'আগামীর নির্মাতা' কর্মশালা
আজ শুক্রবার সকাল থেকে দিনব্যাপী ছিল তরুণ চলচ্চিত্রকারদের নিয়ে কর্মশালা ‘আগামীর নির্মাতা’। মেরিল-প্রথম আলোর উদ্যোগে ফেম ফ্যাক্টরির আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের বিপণন বিভাগের প্রধান জেসমিন জামান।
কর্মশালায় চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ‘গল্প’ বলা নিয়ে বক্তৃতা দেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রকারকে প্রতিনিয়ত নিজের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। আমি তারেক মাসুদের কাছে যেতাম, একের পর এক প্রশ্ন করতাম। তিনি আমাকে বলতেন, “তুমি আমার কাছ থেকে কনফিউশন নেবে, আমি তোমার কাছ থেকে কনফিডেন্স নেব”।’ তিনি আরও বলেন, ‘একই গল্প এক-একজন মানুষ এক-এক রকমভাবে বলেন। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির স্বভাব ও ব্যক্তিত্বের ওপর। আর গল্পকারকে জানতে হবে যে কোথায় থামতে হবে। কেবল সিনেমা বানালেই হবে না, পাশাপাশি নির্মাতাকে ব্যবস্থাপনাতেও দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে।’
তরুণ নির্মাতাদের নানা প্রশ্নেরও উত্তর দেন ‘ডুব’ পরিচালক ফারুকী। নিষেধাজ্ঞা, সেন্সর বা মামলার ফাঁক গলিয়ে কীভাবে নির্মাতা তাঁর ছবিটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করবেন? এমন প্রশ্নে ফারুকী বলেন, ‘আমার বেশির ভাগ ছবি সেন্সরে আটকে যায়। কিন্তু এসব এড়িয়েই নির্মাতাকে এগিয়ে যেতে হবে।’ সময়টিকে যেকোনো শিল্পচর্চার জন্যই অনুপযুক্ত আখ্যা দিয়ে ফারুকী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগের এই সময়ে এখন সবকিছুকেই নম্বর দিয়ে বিচার করা হয়। সবাই চেয়ে থাকেন কত ভিউ হলো, সেদিকে। যেকোনো নতুন ভাষার বিকাশের ক্ষেত্রে এই নম্বর ক্ষতিকর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের ‘লাইক’ যত বাড়তে থাকে, মানুষের ‘ইগো’ তত বাড়তে থাকে। এটা খুবই বিপজ্জনক।’ গল্প বলা নিয়ে আরও বক্তৃতা দেন নাট্য ও বিজ্ঞাপননির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন।
কর্মশালায় চিত্রনাট্য প্রস্তুতির ওপর বক্তৃতা দেন ‘মেহেরজান’ ছবির নির্মাতা রুবাইয়াত হোসেন। তিনি বলেন, চিত্রনাট্যে একটি চরিত্রের যতটুকুই দেখানো হোক না কেন, চরিত্রটির জন্ম থেকে বিস্তারিত সব তথ্য চলচ্চিত্রকারকে মাথায় রাখতে হবে। সিনেমা নির্মাণের অংশ পিচিং নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রুবাইয়াত বলেন, ‘একজন চলচ্চিত্রকারকে বারবার পিচ করতে হয়। প্রযোজক, সহকারী পরিচালক, ক্যামেরাম্যান, অভিনয়শিল্পীসহ সবাইকে যে জিনিসটি বোঝাতে হবে, তার পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে চলচ্চিত্রকারকে। এর ভেতরে থাকতে হবে কখন, কোথায়, কে, কী—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর। আর পিচিংয়ের আগে বাড়িতে সেটার চর্চা করলে উপকার হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের সিনেমাকে তুলে ধরার সুযোগ অনেকটাই নির্ভর করে পিচিংয়ের দক্ষতার ওপর।’
কর্মশালার দ্বিতীয় অধিবেশনে চিত্রনাট্য প্রস্তুতি নিয়ে বক্তৃতা দেন ‘মনপুরা’ ছবির নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। চিত্রনাট্য সম্পাদনার ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রকারকে নির্মম হতে হয় বলে মনে করেন এই নির্মাতা। তিনি বলেন, ‘প্রথম চিত্রনাট্য জমা দেওয়ার সময় আমি বলে দিয়েছি, একটা বাক্যও কাটা যাবে না। এখন যদি সেটা নিয়ে কাজ করতে হতো, আশি শতাংশ ফেলে দিতাম।’ চিত্রনাট্যে আইডিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন সেলিম। সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সংলাপ একটি বিশেষ জিনিস। ছবিতে একগাদা সংলাপের বদলে খুব কম, প্রয়োজনীয়, অর্থপূর্ণ সংলাপ রাখাই ভালো।’
কর্মশালার শেষ অংশে প্রডাকশন নিয়ে বক্তৃতা দেন ‘জালালের গল্প’ ছবির নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন। তরুণ নির্মাতাদের অনুপ্রাণিত করতে তাঁদের কাছে চলচ্চিত্র আহ্বান করে প্রথম আলো। প্রায় আড়াই হাজার স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি থেকে বেছে নেওয়া ১০০ নির্মাতাকে এ কর্মশালায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। আগামীকাল শনিবার সেখান থেকে বাছাইকৃত ৫০ জন নির্মাতা পিচিংয়ে অংশ নেবেন। তাঁদের ভেতর থেকে নির্বাচিত ১০ জন মেরিল-প্রথম আলোর সহযোগিতায় নির্মাণ করবেন স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা। এই ১০ জনের মধ্যে থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পাওয়া নির্মাতারা পাবেন তাঁদের স্বপ্নের চলচ্চিত্র নির্মাণ ও কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ‘মার্শ দ্যু ফিল্ম’-এ অংশ নেওয়ার সুযোগ।