হাসছেন, কাঁদছেন এ টি এম শামসুজ্জামান
বরেণ্য অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানের আরেকটি দিন শুরু হলো আজ। আরেকটি দিনের আলো তাঁকে ছুঁয়ে গেল। তিনি বেঁচে আছেন, পৃথিবীর বাতাসে নিশ্বাস ফেলছেন। ডাক দিলে জবাব দিচ্ছেন। হাসছেন, কাঁদছেন। চিকিৎসকেরা তাঁকে নিয়ে এখনো আশাবাদী। তবে এটাও বলেছেন, ‘বিপদ এখনো কেটে যায়নি। যেকোনো সময়, যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।’
গতকাল শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বর্ষীয়ান এই অভিনেতার মৃত্যুর যে সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল, তা ডাহা মিথ্যা। এমন খবরে পরিবারের সদস্যরা বিরক্ত, হতাশ। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো তাঁর মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা খবর প্রচারিত হলো।
দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর পুরান ঢাকায় গেন্ডারিয়ার আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এ টি এম শামসুজ্জামান। আজ রোববার সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় হাসপাতালের চিকিৎসক মতিউল ইসলাম এবং এ টি এম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনি জামান সঙ্গে।
আসগর আলী হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ৩ নম্বর বিছানায় শুয়ে আছেন এ টি এম শামসুজ্জামান। এ বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ মো. মতিউল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, চিকিৎসা শুরুর কয়েক দিন পর তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। এরপর আবার স্বাভাবিক নিয়মে শ্বাস নিতে পারলে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে চার দিন আগে তাঁকে আবার লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই তুলনামূলকভাবে ভালো আছেন এ টি এম শামসুজ্জামান। তাঁর লাইফ সাপোর্ট যন্ত্র খুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি যথেষ্ট সাড়া দিচ্ছেন। সালাম দিলে হাসি দিয়ে জবাব দিচ্ছেন। তবে এখনো আমরা তাঁকে বিপদমুক্ত বলতে পারছি না। কেননা, তিনি মূলত বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এই অবস্থায় সমস্যা একটি অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। কেবিনে দেওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা কোনোভাবে বিপদমুক্ত বলতে পারছি না।
এ টি এম শামসুজ্জামানের স্ত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতে সুস্থই ছিলেন। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ ২৬ এপ্রিল রাতে বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেদিন খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। রাত ১১টার দিকে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’
এ টি এম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনি জামান আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘আগের তুলনায় সুস্থ হলেও কাল রাত থেকে মানুষের যন্ত্রণায় আমরা ঘুমাতে পারিনি। কে বা কারা আবারও ওনাকে মেরে ফেলছেন। সারা রাত মানুষ খবর নিয়েছে। এমন খবর কে ছড়ায়, তাকে দেখার খুব ইচ্ছা। তার কী ক্ষতি আমরা করেছি।’ বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন রুনি জামান।
গুজব ছড়ানোর পর পরিস্থিতি কী হয়েছে, তা বোঝা যায় হাসপাতালের আইসিইউয়ের সামনে দায়িত্বরত এক নিরাপত্তাকর্মীর বক্তব্যে। তাঁর ভাষায়, কাল রাত ১০টার পর থেকে এখানে মানুষ আর মিডিয়া এসে ভরে গেছে। অবস্থা এমন হয়েছে, অনেকে এসে জিজ্ঞেস করছেন, লাশ কোন দিক দিয়ে বের করবে!
যেহেতু এখন তাঁর স্বাভাবিক বোধ ফিরে এসেছে, তাই চিকিৎসকেরা পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ দিয়েছেন কাছে কম যেতে। কেননা, পরিজনদের দেখলেই তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ছেন। চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ে। এ পরিস্থিতিতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া যেকোনো সময় রোগী সংক্রমণ জটিলতায় পড়তে পারেন। এ টি এম শামসুজ্জামানের ফুসফুস এখনো খুবই দুর্বল। তাই চিকিৎসকেরা কোনো ঝুঁকি নিতে চান না।
স্ত্রী বললেন, ‘আমরা মনে করছি, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নিতে পারলে ভালো হতো। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি।’
গত বছর জুন মাসে একটি বেসরকারি টেলিভিশনসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর খবর প্রচারিত হয়। তখন তিনি নিজে ভিডিও বার্তায় এর প্রতিবাদ জানান। ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘আমি এখনো মরিনি। এর আগেও আমাকে আট-নয়বার যারা মেরেছে, তারা ইতর প্রকৃতির!’
আজকে অবশ্য ভিডিও বার্তায় ক্ষোভ প্রকাশের মতো অবস্থায় নেই। তবে পরিবারের সদস্যরা হতাশ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করলেন।
এ টি এম শামসুজ্জামান বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপ লেখক ও গল্পকার। অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শিল্পকলায় অবদানের জন্য পেয়েছেন একুশে পদক।