশিয়া প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি করেছে।
অ্যাসাঞ্জ ও তাঁর আইনজীবীরা বলেছেন, তাঁকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই ২ হাজার ৭২০ দিন আটক রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৩ দিন তাঁকে বাইরের যোগাযোগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। কারও সঙ্গে তাঁকে দেখা করতেও দেওয়া হয়নি। তাঁর আইনজীবীর মতে, প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমগুলো প্রতিদিন যা করে, তেমন কিছু প্রকাশ করা ছাড়া অ্যাসাঞ্জ কিছু করেছেন—এমন সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
অ্যাসাঞ্জের আইনজীবী মেলিন্দা টেইলর সিএনএনকে বলেছেন, প্রথম দিন থেকে এখন পর্যন্ত উদ্বেগের জায়গাটি একই রয়ে গেছে। তা হচ্ছে দূতাবাস থেকে অ্যাসাঞ্জ বের হয়ে এলে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে হস্তান্তর করা হবে।
সূত্রমতে, অ্যাসাঞ্জকে বের করে দেওয়ার জন্য ইকুয়েডরের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লেন এন মরেনো ক্রমাগত মার্কিন চাপে রয়েছেন। অ্যাসাঞ্জের ওপর খ্যাপা স্পেনও চায় অ্যাসাঞ্জকে বের করে দিক ইকুয়েডর। আর স্পেনের বিরাগভাজন হওয়ার কারণ হচ্ছে দেশটির উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের স্বাধীনতাকামী কাতালোনিয়া আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতদের পক্ষে সমর্থন দিয়ে টুইট করেছিলেন অ্যাসাঞ্জ।
সম্প্রতি ইকুয়েডর সরকার অ্যাসাঞ্জকে দেওয়া সুবিধা কমিয়ে দেওয়া শুরু করেছে। গেল মার্চ তাঁর ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে উইকিলিকস চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে তাঁর জন্য। তাঁর সঙ্গে দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎ নিয়ন্ত্রিত করে ফেলা হয়েছে। তিনি শুধু আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। আর তাঁর আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, দূতাবাসে অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁদের মোবাইল ফোন ‘জ্যাম’ করে ফেলা হয়।
অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্নের ব্যাপারে সিএনএনের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ইকুয়েডরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত মার্চে এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে বিরূপ আচরণের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এবং অ্যাসাঞ্জকে সরকারের সঙ্গে করা অঙ্গীকার মেনে চলার পরামর্শ দেয়। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিশেষ করে স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে প্রকাশ্যে আলোচনা না করারও পরামর্শ দেয়।
তবে গত সপ্তাহে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক বছরে অ্যাসাঞ্জের পেছনে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করেছে ইকুয়েডর দূতাবাস। ক্যামেরা থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সফটওয়্যার—অত্যন্ত দামি সার্ভিল্যান্স টুল ব্যবহার করা হয় অ্যাসাঞ্জের সুরক্ষার জন্য। অ্যাসাঞ্জ দূতাবাসের যোগাযোগ সিস্টেমও হ্যাক করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাস কয়েকবার অ্যাসাঞ্জের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সর্বশেষ গত মার্চে তাঁর ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দূতাবাস ছেড়ে আসামাত্র অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে তারা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবে।
তবে অ্যাসাঞ্জ দূতাবাস থেকে বের হলে যুক্তরাষ্ট্রের দিক দিয়ে তাঁর ভাগ্যে কী ঘটবে, তা বলা মুশকিল। অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীর দাবি, প্রায় আট বছর ধরে মার্কিন কর্মকর্তারা গোপন গ্র্যান্ড জুরি তদন্ত পরিচালনা করছেন অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে।