সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নাচ এগোচ্ছে
বছরের প্রথম আট মাস বেশ কর্মচঞ্চল কাটিয়েছে নৃত্যাঙ্গন। শুরু থেকেই ছিল নানা রকম আয়োজন। ছোট-বড় সেসব উদ্যোগ বেশ আশার সঞ্চার করেছে এ অঙ্গনে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে যেমন ছিল নাচ, তেমনি ছিল আলাদা নাচের প্রযোজনা বা নৃত্যনাট্য। আসছে প্রান্তিকে সেসব আরও বাড়বে, সে রকমই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এ বছর দুটি নতুন নৃত্যনাট্য মঞ্চে এনেছে ধৃতি নর্তনালয়। এর মধ্যে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে মায়ার খেলা নৃত্যনাট্যটি। সরাসরি সংগীতের সঙ্গে এ নৃত্যনাট্যে মণিপুরি নৃত্যের আঙ্গিকগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া দলটির নতুন নৃত্যনাট্য সম্পূর্ণার উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়েছে ভারতের মঞ্চে। দেশটির এলাহাবাদ, দিল্লি, কলকাতা, বেনারস ও লক্ষ্মৌতে প্রদর্শনীর পর এটি দেখানো হয় বিটিভিতে। ঢাকায় জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের সভাপতি বান কি মুনের সম্মানে বৈশ্বিক উষ্ণতা বিষয়ের ওপর একটি নৃত্য পরিবেশন করে এই দল। এ ছাড়া নতুন উদ্যোগের কথাও জানালেন দলের প্রধান ওয়ার্দা রিহাব। ঢাকার শিল্পীদের জন্য শিগগির একটি ড্যান্স স্টুডিও চালু করছেন তাঁরা। অনুশীলন ও মহড়ার পাশাপাশি নাচের বই নিয়ে একটি লাইব্রেরিও থাকবে সেখানে।
পূজা, পৌষ ও বসন্ত উৎসবের বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ সারা বছরই পরিবেশনা থাকে নাচের স্কুল কল্পতরুর শিল্পীদের। শাস্ত্রীয় অন্য নাচগুলোর পাশাপাশি সম্প্রতি ওডিশি নাচের একটি শাখা চালু করেছে তারা। ভারতীয় নৃত্যগুরু শর্মিলা দাসের তত্ত্বাবধানে একেবারে নতুন ও ভিন্ন সিলেবাসে সেখানে শেখানো হবে ওডিশি নৃত্য। স্কুলটির শিক্ষক নৃত্যশিল্পী সুইটি দাস চৌধুরী জানান, তাঁদের স্কুল থেকে ভরতনাট্যমের একটি দল অংশ নিতে যাচ্ছে স্টারস অব টুমোরো নামে ভারতীয় একটি প্রতিযোগিতায়।
এ বছর ২৫ বছর পূর্তি উৎসব করতে যাচ্ছে সৃষ্টি কালচারাল সেন্টার। বাদি বান্দার রূপকথার মতো প্রযোজনা দিয়ে নৃত্যাঙ্গনে সুনাম কুড়িয়েছে দলটি। রজতজয়ন্তী উপলক্ষে বছরের শুরু থেকে কর্মশালা ও তিন বিভাগীয় শহরে উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। বছরের শুরু থেকে বিচ্ছিন্নভাবে মঞ্চ ও টেলিভিশন অনুষ্ঠানে অংশ নেয় তারা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে ব্রুনেই, বাংলা নববর্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাঙালিদের জন্য সেখানে গিয়ে নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নিয়েছে। দলের প্রধান আনিসুল ইসলাম জানান, দুর্গাপূজা উপলক্ষে নতুন একটি প্রযোজনা মঞ্চে আনতে যাচ্ছেন তাঁরা। চলছে সেটারই প্রস্তুতি।
এ দলগুলোর পাশাপাশি সক্রিয় রয়েছে নৃত্যাঞ্চল, ছায়ানটের নৃত্য শাখা, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, ভাবনা, সাধনা, তুরঙ্গমী ড্যান্স থিয়েটারসহ বিভিন্ন নাচের স্কুল, সংস্থা ও দল।
তবে আশার পাশাপাশি মৃদু আক্ষেপের স্বরও শোনা যায় এ অঙ্গনের অনেকের মুখে। অনেকেই মনে করেন, নাচের জন্য পৃষ্ঠপোষকতা কোনোভাবেই বাড়ছে না। তৈরি হচ্ছে না নাচের জন্য মঞ্চ। নৃত্যশিল্পী লুবনা মারিয়াম বলেন, ‘নাচ নিয়ে আমাদের অনেক কাজ হচ্ছে। নাচকে এখনো কেবলই বিনোদনের অনুষঙ্গ মনে করা হয়। নাটকে আমাদের অনেক নাট্যকার আছেন, কিন্তু নাচের ক্ষেত্রে আমাদের সে রকম মানুষ কম। নৃত্যশিল্পীদেরই সেসব করতে হয়। তরুণ নৃত্যশিল্পীরা যদি বেশি বেশি নাটক দেখে, বেশি করে বই পড়ে, তাহলে তারা এ ঘাটতিটা পূরণ করতে পারত।’