তারকা ছিনতাই

>
আফরান নিশো, মেহ্‌জাবীন চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ ও পূজা চেরি—শহর ছেড়ে হারিয়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে। ছবি: কবির হোসেন, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, কৃতজ্ঞতা: দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট, বাহুবল, হবিগঞ্জ
আফরান নিশো, মেহ্‌জাবীন চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ ও পূজা চেরি—শহর ছেড়ে হারিয়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে। ছবি: কবির হোসেন, সাজ: অরা বিউটি লাউঞ্জ, কৃতজ্ঞতা: দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট, বাহুবল, হবিগঞ্জ
আফরান নিশো, মেহ্জাবীন চৌধুরী, সিয়াম আহমেদ, পূজা চেরি—হঠাৎ এক দিনের জন্য শহর থেকে উধাও! মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৮-এর তারকা জরিপে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র বিভাগে জয়ী এই দুই জনপ্রিয় জুটি কোথায় উড়ে গিয়েছিলেন? কেন? হারিয়ে যাওয়ার সেই দিনে কী করলেন তাঁরা? কী বললেন? সেসব কথাই লিখেছেন আদর রহমান

সকাল সকাল বিমানবন্দরে চার তারকা—মেহ্জাবীন, আফরান নিশো, সিয়াম ও পূজা। একে একে ঢুকছেন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে। নিরাপত্তাতল্লাশি শেষ হলো, আর অমনি ভিড় ছুটে যেন এল তাঁদের দিকে। কেউ সিয়ামের সঙ্গে ছবি তুলতে উতলা, কেউ আবার ছুটে এসেছেন মেহ্জাবীনকে শুধু ভালো লাগার কথাটুকু বলতে। আবার যে নিরাপত্তাকর্মী একটু আগেই দায়িত্ব পালনের সময় চোখ-মুখ কুঁচকে আফরান নিশোর তল্লাশি নিলেন, তিনিই শিফট বদলের ফাঁকে একটা সেলফির জন্য হাসিমুখে প্রিয় অভিনেতার কাছে ছুটে এলেন। পূজার জন্যও ভক্তদের ভিড় কম হয়নি। এভাবেই নিশো, মেহ্জাবীন, সিয়াম ও পূজাকে নিয়ে আমাদের বিজয়ানন্দের যাত্রা শুরু হলো। রানওয়ের নির্দিষ্ট স্থানে থাকা হেলিকপ্টারে চড়ে আমরা রওনা দিলাম হবিগঞ্জের বাহুবলের উদ্দেশে। গন্তব্য দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট।

এই যাত্রাকে আমরা বলছি বিজয়ানন্দ উদ্​যাপন। গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৮’-এর তারকা জরিপে বিজয়ী সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতা, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, টিভি অভিনেতা ও টিভি অভিনেত্রীকে আমাদের এক দিনের জন্য হারিয়ে যাওয়া। এ বছর মিজানুর আরিয়ানের বুকের বাঁ পাশে নাটকের জন্য দর্শকের ভোটে সেরা অভিনেতা ও সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন আফরান নিশো ও মেহ্জাবীন চৌধুরী। আর পোড়ামন ২ ছবির জন্য সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতা ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর পুরস্কার ঘরে তুলেছেন চলচ্চিত্রে নতুন আসা সিয়াম আহমেদ ও পূজা চেরি। তাঁদের কাছ থেকে পুরস্কারজয়ের পরের অনুভূতি জানার জন্য আমরা নানাভাবে যোগাযোগ করা শুরু করি। কিন্তু ঈদের কাজের চাপে কারোনই নিশ্বাস নেওয়ার সময় নেই। তাই হঠাৎ একদিন রীতিমতো তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হলো প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে। সেখানে গিয়ে জমে আমাদের বিজয়ানন্দের আড্ডা।

একে একে এক হওয়া
শুরু করি মেহ্জাবীনকে দিয়ে। ঈদের কাজের জন্য গত ১৭ এপ্রিল নিজের জন্মদিনও ঠিকঠাক পালন করতে পারেননি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টানা শুটিং। অনেক হিসাবনিকাশ করে আমাদের বিজয়ান্দের আড্ডার জন্য সময় বের করলেন তিনি। বিমানবন্দরে সবার আগেই এসে পৌঁছালেন। দেখা হওয়ার পরই জানালেন ক্লান্তিকর শিডিউলের কথা। বললেন, ‘কাল রাত তিনটায় শুটিং শেষ করে বাসায় ফিরেছি। আজ আবার সকাল আটটার আগেই বেরিয়ে পড়লাম। হয়তো ফিরে এসে রাতের শিফটে আবার শুটিংয়ে যেতে হবে।’

মেহ্​জাবীনের ফিরিস্তি শেষ হতে না-হতেই আমাদের সঙ্গে যোগ দেন আফরান নিশো। তাঁর রোজনামচাটাও মিলে যায় মেহ্জাবীনের সঙ্গে। নিশো ভোর চারটায় শুটিং শেষ করে বাড়ি ফিরেছেন। চোখ দুটোকে বিশ্রাম না দিয়েই গোছগাছ করে আবার আমাদের ডাকে ছুটে এসেছেন সাতসকালে। আমরা ততক্ষণে আঁচ করতে পেরেছি কেন এই দুই শিল্পী চোখের রোদচশমা নামাচ্ছেন না। কারণ, পর্দায় তাঁদের প্রাণবন্ত অভিনয় তো দর্শক দেখেন, কিন্তু এর পেছনে যে ক্লান্তিকর জীবনযাপন শিল্পীদের, সেটা এভাবেই রোদচশমা দিয়ে ঢেকে রাখেন তাঁরা।

এক দিনের জন্য গিয়েছিলেন হবিগঞ্জের দ্য প্যালেম লাক্সারি রিসোর্টে—সিয়াম আহমেদ, পূজা চেরি, মেহ্‌জাবীন চৌধুরী ও আফরান নিশো। ছবি: আনন্দ
এক দিনের জন্য গিয়েছিলেন হবিগঞ্জের দ্য প্যালেম লাক্সারি রিসোর্টে—সিয়াম আহমেদ, পূজা চেরি, মেহ্‌জাবীন চৌধুরী ও আফরান নিশো। ছবি: আনন্দ

টিভি নাটকের দুই সেরার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে বসেই জমে যায় আড্ডা। কিছুক্ষণ পরই দলের তৃতীয় সদস্য পূজা চেরি এসে হাজির হন। এসেই তাঁর ‘নায়ক’, অর্থাৎ সিয়াম আহমেদের খোঁজ নিতে শুরু করেন। পূজা ও সিয়াম দুজনই পোড়ামন ২ ছবির জন্য দর্শক জরিপে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৮ পেয়েছেন। কিন্তু পূজা এলেও সিয়ামের দেখা নেই। ওদিকে হেলিকপ্টারের ক্যাপ্টেনের তাড়া দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। সাড়ে ৯টার ফ্লাইট, একটু একটু করে পেছাতে শুরু করেছে। তবে বেশিক্ষণ নয়। মাত্র ১৫ মিনিট বিলম্বে দলের শেষ সদস্য হিসেবে সিয়াম যোগ দেন পুরস্কারপ্রাপ্তদের দলে। এসেই জানান, আগের দিন নতুন ছবি শান-এর মহড়া করতে গিয়ে হাতে আঘাত পেয়েছেন। ব্যথা সামলাতে তাই একটু দেরি করে বের হয়েছেন।

যাত্রাপথে
বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে গাড়িতে করে যেতে হয় হেলিকপ্টারের কাছে। এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে শিল্পীদের ফেসবুক পোস্ট আর ইনস্টাগ্রাম স্টোরির জন্য ছবি আর ভিডিও কুড়ানো। কেউ নিজের সেলফি তুলছেন, কেউ আবার রানওয়ে, অপেক্ষায় থাকা হেলিকপ্টার, উড়োজাহাজ, ঘাস, আকাশ, ফুল এসবের ছবি তোলা আর ভিডিও করায় ব্যস্ত। হেলিকপ্টারে ওঠার আগে মেহ্জাবীনের অনুরোধ, তিনি বসবেন জানালার পাশে। নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ব্লগ বানাবেন তিনি। দলের সবাই ‘তথাস্তু’ বলে একদম ক্যাপ্টেনের পাশের আসনই দিলেন তাঁকে। পুরো ৩০ মিনিটের যাত্রায় চার তারকা বিরামহীনভাবে একে অপরের ছবি তুলে আর ভিডিওতে একে অপরকে নিয়ে নানা হাসি-তামাশার মধ্য দিয়ে উড়ে গেছেন শহর থেকে অরণ্যের দিকে।

নেমেই দিলাম ছুট
আমরা নামলাম দ্য প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টের হেলিপ্যাডে। সেখানে নামতেই বাগি (রিসোর্টের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যাটারিচালিত গাড়ি) তৈরি। তারকারা সবাই উঠলেন রিসোর্টের ‘রবিশঙ্কর’ ভিলায়। আমাদের হাতে সময় খুব কম কিন্তু কাজ আর জমানো কথা অনেক বেশি। তাই ভিলায় উঠেই ছবি তোলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু। ফাঁকে ফাঁকে ধুন্ধুমার আড্ডা। কথায় কথায় উঠে আসে পুরোনো প্রেম, স্কুল পালানো আর লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমপত্র চালাচালির কথা। কিন্তু ওসবকে ‘অব দ্য রেকর্ড’ (প্রকাশ করায় নিষেধাজ্ঞা) বলে আমাদের থামিয়ে দেন তারকারা। ‘অন রেকর্ড’-এ সিয়াম, নিশো, পূজা আর মেহ্জাবীন বলেন তাঁদের জীবনের এ সময়ের নতুন নতুন বদল আর নতুন নতুন দায়িত্ব আর কর্তব্যের কথা।

গত এক বছরে সিয়ামের ব্যক্তি ও কর্মজীবনে অনেক বদল এসেছে। সেই বদলের খাতায় সবশেষ যুক্ত হয়েছে চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার। এই পুরস্কার সিয়ামের জীবনকে বদলে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়িয়ে দিয়েছে দায়িত্বটাও। উদাহরণ টেনে বললেন, ‘দর্শকের প্রত্যাশা ধরে রাখার জন্য এখন তো পরিশ্রম করতে হবে আরও বেশি বেশি। এই যে নতুন ছবির কাজ শুরু করেছি। ছবির নাম শান। এর জন্য এখন রাতদিন মহড়া করছি। চরিত্রের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে চোট লাগছে। কিন্তু দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ছি। এসবই হচ্ছে গত এক বছরের অর্জন আর জীবনে আসা বদলগুলোর কারণে।’

 হাসি-ঠাট্টা আর ফিরে আসা

আমাদের এই চার তারকার মধ্যে বয়সের হিসাবে নিশোকে বলতে হয় ‘বড়’। কিন্তু আদতে নিশোর ব্যক্তিত্বে সেই বড়ত্ব নেই। চঞ্চলতার দিক থেকে সর্বকনিষ্ঠ পূজার সঙ্গে পাল্লা দিলে নিশো জিতবেন অনায়াসে। তাই প্রখর রোদে ফটোশুটের মধ্যেও সবার মুখে হাসি জিইয়ে রাখার দায়িত্বটা নিশো নিয়েছিলেন নিজ কাঁধেই। দলের সর্বকনিষ্ঠ পূজার সঙ্গে খুনসুটি, মেহ্জাবীনের সঙ্গে শুটিংয়ের মজার কাণ্ড আর সিয়ামের সঙ্গে ছেলেবেলার স্কুল পালানোর গল্প দিয়ে আসর মাতিয়ে রাখলেন এই অভিনেতা। একদম সন্ধ্যা পর্যন্ত একই গতিতে উদ্দাম আমাদের চাঙা করে রাখল। কে বলবে এই নিশোই আগের দিন ভোর চারটা পর্যন্ত শুটিং করেছেন আর হবিগঞ্জ থেকে ফিরে গিয়ে সন্ধ্যার শিফটে আবারও দাঁড়াবেন ক্যামেরার সামনে। একই গল্প বাকি তিন তারকার। তাঁদেরও ছুটি নেই। ঈদের ছুটি কাটানোর আগে ভীষণ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে যেতে হবে তাঁদের। তবে এর মাঝের এই এক দিনের বিজয় উদ্​যাপনের জন্য হারিয়ে যাওয়া ব্যস্ততায় একটু বিরতি দিল।