কঙ্গনার ছবি বন্ধ করতে মানসিক চিকিৎসকদের চিঠি!
কঙ্গনা রনৌত যে কারণেই হোক, আলোচনায় থাকবেনই। যখন যে সিনেমা করছেন, তা নিয়েই ছড়িয়েছে হাজার রকমের বিতর্ক। আবার যখন সিনেমা নিয়ে বিতর্কিত হচ্ছেন না, তখন আরও বেশি করে বিতর্ক ঘিরে থাকে তাঁকে। এমন অবস্থা হয়েছে, কঙ্গনার আরেক নামই যেন ‘বিতর্ক’! বিতর্ক কঙ্গনার পিছু ছাড়ে না, নাকি কঙ্গনাই বিতর্কের পিছু ছাড়েন না, এটা নিয়েও বলিউডে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে বলেন, এসবই আলোচনায় থেকে ছবি হিট করার ধান্দা! তবে আলিয়া ভাটের সঙ্গে কঙ্গনার যে অঘোষিত যুদ্ধ চলছে, সেটিও? এখন ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’ নিয়ে যা শুরু হয়েছে, তা-ও?
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে কঙ্গনা রনৌত আর রাজকুমার রাও অভিনীত ছবি ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’র প্রথম পোস্টার। আর তা নিয়ে চারদিক থেকে শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়।
গতকাল শনিবার এই ছবির প্রথম পোস্টার প্রকাশ করেন নির্মাতারা। ক্যাপশনে লিখেছেন, বিরামহীন পাগলামোর জন্য একটু অপেক্ষা করুন। ২০১৯ সালের ২১ জুন মুক্তি পাচ্ছে ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’।
নির্মাতাদের মতে, ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’ সিনেমাটি একটি ডার্ক কমেডি। ছবির গল্প দুই মুখ্য চরিত্রের জীবনকে ঘিরে। দুটি চরিত্রের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে।
বার্তা সংস্থা আইএএনএসকে কঙ্গনা রনৌত বলেছেন, ‘আমরা সত্যিই সাফল্য বা ব্যর্থতা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানি না। কারণ, সেটা আমাদের হাতে নেই। তবে সিনেমার গল্পটা সত্যিই ভালো। আশা করি, দর্শকের সিনেমাটি ভালো লাগবে।’
ছবির পোস্টারে দেখা গেছে কঙ্গনা রনৌত আর রাজকুমার রাওয়ের জিবের ডগায় ব্লেড। পোস্টারটি অনেকেরই ভালো লাগেনি, ‘কুরুচিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন সবাই।
এদিকে একতা কাপুরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বালাজি মোশন পিকচার্সের এই ছবির প্রথম পোস্টার দেখে রীতিমতো খেপেছে ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটি (আইপিএস)। সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের (সিবিএফসি) চেয়ারম্যান প্রসূন যোশিকে ছবিটির ছাড়পত্র না দেওয়ার জন্য আইপিএস একটি চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা চলচ্চিত্রের শিরোনাম নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছি, এটি মানসিক সমস্যা এবং যাঁরা মানসিকভাবে অসুস্থ, তাঁদের প্রতি অবমাননাকর, অরুচিশীল এবং অমানবিক। আমরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা যাঁরা নিচ্ছেন, তাঁদের ব্যঙ্গ ও অবমাননা করা হয়েছে ছবির নামে। তাই ওই চলচ্চিত্রের নাম অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।’ চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘মানসিক সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাঁদের অধিকার লঙ্ঘনকারী যেকোনো ঘটনাকে ছবি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য আমরা দাবি করছি।’
আইপিএস জানিয়েছে, একতা কাপুরের বালাজি মোশন পিকচার্সের ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’ চলচ্চিত্রটি ‘মানসিক স্বাস্থ্যসেবা আইন ২০১৭’ লঙ্ঘন করেছে। তাই ছবিটির ছাড়পত্র দিতে হলে অবশ্যই ‘আপত্তিকর’ দৃশ্যগুলো আগে বাদ দিতে হবে।
আইপিএস যখন ছবির নানা কিছু নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছে, তখন এই ছবির নির্মাতা ও কলাকুশলীরা বলেছেন, এখানে মানসিক রোগীদের ‘অসুস্থ’ না বরং তাঁরা ‘ভিন্ন’; এই বার্তা দেওয়া হচ্ছে। ছবিটি মানসিকভাবে যারা অসুস্থ, তাদের ‘অন্য রকম’ বলে সমাজ যেন তাঁদের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা হয়, সেটি এই ছবির মূল কথা।
কঙ্গনা রনৌত ও রাজকুমার রাওকে বলিউডের অন্যতম দায়িত্বশীল ও প্রতিভাবান অভিনয়শিল্পী হিসেবে মনে করা হয়। বলিউডের অন্যতম ব্যবসাসফল ‘কুইন’ (২০১৪) ছবিতে অভিনয় করেছেন তাঁরা। ‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’ ছবিটিকে তাঁরা বিষয়ভিত্তিক আর তা তাঁদের ক্যারিয়ারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, ‘যে ছবি মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করে, তাঁরা মোটেই এ রকম কোনো প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না।’
ছবির নির্মাতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই ছবির একমাত্র উদ্দেশ্য দর্শককে বিনোদন দেওয়া। এই ছবির কোনো কিছু কারও প্রতি অসম্মান করছে না। এখানে বৈষম্যমূলক বা আপত্তিকর কিছু নেই। বরং বড় অর্থে ছবিটি বাণিজ্যিক ঘরানার।
‘মেন্টাল হ্যায় কেয়া’ ছবির পরিচালক প্রকাশ কোভালামুড়ি।